শিরোনাম
শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
পেশাদার ফুটবল লিগ

প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াইয়ের আভাস

তিন ম্যাচ শেষে চট্টগ্রাম আবাহনী ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব পুরো ৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াইয়ের আভাস

এগিয়ে চলেছে পেশাদার ফুটবল লিগ। ১২ দল অংশ নিচ্ছে। দেখতে দেখতে তিনটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে সবাই। ১২টি ক্লাবের ডাবল রাউন্ডের লিগ। সুতরাং কে যে চ্যাম্পিয়ন হবে বলা মুশকিল। গ্যালারি প্রায় শূন্য। তারপরও ম্যাচ উপভোগ্য হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ম্যাচে শিরোপার লড়াই যে হাড্ডাহাড্ডি হবে এ নিয়ে সংশয় নেই। তিন ম্যাচ শেষে চট্টগ্রাম আবাহনী ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব পুরো ৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। চ্যাম্পিয়ন আবাহনী সাইফ স্পোর্টিং ও ঢাকা মোহামেডানের বিপক্ষে জয় পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্বল প্রতিপক্ষ ফরাশগঞ্জের কাছে হেরে গেছে। সাইফ স্পোর্টিং, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস ২টি করে ম্যাচ জিতেছে।

শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র দুর্দান্ত জয়ে লিগ শুরু করেছিল। পরের ম্যাচ থেকে কেমন জানি ছন্দহারা। ব্রাদার্স ইউনিয়নের সঙ্গে ড্র ও শেখ জামালের কাছে হারে।

ফরাশগঞ্জ দুই ম্যাচ হারলেও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীর বিপক্ষে জয় পেয়ে রীতিমতো ঝড় তুলেছে। ব্রাদার্স ২ ও টিম বিজেএমসি ১টি ম্যাচ ড্র করেছে। বিস্ময় হলেও সত্যি যে পয়েন্টের খাতায় এখনো নাম তুলতে পারেনি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান।

গত লিগে দশম স্থান দখল করে কোনো রকমে রেলিগেশন রক্ষা করে। এবার বিগ বাজেটে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় নিয়ে দল গড়ে সাদা-কালোরা। কিন্তু মাঠে বড্ড দিশাহারা। শেখ জামাল, চট্টগ্রাম আবাহনী ও ঢাকা আবাহনীর কাছে হেরে পরাজয়ের হ্যাটট্রিক পূরণ করেছে। টানা তিন ম্যাচে হার মোহামেডানের কোনো নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু শুরুতে টানা তিন হার কখনো ঘটেনি।

শেখ জামালের কাছে হেরে মোহামেডানের বিরল রেকর্ডও ম্লান হয়ে যায়। ১৯৭০ সালে ওয়াপদার কাছে হারের ৪৭ বছর পর এই প্রথম নিজেদের প্রথম ম্যাচে হার মানল ঐতিহ্যবাহী দলটি। জয়তো দূরের কথা মোহামেডান এখন পর্যন্ত গোলের মুখ দেখেনি। শুরুতে টানা তিন ম্যাচ হেরে শিরোপা নয় সাদা কালোদের অবস্থান কোথায় গিয়ে ঠেকে তা দেখার বিষয়।

কে লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে বলা মুশকিল। কিন্তু শেখ জামাল ও চট্টগ্রাম আবাহনী যদি গতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে আপাতত দৃষ্টিতে দুই দলেরই সম্ভাবনা বেশি বলা যায়। তবে ঢাকা আবাহনী দুর্বল ফরাশগঞ্জের কাছে হারলেও তারাও শিরোপার প্রধান দাবিদার হবে এ নিয়ে সংশয় নেই। পেশাদার লিগে টানা দুই ম্যাচ হেরেও তাদের শিরোপা জয়ের রেকর্ড রয়েছে। তা ছাড়া চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের বিপক্ষে জয় পেয়ে আবাহনী এখন উজ্জীবিত। ডার্লিংটন, রুবেল মিয়া, জীবনের নৈপুণ্য চোখে পড়েছে। সুতরাং এক ম্যাচ হেরে আবাহনীর বড় কোনো সর্বনাশ হয়ে যায়নি। সামনে অনেক ম্যাচ পড়ে আছে, তারা নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে।

প্রশংসা করতে হয় তিনবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালের। মূলত তারা তারকানির্ভর দল গড়তো। এবার সেই ধারা থেকে বের হয়ে এসেছে। অভিজ্ঞ কিছু খেলোয়াড় রেখে মূলত প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তরুণদের। সত্যি বলতে কি এই নবীন খেলোয়াড়দের নিয়ে শেখ জামাল জ্বলে উঠতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু কোচ জোসেফ আফুসি ঠিকই তার শিষ্যদের তৈরি করে নিয়েছেন। মৌসুমের প্রথম ট্রফি ফেডারেশন কাপে সেমিফাইনাল খেলে নিজেদের সামর্থ্য তুলে ধরেছে। শেখ জামালের বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে তারা অনেক যাচাই-বাছাই করে বিদেশি ফুটবলার মাঠে নামিয়েছে। বিশেষ করে গাম্বিয়ান স্ট্রাইকার মোমোদো বোহকে এবারে সেরা বিদেশি মনে হচ্ছে। অসাধারণ স্কিল তার, নিজে খেলেছেন অন্যদের খেলাচ্ছেন। যে নৈপুণ্য প্রদর্শন করছেন তাতে সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে তিনিই থাকতে পারেন। নাইজেরিয়ান রাফায়েল ওডোইন ও গাম্বিয়ান সলোমন কিংও চমত্কার খেলছেন। দুজন বিদেশি মাঠে নামার সুযোগ পেলেও শেখ জামালের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। স্থানীয় ফুটবলাররাও জ্বলে উঠেছেন। রহমতগঞ্জ থেকে যোগ দেওয়া তরুণ নুরুল অবসার দলের সঙ্গে বেশ খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। এই গতি ধরে রাখতে পারলে হারানো শিরোপা উদ্ধার করা কঠিন হবে মনে হয় না।

গত লিগে রানার্সআপ চট্টগ্রাম আবাহনীও গতিময় খেলা খেলছে। সতর্ক হয়ে খেলায় এখন পর্যন্ত তাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়নি। মামুনুল, জাহিদ ছাড়াও বিদেশিরা জ্বলে উঠছে বলে জয় পেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র মুক্তিযোদ্ধাকে প্রথম ম্যাচে উড়িয়ে তাতে মনে হচ্ছিল দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে তারা। কিন্তু পরে দুই ম্যাচে মূল্যবান ৫ পয়েন্ট নষ্ট করে। তরুণ দল গড়লেও লড়াই করার সামর্থ্য রয়েছে তাদের। সুতরাং শিরোপার সম্ভাবনা এখনো জেগে আছে।

গতবারের আলোচিত দল রহমতগঞ্জও একেবারে খারাপ খেলছে না। ১ ম্যাচ হারলেও দুই ম্যাচ জিতেছে। নবাগত সাইফ স্পোর্টিং প্রথম ম্যাচে হারলেও পরের দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে তাদের হয়ে আবার ওয়েডসন মাঠে নামবে। সুতরাং শিরোপা লড়াই যে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে তা তিনটি করে ম্যাচ খেলার পরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এবার লিগে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে স্থানীয় ফুটবলারও গোল পাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর