শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

নেইমারের ট্রান্সফার ফি নিয়ে জটিলতা

ক্রীড়া ডেস্ক

নেইমারের ট্রান্সফার ফি নিয়ে জটিলতা

গেল এক সপ্তাহ শুধু ইউরোপ নয়, গোটা ফুটবল বিশ্বই মশগুল ছিল নেইমারকে নিয়ে। বার্সেলোনার হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল খেলছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা, অথচ মিডিয়া তখন একের পর এক লিখে যাচ্ছে তার দল-বদলের কাহিনী। বার্সেলোনা ছেড়ে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইনে (পিএসজি) যাবেন নেইমার-এ নিয়ে তোলপাড় ফুটবল বিশ্ব। বার্সার সতীর্থরা বলছেন, তিনি থাকবেন ন্যু ক্যাম্পে, আবার ব্রাজিলিয়ান সতীর্থরা বলছেন, নেইমারের নতুন ঠিকানা সৌন্দর্য্যের নগরী প্যারিস। নেইমার কিছু বলছিলেন না বলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন সবাই। শেষ পর্যন্ত বাজারের গুঞ্জনকে সত্যি করে ২২২ মিলিয়ন বা ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো বা ২ হাজার ১০৬ কোটি বাংলাদেশি টাকায় নেইমার বার্সেলোনা ছেড়ে নাম লেখান পিএসজিতে। ‘বাই-আউট ক্লজ’ নিয়ম মেনেই বার্সা থেকে নেইমার নাম লেখান পিএসজিতে। কিন্তু নেইমারের দল-বদল বোধহয় আটকে যাচ্ছে। স্প্যানিশ লিগের নিয়ম ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে (এফএফপি) নীতি লঙ্ঘন করায় নেইমারের দল-বদল আটকে গেছে! কারণ স্প্যানিশ লিগের নিয়ম অনুযায়ী এত টাকায় দল-বদল করার কোনো নিয়ম নেই।

ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকাররা আইনজীবীরা বাই-আউট ক্লজের ২২২ মিলিয়ন ইউরো জমা দিতে গেলে সেটা ফিরিয়ে দেয় স্প্যানিশ লিগ কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিবিসি স্পোর্টসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে লা লিগা কর্তৃপক্ষ। স্প্যানিশ মিডিয়ার খবর, নেইমারকে কিনতে উয়েফার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের (এফএফপি) নিয়ম ভেঙেছে পিএসজি। বাই-আউট ক্লজ নিয়ে বার্সেলোনা আগেই জানিয়েছিল উয়েফার কাছে অভিযোগ করবে। বাই-আউট ক্লজের নিয়ম, কোনো ক্লাবের তার মোট আয়ের চেয়ে ৩ কোটি ইউরো বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারবে না। অথচ, পিএসজি সেটাই করেছে বলে অভিযোগ বার্সেলোনার। এছাড়াও বাই-আউট ক্লজের নিয়ম, একজন ফুটবলারকে অবশ্যই নিজেকে নিজে কিনতে হবে। তিনি নিজে অথচ জমা দিবেন ক্লাব কর্তৃৃপক্ষকে। লা লিগা কর্তৃপক্ষ আটকে দিলেও পিএসজির মালিক কাতারিয়ান ধনকুবের ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের দূত করেছেন নেইমারকে। সেখান থেকেই অর্থ পরিশোধ করবেন নেইমার।

বিশ্ব ফুটবলে হাজার কোটি টাকার ট্রান্সফার হয়নি কখনো। নেইমারই প্রথম হাজার কোটি টাকায় ট্রান্সফার করে ইতিহাস লিখলেন। এর আগে সর্বোচ্চ ১০৫ মিলিয়ন ইউরোতে জুভেন্টাস থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নাম লিখেন পল পগবা। এখন যেমন দল-বদলে ৫, ৭, ১০, ২২ মিলিয়ন ইউরোতে হচ্ছে। অথচ ১৮৯৩ সালে উইলি গ্রোবস মাত্র ১০০ পাউন্ডে ওয়েস্ট ব্রম উইচ অ্যালবিওন থেকে নাম লিখেছিলেন অ্যাস্টন ভিলায়। তার দল-বদল তখন ইউরোপিয়ান ফুটবলে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল। পেলেকে দলভুক্ত করতে বার্সেলোনা ষাটের দশকের শেষের দিকে ব্লাঙ্ক চেক ও তেলের খনির অংশিদারিত্ব দিতে চেয়েছিল। ১৯৮২ সালে ম্যারাডোনাকে বোকা জুনিয়র্স থেকে তিন মিলিয়ন ইউরোতে দলভুক্ত করে বিশ্বরেকর্ড করেছিল বার্সেলোনা। ১৯৮৪ সালে ন্যাপোলি ৫ মিলিয়ন ইউরোতে বার্সেলোনা থেকে ম্যারাডোনাকে কিনে নিয়েছিল ইতালিয়ান জায়ান্ট ন্যাপোলি। ফুটবল বিশ্বে প্রথমবারের মতো ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে কেনা বেচা হন ওয়েলসের গ্যারেথ বেল। ২০১৩ সালে টটেনহ্যাম হটস্পার থেকে ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে বেলকে কিনে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। ২০১৬ সালে ১০৫ মিলিয়ন ইউরোতে জুভেন্টাস থেকে ম্যান ইউতে নাম লেখান পল পগবা।

 

নেইমার ২০১৩ সালে নাম লেখান বার্সেলোনায়। এরপর গত চার বছরে লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ, জেরার্ড পিকেদের সঙ্গে মিলে মিশে সাফল্যে প্রতিভূ হয়েছিলেন।        

বার্সার জার্সি গায়ে গত চার বছরে নেইমার গোল করেন ১০৫টি। ক্লাবটির পক্ষে তার চেয়ে বেশি গোল করা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার আরেক লিজেন্ড রিভালদো (১৩০টি)। এই চার বছরে তিনি সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন ৫৯টি। চার বছরে বার্সা যে ১৮৬টি গোল করেছেন তাতে কোনো না কোনোভাবে অবদান রেখেছেন নেইমার ১৬৪ গোলে সহায়তা করে। যে পিএসজিতে নাম লিখেছেন, তার বিপক্ষে তার গোলের সংখ্যা একেবারে কম নয়, ৭টি। লা লিগায় বার্সার পক্ষে মোট ১৫টি পেনাল্টি আদায় করেছেন তিনি। সবচেয়ে বেশি ১৭টি রোনালদোর। বার্সেলোনার পক্ষে নেইমার শিরোপা জিতেছেন ৮টি।

সর্বশেষ খবর