মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

শেষ মুহূর্তের গোলে আবাহনীর জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

শেষ মুহূর্তের গোলে আবাহনীর জয়

মোহামেডানের জালে বল পাঠিয়ে খুশিতে আত্মহারা আবাহনীর জয়ের নায়ক রুবেল মিয়া। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে শেষ মুহূর্তের গোলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে —রোহেত রাজীব

পূর্ব গ্যালারির কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না একজন ফুটবলপ্রেমী। ফ্লাড লাইটের আলোতেও অন্ধকার মনে হচ্ছিল মশালের বাঁ প্রান্তের গ্যালারিটিকে। এরই মধ্যে এক ঝলক আলো দেখার মতো ৪-৫ জন মহিলা দর্শককে দেখা গেল ভিআইপি গ্যালারিতে। সন্ধ্যা থেকে বসে বাদাম খাচ্ছেন আর গল্প করছেন। কিন্তু খেলার প্রতি কোনো মনোযোগ নেই। নিজেদের মধ্যে গল্প করাতেই ব্যস্ত ছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধের কোনো এক সময় মাঠ ছেড়ে চলে যান তারা। তাদের চলে যাওয়াই বলে, দেশের দুই প্রধান আবাহনী ও মোহামেডানের ম্যাচটি কোনো আবেদনই সৃষ্টি করতে পারেনি কারও মনে। অথচ সত্তর, আশি ও নব্বই দশকে দুই দলের ফুটবল লড়াই মানেই সূক্ষ্ম বিভাজনের সৃষ্টি হতো গোটা দেশে। দেশের আনাচে-কানাচে পাল্লা দিয়ে পতাকা উড়াতেন নিজ নিজ দলের সমর্থকরা। আজ সেসব শুধুই স্মৃতি! প্রায় দর্শকশূন্য গ্যালারিতে গতকাল পেশাদার লিগের ২০তম বারের মতো মুখোমুখি হলো আবাহনী ও মোহামেডান। টান টান উত্তেজনার ম্যাচটি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ১-০ গোলে চির প্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানকে হারিয়ে পেশাদার লিগে ফের জয়ের রাস্তায় উঠে এল। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের জয়ের নায়ক রুবেল মিয়া। হারের ধাক্কা সামলে যেমন জয়ের ধারায় ফিরল আবাহনী, ঠিক তেমনি বিপরীতে টানা তিন হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়ল ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান। দিনের প্রথম খেলায় শিরোপা প্রত্যাশী চট্টগ্রাম আবাহনী ২-০ গোলে হারিয়েছে টিম বিজেএমসিকে। ৬৩ মিনিটে          বন্দরনগরীর দলটির টানা তৃতীয় জয়ের পক্ষে প্রথম গোল করে আফিজ ওলাওয়ালে ওলাপিডো এবং ৮২ মিনিটে তওহিদুল আলম সবুজ।

আগের ম্যাচে হোচট খেয়েছে আবাহনী। পুরনো ঢাকার দল ফরাশগঞ্জ ১-০ গোলে হারের তিক্ত স্বাদ দিয়েছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে। তাই গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যায় চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ফুটবল লড়াইয়ে শতভাগ সতর্ক ছিল। বিপরীতে প্রথম দুই ম্যাচের হারের ধাক্কা সামলাতে মরিয়া ছিল সাদাকালো শিবির। মতিঝিল পাড়ার দলটি খেলতে নামে হেড কোচ সৈয়দ নাইমুদ্দিনকে ছাড়া। বেশ কয়েকটি ম্যাচেই ডাগ আউটে দেখা যাচ্ছে না নাইমুদ্দিনকে। তিনি এখন কলকাতায় অবস্থান করছেন। তার জায়গায় ডাগ আউটে সরব থাকছেন টিম ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু। টিম ম্যানেজার যখন দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী দলের কোচের দায়িত্বে থাকেন, তখন স্পষ্টই পরিষ্কার দুই প্রধানের ম্যাচ এখন আর কোনো আবেদন ছড়ায় না ফুটবলপ্রেমীদের মনে। দেশের ফুটবলের যে মান, ফুটবলারদের যে ফুটবলশৈলী, তাতে গাঁটের টাকা খরচ করে, সময় নষ্ট করে মাঠে উপস্থিত থেকে খেলা দেখা বিরক্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। ফুটবলপ্রেমীরা এখন মশগুল থাকেন মেসি, রোনালদো, নেইমারদের সৃজনশীল ফুটবল দেখতে। মধ্যরাত থেকে শুরু করে ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত টিভি স্ক্রিনের সামনে বসে থাকেন রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, বায়ার্ন মিউনিখের খেলা দেখতে।

নেই সালাউদ্দিন, চুন্নু, আসলাম, মোনেম মুন্নাদের মতো স্কিল ফুটবলার। তাই দেশের ফুটবলের মান এখন তথৈবচ! তারপরও গতকাল দুই প্রধানের লড়াই ছিল বেশ উপভোগ্য। দুই দলই গোল পেতে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ করে খেলেছে। প্রথমার্ধে ম্যাচের অধিকাংশ সময়ই বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল মোহামেডানের। জাহিদ হোসেন এমিলি, তকলিস, স্যামসন ইলিয়াসুরা গোলের জন্য অলআউট ফুটবল খেলতে থাকে। কিন্তু গোলের দেখা পায়নি ফিনিশিংয়ের অভাবে।

দ্বিতীয়ার্ধে গোছানো ফুটবল খেলতে থাকে দ্রাগো মামিচের শিষ্যরা। বিশেষ করে রুবেল, এমেকা ডার্লিং টনরা গতিশীল ফুটবল খেলে মোহামেডানের রক্ষণভাগকে ব্যস্ত করে রাখে। এরই মধ্যে ৯০ মিনিটে মোহামেডান সহজ সুযোগ নষ্ট করে। অনিকের ক্রসে কিংসলে চিগোজি পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হলে ম্যাচের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। ম্যাচের      অতিরিক্ত সময়ে নাবীব নেওয়াজ জীবনের বাড়ানো বল ধরে ডান প্রান্ত দিয়ে প্লেসিং শটে মোহামেডানের গোলরক্ষক মামুন খানকে পরাস্ত করে জয়োৎসবে ভাসান রুবেল। ওই গোলের পরই ম্যাচ শেষে বাঁশি বাজে। তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে আবাহনী।

সর্বশেষ খবর