সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্মৃতিশক্তি হারাতে বসেছেন ক্রিকেটার গোয়ালা

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

স্মৃতিশক্তি হারাতে বসেছেন ক্রিকেটার গোয়ালা

জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার রামচাঁদ গোয়ালা

প্রায় ৩০০ বর্গফুটের একটি হাফ বিল্ডিং ঘর। খাটে মশারি অর্ধেক টাঙানো। পাশেই মরিচা ধরা একটি স্টিলের আলমারি। সঙ্গেই একটি সু-কেস। কপাটের সঙ্গেই টিভি। পেছনে পুরোনো দিনের কিছু ছবি দেয়ালে টাঙানো। ছোট্ট টেবিলে রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি ট্রফি। আর এক সেট সোফা। সোফাগুলোও বেশ জীর্ণ। বলছিলাম বাঁ-হাতি স্পিনে ২২ গজ কাঁপানো ক্রিকেট অঙ্গনের প্রিয় মুখ রামচাঁদ গোয়ালার কথা। ময়মনসিংহ নগরীর ব্রাহ্মপল্লীর বাসাতে গিয়ে দেখা যায় এমনটি।

চিরকুমার প্রিয় গোয়ালদা’র সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩০০ বর্গফুটের এই ঘরটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ তার জীবন। বড়জোড় বিশ কদম হেঁটে বাড়ির সামনে ভাতিজার দোকানে গিয়ে কিছুটা সময় কাটান। কারণ, বাঁ পায়ের হাঁটুর হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসক হাঁটতে নিষেধ করেছেন। কানেও শোনেনা খুব একটা। শোনার জন্য ব্যবহার করেন একটি মেশিন। সেটিও অনেক পুরোনো। কথায়ও জড়তা চলে এসেছে। বছর পাঁচেক আগে ব্রেন স্ট্রোক করার পর মাঠে ফেলে আসা স্মৃতিগুলোও কেমন যেন ভুলে যেতে চলেছেন। অনেক কিছুই মনে করতে পারছেন না। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা থাকলেও একটু দূরে দেখতে পারেন না। রক্তচাপটাও ওঠা-নামা করছে বেশ। মোদ্দা কথা ভালো যাচ্ছে না বাংলাদেশের প্রথম এই বাঁ-হাতি স্পিনারের দিনগুলো।

যে ক্রিকেটের জন্য কৈশোর, তারুণ্য আর যৌবনের প্রতিটি ক্ষণ উৎসর্গ করেছেন ৭৮ বছর বয়স্ক এই গোয়ালাদা, তার কাছেই জানতে চাওয়া হয়েছিল বিসিবি কী কোন খোঁজ নেয় আপনার? ক্ষাণিক চুপ থেকে নিচু স্বরে  উত্তর দিলেন, এটার বিশ্লেষণ আমি করতে পারব না। তবে এইটুকু বলি তাদের করাটা উচিত। অন্য কিছু না করুক, অন্তত খোঁজ খবরটা নিলে মনে একটু শান্তি পাওয়া যায়। আক্ষেপ করে বললেন, ময়মনসিংহে যে আবাহনী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা আমি সেই ক্লাবটির কোনো কর্তাও আমার কোনো খবর রাখেন না। শেখ কামালের অফারেই মোহামেডান ছেড়ে যোগ দিই ঢাকা আবাহনীতে। টানা ১৫ বছর এখানেই খেলি। নিজের জীবন নিয়েও বললেন কিছুক্ষণ। জানালেন মাঠে থাকতে থাকতেই বিয়ের লগ্ন পার হয়ে যায়। মাঠই ছিল সব। এই লগ্নে এসে বুঝতে পেরেছেন বিয়ে করাটা দরকার ছিল। বললেন, বউ থাকলে হয়তো সেবাটা অন্তত করতে পারত। স্পিনে সবার নজর কাড়লেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বললেন, অনুশীলনের সময় মাঝে মধ্যে স্পিন করতাম। সেটি খেয়াল করতেন পন্ডিতপাড়া ক্লাবের কোচ ফখরউদ্দিন আহমেদ। একদিন বললেন, তুমি স্পিন কর। স্পিনে তুমি খুব ভালো করবে। এরপর থেকেই দেশে বাঁ-হাতি স্পিনের প্রথম বলার হিসেবে নাম উঠল। ভিক্টোরিয়ার হয়ে ১৯৬২ সালে দেশে প্রথম বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে বল হাতে তুলে নেই। সেই থেকে প্রতি বছর ঢাকা লিগে ৪০ থেকে ৪৫টি উইকেট তুলে নিতাম। লিগে ৭ বার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলাম।

জীবনের সেরা একটি মুহূর্ত জানতে চাইলে ৬০ দশকে বাঁ-হাতি স্পিন শুরু করা রামচাঁদ গোয়ালা বলেন ১৯৯৬ সালের কথা। শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপ জয় শেষে মোহামেডানের হয়ে খেলতে এসেছিলেন লঙ্কান রানাতুঙ্গা ও জয়সুরিয়া। এই দুটো উইকেটও পেয়েছিলাম আমি!  কীভাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি একগাল হেসে বললেন, আমাদের আবাহনীতে তখন ভারতীয় কিংবদন্তি অরুণ লাল ছিলেন। তিনিই আমাকে পরামর্শ দিলেন বল ঝুলিয়ে দিতে। আমি তাই করলাম। কিন্তু রানাতুঙ্গা প্রথম বলটাকেই চার বানালো। পরের বলটিতে ছক্কা হাঁকালেন। এরপরের বলটিকে একটু টেনে ডেলিভারি দিলাম। আকাশে তুলে মারলেন। লুফে নিলেন মিড অফে দাঁড়ানো অরুণ লালই। আসলে বাউন্ডারি হাঁকানো বল দুটো ছিল পাতা ফাঁদ। একই রকম ডেলিভারিতে বিদায় নিয়েছিল জয়সুরিয়াও। ঢাকা লিগে একটি বিরল রেকর্ড আছে তার। ১৯৭৫ সালে প্রথম বিভাগ লিগে গোয়ালা ছিলেন মোহামেডানের ক্রিকেটার। সেমিফাইনালে তারা হেরে যায় আবাহনীর কাছে। তবে ব্যাটিংয়ে শেষ জুটিতে দৌলতের সঙ্গে ৯৯ রান তুলেছিলেন তারা। যে রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেনি।

সর্বশেষ খবর