বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ছোটদের কাঁধে বড় দায়িত্ব

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ

মেজবাহ্-উল-হক

ছোটদের কাঁধে বড় দায়িত্ব

মুস্তাফিজ - তাইজুল - মিরাজ

সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ—বাংলাদেশ দলের চার সিনিয়র ক্রিকেটার। এই চারজনকে ঘিরেই টাইগারদের ‘ব্যাটিং-বলয়’ তৈরি হয়। আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সিরিজে এই চারজনের ব্যাটেই স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কি শুধুমাত্র ব্যাটিং দিয়ে ম্যাচ জেতা সম্ভব? টেস্ট ক্রিকেটে সেই দলই জয় পায়, প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য যাদের আছে! আর বাংলাদেশের মতো উইকেট হলে তো কথাই নেই। এখানে বোলাররাই গড়ে দেন ম্যাচের ভাগ্য।

ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত সব শেষ সিরিজের দিকে তাকালেই আরও পরিষ্কার হয়ে যায় বিষয়টি। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয়ে ছিল বোলারদের দাপট, সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের পেছনেও প্রধান ভূমিকা ছিল বোলারদের। তাই ‘অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ’ দুই ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজেও যে বোলারদের প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইনআপে সিনিয়রদের প্রাধান্য থাকলেও বোলিংয়ে আধিপত্য কিন্তু ‘ছোট’দের (তরুণ ক্রিকেটার)। মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান —এই তিন তরুণ ক্রিকেটারই বোলিংয়ের প্রাণ।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি ‘কাটার মাস্টার’। তবে মিরাজ ও তাইজুল বাজিমাত করে দিয়েছেন। দুই ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন মিরাজ। অভিষেক সিরিজেই নিজের ‘ভয়ঙ্কর’ রূপটি প্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছেন তিনি।  প্রথম সিরিজেই পেয়েছেন সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার। ওই সিরিজে পার্শ্বনায়ক ছিলেন তাইজুল ইসলাম। যদিও তাকে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। তবে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের ওপর সবচেয়ে বেশি চাপ প্রয়োগ করেছেন কিন্তু তিনিই। তাইজুলের বল খেলতেই পাচ্ছিলেন না ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা তাকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে ধরাশায়ী হয়েছেন মিরাজের কাছে। ঘরের মাঠের উইকেট থেকে শতভাগ সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন উভয়েই। মিরাজ-তাইজুল দুই স্পিনারই দারুণ টার্ন করিয়েছেন। দারুণ বোলিং করেছেন সাকিবও। কিন্তু মিরাজ-তাইজুল যতটা ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন ততটা পারেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। মুস্তাফিজ থাকায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে শক্তি আরও বেড়ে গেছে। মিরাজের মতো সাদা পোশাকে মুস্তাফিজের অভিষেকও হয়েছিল দুর্দান্তভাবে। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রথম ইনিংসেই চার উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। যদিও বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। তবে সেই ম্যাচে সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার উঠেছিল কাটার মাস্টারের হাতেই। অথচ ওই ম্যাচে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ছিলেন মরনে মরকেল, ডেল স্টেইন ও ভারনন ফিলান্ডারের মতো বিশ্বসেরা বোলার। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই সিরিজটি ঘরের মাঠে মুস্তাফিজের দ্বিতীয় সিরিজ। মিরাজেরও দ্বিতীয়। দুই তরুণ বোলারের মধ্যে একটা অন্য লড়াই দেখা যেতে পারে এই সিরিজে! যদিও দুইজনের বোলিংয়ের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। মুস্তাফিজ পেসার, মিরাজ স্পিনার। কিন্তু দেশের মাটিতে দুই জনের বোলিংই ভীষণ কার্যকরী।

মুস্তাফিজের বোলিংয়ে প্রধান শক্তি— কাটার, স্লোয়ার ও ইয়র্কার। ওভারে একটা কিংবা দুইটা কাটার মেরে থাকেন তিনি। কিন্তু কোন বলে কাটার দেবেন তা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন ব্যাটসম্যানরা। দেখা যায়, ওয়াইড মনে মনে করে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ছেড়ে দিয়েছেন ব্যাটসম্যান— কিন্তু পরে দেখলেন স্ট্যাম্প ভেঙে গেছে।

‘স্লোয়ার’ তো আরও ভয়ঙ্কর। মুস্তাফিজ স্লোয়ার দেওয়ার সময়ও তার হাতের কোনো পরিবর্তন হয় না। এখানেই বিভ্রান্তিতে পড়ে যান ব্যাটস্যানরা। ১৪০ কিমি গতি মনে করে ব্যাট চালালেন ব্যাটসম্যান, কিন্তু বলটি এলো ১২৫ কিমি গতিতে। এমন বিভ্রান্তিতে পড়েই অনেক সময় ব্যাটসম্যান ক্যাচ তুলে দিতে বাধ্য হন। মুস্তাফিজের ইয়র্কারেও দিশেহারা হয়ে যান ব্যাটসম্যানরা। ডান হাতি মিরাজের অফ-স্পিন আর বাম হাতি তাইজুলের স্পিন সামলানো যে কতটা কঠিন তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। দুই ম্যাচের চার ইনিংসে মিলে একটা সেঞ্চুরিও করতে পারেননি ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যান। দুই স্পিনারই দারুণ টার্ন করাতে পারেন। মিরাজ-তাইজুল দুই স্পিনারই দীর্ঘ স্পেলে বোলিং করতে পারেন। দীর্ঘ সময় তারা একই জায়গা বল ফেলেন। যেটা টেস্টে বোলিং করার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। এই দুই স্পিনারের সঙ্গে অভিজ্ঞ সাকিব তো রয়েছেনই। বিশ্বের এমন কোনো ব্যাটসম্যান নেই যে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে সমীহ করেন না। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারি বোলার তিনি। তবে ব্যাটিংয়ে বড় ইনিংস খেললে বোলিংয়ে শতভাগ মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে যায় সাকিবের। তাই তিন তরুণ বোলার— মিরাজ, তাইজুল ও মুস্তাফিজই বোলিংয়ে প্রধান ভরসা। যদিও তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলিটা খুব বড় নয়। তিনজন মিলে খেলেছেন কেবল মাত্র ২৪ ম্যাচ। তারপরেও গুরু দায়িত্ব নিতে হবে তাদেরই। কেন না বোলারদের ওপরই যে নির্ভর করছে এই সিরিজের ‘সাফল্য’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর