বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

তবু হোম ভেন্যুর গুরুত্ব নেই

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তবু হোম ভেন্যুর গুরুত্ব নেই

পেশাদার লিগের ১০ বছর

সমস্যা দেখা দেওয়ায় পেশাদার ফুটবল লিগ মাঠে গড়াবে কিনা এ নিয়ে সংশয় ছিল। জটিলতা আপাতত কেটে যাওয়ায় লিগ শুরু হয়েছে। শিরোপা প্রত্যাশিত ক্লাবগুলো জয় দিয়ে লিগ শুরু করেছে। ফুটবলের দুর্দিনের মধ্যেও ক্লাবগুলো অঢেল অর্থ খরচ করে দল মাঠে নামাচ্ছে। পেশাদার লিগে এখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান। কিন্তু লিগ থেকে দল তো আর প্রত্যাহার করে নেয়নি। অর্থ খরচ করে ঠিকই দল গড়েছে। লিগ যখন শুরু হয়েছে তখন শেষও হবে। শিরোপা জয়ের উল্লাসও করবে কোনো কোনো ক্লাব। কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের যে চেহারা তাতে কি লিগে কোনো প্রাণ আছে?

গ্যালারিশূন্য দর্শক। অবশ্য এই দৃশ্য নতুন নয়। কয়েক বছর ধরে দর্শক খরা চলছে। বেকেন বাওয়ার ও ম্যারাডোনার মতো কিংবদন্তি ফুটবলারও বলেছেন, দর্শকরা খেলার প্রাণ। গ্যালারিতে তাদের উম্মাদনায় খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়িয়ে দেয়। আসলাম, কায়সার, মোনেম মুন্না, সাব্বিরদের তারকা খ্যাতির পেছনে দর্শকদের ভূমিকা কম নয়। ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের প্রথম সুপারস্টার কাজী সালাউদ্দিন। তার মতো জনপ্রিয় ফুটবলার আর সৃষ্টি হয়নি। বলে লাথি মেরেই কি তারা এত উঁচুতে উঠেছেন? দর্শকদের উত্সাহ ও চিত্কার যদি না থাকত তাহলে কি জ্বলে উঠতে পারতেন?

সালাউদ্দিনও জানেন দর্শকরা ফুটবলের প্রাণ। অথচ তিনি দেশের ফুটবলের অভিভাবক হওয়ার পরই গ্যালারি থাকছে ফাঁকা। বিনা টিকিটেও দর্শকরা এখন ঘরোয়া ফুটবল দেখতে চান না। অথচ সালাউদ্দিন, বাদল রায়, সালামরা যখন খেলতেন তখন গ্যালারি থাকত ভরপুর। গত শুক্রবার থেকে ফুটবলে পেশাদার লিগ মাঠে গড়িয়েছে। দেখতে দেখতে ১০ বছরে পা দিল এই লিগ। অথচ পেশাদারিত্ব বলতে যা বোঝায় তার দেখা এখনো মেলেনি। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার দর্শকের দেখা মিলছে না। জয় পেতে ফুটবলাররা জানপ্রাণ দিয়ে লড়ছেন। পুরো পয়েন্ট পেয়ে নিজেদের অবস্থানও মজবুত করছে। কিন্তু দর্শকহীন অবস্থায় খেলোয়াড়রা সেই উত্তেজনাটা কি অনুভব করছে?

মান অবনতির পেছনে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সটা মূল ফ্যাক্টর। কিন্তু দর্শক যে বড় কারণ হতে পারে বিষয়টি বাফুফে ভেবে দেখেছে কী? ভারতীয় ফুটবলেও আগের মতো দর্শক হয় না। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এত খারাপ অবস্থা নয়। আই লিগে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ১০-১৫ হাজার দর্শকের দেখা মিলছে ঠিকই। দর্শক টানার জন্য ভারতীয় ফুটবলে ভেন্যু বাড়ছে। এতেই সাড়া মিলছে। ঢাকাতে যখন দর্শক হচ্ছে না তখন বিকল্প ভেন্যুর চিন্তা তো করা যেতে পারে। ৬৪টি জেলা আছে, বাফুফে নতুন ভেন্যু বেছে নিক। গতবার ময়মনসিংহে উপচেপড়া দর্শকের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এই দৃশ্য দেখার পরও বাফুফে এবার শুধু ভেন্যু হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামকে বেছে নিল কেন? তাও আবার অধিকাংশ ম্যাচ হবে ঢাকাতেই। পেশাদার লিগ মানেইতো প্রতিটি ক্লাবের হোম ভেন্যু থাকবে। বাংলাদেশেও আছে। কিন্তু বেছে নেওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকেই। কেন এমন হবে? লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী একটাই কথা বলেন, বাফুফে তো চায় ভেন্যু বাড়াতে। কিন্তু ক্লাবগুলো আপত্তি জানালে কি করার আছে। এখানেই তো বাফুফে দুর্বলতার পরিচয় দিচ্ছে। পেশাদার লিগের নিয়ম তারা অনুসরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। ক্লাবগুলো আপত্তি করলে তারা শুনবে কেন?

এক্ষেত্রে ক্লাবগুলোর দোহাই দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে বাফুফে কী পদক্ষেপ নিয়েছে। কখনো কি ফেডারেশন ক্লাবগুলোকে লিখিতভাবে জানিয়েছে ঢাকার বাইরে আলাদা ভেন্যু থাকতে হবে। তাদের তো উচিত ছিল সুযোগ-সুবিধা যাচাই-বাছাই করে কয়েকটি জেলার নাম চূড়ান্ত করা। এরপর ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলাপে যাক হোম ভেন্যু হিসেবে কার কোনটা পছন্দ। এখানেই যদি জটিলতা তৈরি হয় তাহলে লটারি করা যেতে পারে। ভারতে তো এই পথই অনুসরণ করা হচ্ছে।

দল চ্যাম্পিয়ন হবে ও উত্সব করবে এভাবে তো ফুটবলে পরিবর্তন আসবে না। দর্শক টানতে হলে বাফুফের মেগা পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। সত্যি কথা বলতে কী কর্মকর্তাদের সেই মেধা নেই বলে ফাঁকা গ্যালারি হাহুতাশ করছে। ফুটবল উন্নয়নে যেমন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার। তেমনিভাবে দর্শকদের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে দর্শকরাই ফুটবলের প্রাণ। এ ছাড়া মানের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর