সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

উপমহাদেশ বলেই আতঙ্কে অস্ট্রেলিয়া

ব্যাটিং বিশ্লেষণ

মেজবাহ্-উল-হক

উপমহাদেশ বলেই আতঙ্কে অস্ট্রেলিয়া

স্মিথ - ওয়ার্নার

অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপও দুর্দান্ত। একেক জন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে ওপেন করেন ম্যাথু রেনশো। তিন নম্বর জায়গায় ব্যাটিং করে স্বয়ং অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। গত ভারত সফরে টেস্টে চার নম্বর পজিশনে খেলেছেন শন মার্শ। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঘোষিত দলে জায়গা হয়নি মার্শের। একই পজিশনে দেখা যেতে পারে উসমান খাজাকে। পাঁচ নম্বর জায়গাটি পিটার হ্যান্ডসকম্বের। ছয়ে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং সাতে ম্যাথু ওয়েড। টেস্টের ব্যাটিং অর্ডারে সেরা সাত ব্যাটসম্যান।

তবে টিম অস্ট্রেলিয়ার ১১ জনই ব্যাটসম্যান। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সফরে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন পেসার জেসন গিলেস্পি। অসি এই গতি তারকা ১০ কিংবা ১১ নম্বরে ব্যাটিং করতে নামতেন। কিন্তু নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাট করতে নেমেই ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলেন।

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ নিজেই। কী অসাধারণ ধারাবাহিকতা! ৫৪ টেস্টে তার সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি ২০টি করে। গড় ৬১.০৫— টেস্টে যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্য ঈর্ষণীয়। উপমহাদেশের উইকেটেও দুর্দান্ত স্মিথ। ভারতে এসে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ হারলেও অসি দলপতি ৪ ম্যাচে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। তার ২০ সেঞ্চুরির ৫টি উপমহাদেশের মাটিতে করা। স্পিন বোলিংও দারুণ খেলতে পারেন তিনি। তাই বাংলাদেশের স্পিনারদের পরীক্ষা ফেলতেন পারেন এই স্মিথ।

ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। উইকেটে একবার সেট হয়ে গেলে ভয়ঙ্কর হয়ে যায়। বোলারকে কোনো রকম সুযোগই তৈরি করতে দেন না এই মারকুটে তারকা। ৬৪ টেস্টে তার গড় ৪৭.৪২। সেঞ্চুরি করেছেন ১৮টি, হাফ সেঞ্চুরি ২৪টি। গত বছরের নভেম্বর থেকে ওয়ার্নারের সঙ্গে ওপেন করেন রেনশো। ইতিমধ্যেই নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন ২১ বছর বয়সী এই তরুণ ব্যাটসম্যান। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিডনি টেস্টে খেলেছেন ১৮৪ রানের ইনিংস। ৮ ম্যাচ খেলে ৪২.০৭ গড়ে রান করেছেন। তিনটি হাফ সেঞ্চুরিও করেছেন। পিটার হ্যান্ডসকম্বের অভিজ্ঞতার ঝুলিতেও মাত্র ৮ টেস্ট। তবে এরই মধ্যে দাপট দেখিয়েছেন এই অসি ব্যাটসম্যান। মিডল অর্ডারে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপের প্রধান ভরসা তিনি। টপ অর্ডারে দ্রুত উইকেট পতন হলে ইনিংসকে ধরে রাখেন হ্যান্ডসকম্ব। ৫৪.২৭ গড়ে রান করেছেন। দুটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তার।

অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ম্যাথু ওয়েড। এখনো নিজেকে আলাদা করে চেনাতে পারেননি। ২০ ম্যাচে তার সেঞ্চুরি মাত্র দুটি। গড়ও ভালো নয়—৩১.০৩। ওয়েড পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান। যেকোনো মুহূর্তে বড় ইনিংস খেলার যোগ্যতা তার আছে। সাধারণত সাত নম্বরে ব্যাট করে থাকেন তিনি।

টি-২০র মারকুটে ম্যাক্সওয়েল টেস্টে ভীষণ ধৈর্যশীল। উপমহাদেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান। তাই সেই ২০১৩ সালে অভিষেক হলেও এখনো উপমহাদেশের বাইরে (পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আবুধাবী টেস্ট ছাড়া) কোনো টেস্ট খেলেননি ম্যাক্সওয়েল। এবার বাংলাদেশ সফরেও আসছেন ম্যাক্সওয়েল। তবে অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটিং লাইনআপ কি ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপের চেয়েও ভয়ঙ্কর! সব শেষ দেশের মাটিতে বাংলাদেশ দুই ম্যাচের টেস্ট খেলেছিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। কিন্তু টাইগার স্পিনের সামনে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেননি সফরকারীরা।

মজার বিষয় হচ্ছে, ওই সিরিজে দুই ম্যাচের চার ইনিংসে সেঞ্চুরি করতে পারেননি ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজে সব মিলে সেঞ্চুরিই হয়েছিল মাত্র একটি— তা এসেছিল বাংলাদেশের ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে। ওই সিরিজে ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো অগ্নি-পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। বাংলাদেশের তিন স্পিনার—মেহেদী হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম মিলে ইংলিশদের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিলেন। দুই টেস্টে ইংল্যান্ডের পতন ঘটা ৪০ উইকেটের মধ্যে ৩৯ উইকেটই নিয়েছিলেন তিন স্পিনার। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টেও আক্রমণের দায়িত্বে এই তিন স্পিনার। সঙ্গে রয়েছে মুস্তাফিজুর রহমানের কাটার-স্লোয়ার-ইয়র্কার! দ্বিতীয় পেসার হিসেবে দেখা যেতে পারে রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম কিংবা তাসকিন আহমেদের মধ্যে একজনকে!

তবে এই টেস্ট সিরিজে লড়াইটা হবে ‘অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বনাম বাংলাদেশের স্পিন’! এখন দেখার বিষয়, যেভাবে বাংলাদেশের স্পিনাররা ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন—অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও সেই ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেন কিনা!

সর্বশেষ খবর