সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বোল্টের ট্র্যাজিক বিদায়

রাশেদুর রহমান

বোল্টের ট্র্যাজিক বিদায়

শেষবারের মতো ট্র্যাকে নেমেছিলেন উসাইন বোল্ট। কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষটা সোনায় মুড়িয়ে রাখতে পারলেন না তিনি। চার গুনিতক ১০০ মিটার রিলেতে দৌড় শুরু করেই মাংস পেশির ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে গড়িয়ে পড়েন লাল ট্র্যাকে। ব্যথায় কাতরানো অবস্থায়ই তিনি দেখছেন বিজয়ী ব্রিটিশদের উৎসব —ইন্টারনেট

মঞ্চ আলাদা। প্রথমটা বক্সিং রিং। দ্বিতীয়টা অ্যাথলেটিকসের ট্র্যাক। কিন্তু দৃশ্যের মধ্যে কী চমৎকার মিল! ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে বাহামার নাসাউতে ট্রেভর বারবিকের কাছে ১০ রাউন্ডের এক ভয়ঙ্কর ম্যাচে জীবনের শেষ লড়াইয়ে হেরে গিয়েছিলেন সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ মোহাম্মদ আলি। তবে এমন হারে বুঝি কিংবদন্তিদের মান-মর্যাদা আরও বেড়ে যায়। গত শনিবার সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদের তালিকায় মোহাম্মদ আলির উচ্চতা নিয়ে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে জীবনের শেষ লড়াইয়ে নেমেছিলেন উসাইন বোল্ট। জ্যামাইকান এ কিংবদন্তির ক্যারিয়ারের শেষটাও হলো মোহাম্মদ আলিরই মতো ট্র্যাজিক।

লন্ডনের সেই স্টেডিয়াম। ২০১২ সালের অলিম্পিকে এখানেই তিনটা স্বর্ণপদক জিতেছিলেন উসাইন বোল্ট। পাঁচ বছর পর সেই একই ট্র্যাকে একটাও স্বর্ণপদক জেতা হলো না জ্যামাইকান কিংবদন্তির। ক্যারিয়ারের শেষটা হলো বিয়োগান্তক। গত শনিবার চার গুনিতক ১০০ মিটার রিলেতে ক্যারিয়ারের শেষ দৌড়টা দিয়েছিলেন উসাইন বোল্ট। পুরো পৃথিবীর চোখ ছিল তার দিকে। টিভি ক্যামেরার ফোকাস ছিল এক স্থানেই। কিন্তু চরম বেদনাদায়ক ঘটনাটা ঘটল লন্ডনের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে। চার নম্বরে দৌড় শুরু করেই হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে খোঁড়াতে শুরু করলেন বোল্ট। পুরো স্টেডিয়াম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। টিভি পর্দায় যাদের চোখ ছিল তারাও হতভম্ব। আর উসাইন বোল্ট কাতরাতে শুরু করলেন ট্র্যাকের লাল জমিনে। ডাক্তারসহ সতীর্থরা ছুটে গেল বোল্টের দিকে। ততোক্ষণে স্বর্ণপদক জয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছে ব্রিটিশ দল। উসাইন বোল্ট আরও একবার ভক্তদের হতাশ করেছিলেন। ২০১১ সালে দেগুতে। সেবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটারে সময়ের আগেই দৌড় শুরু করে বাদ পড়েছিলেন বোল্ট। তবে ২০১১ সালের চেয়ে গত শনিবারের বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সর্বকালের সেরা দৌড়বিদকে শেষবারের মতো ট্র্যাকে দেখছিলেন ভক্তরা। কত যুগ পর আবার এমন কাউকে দেখা যাবে ট্র্যাকে! ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ট্র্যাকে এমন ঝড় তুলেছেন কেউ। যার দৌড় দেখার জন্য কোটি কোটি চোখ থাকতো টিভির পর্দায়। বোল্টের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে কেবল বেড়েছেই। সেই ২০০৭ সালের ওসাকা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শুরু। এরপর তিনটা অলিম্পিক আর ছয়টা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে মোট ১৯টা সোনা, ২টা রুপা আর একটা তামার পদক জিতেছেন তিনি। সংখ্যায় মার্কিন জলদানব মাইকেল ফেলপসের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু মানে-গুনে বহুগুণ বেশি। এ কারণেই বুঝি সর্বকালের সেরা কিংবদন্তিদের তালিকায় মোহাম্মদ আলির সঙ্গে উচ্চারিত হবে উসাইন বোল্টেরও নাম। ১০০ মিটার স্প্রিন্ট জিতে এ কারণেই বুঝি জাস্টিন গ্যাটলিন উসাইন বোল্টের সামনে করজোড়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন। উসাইন বোল্টের এমন সম্মানই তো প্রাপ্য।

গত অলিম্পিকের আগে উসাইন বোল্ট একবার বলেছিলেন, আমি মোহাম্মদ আলির মতো হতে চাই। ছেলেবেলা থেকেই নাকি তিনি চাইতেন আলির মতো মানুষ হতে। বোল্ট কী আলির মতো হতে পারবেন! মোহাম্মদ আলি কেবল তার বক্সিংয়ের জন্যই পৃথিবীজোড়া নাম কুড়াননি। তিনি সামাজিক আন্দোলনে বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন। সাদা-কালোর পার্থক্য ঘুচিয়েছিলেন আলি। সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ হওয়ার জন্য বোল্ট ট্র্যাকের ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। এবার দেখা যাক, তিনি সামাজিক আন্দোলনে কতটা ভূমিকা রাখতে পারেন। অবশ্য এরই মধ্যে ডোপ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন জ্যামাইকান এ গতি তারকা।

এদিকে ব্রিটিশ কিংবদন্তি মো. ফারাহের বিদায়টাও পরাজয় দিয়েই হলো। ১০ হাজার মিটারে তিনি স্বর্ণপদক জিতলেও ৫ হাজার মিটারে স্বর্ণপদক জিততে পারেননি তিনি। তবে জীবনের শেষ লড়াইয়ে হেরেও বিজয়ী মো. ফারাহও। ব্রিটিশ মিডিয়া তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর