বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফুটবলার জামিল হত্যারহস্য ৪২ বছরেও উদঘাটন হয়নি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফুটবলার জামিল হত্যারহস্য ৪২ বছরেও উদঘাটন হয়নি

ফুটবলার জামিল আক্তার

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পর ঢাকা আবাহনীর বড্ড দুর্দিন অবস্থা। ক্লাব প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালকে নির্মমভাবে হত্যার পর আবাহনীকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু সংগঠক ও খেলোয়াড়দের সাহসি ভূমিকার জন্য তা সম্ভব হয়নি। তারপরও হুমকি নির্যাতনের শেষ ছিল না।

হত্যা করা হয় দলের অবাঙালি ফুটবলার জামিল আক্তারকে। ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে অংশ নেওয়া অধিকাংশ পশ্চিম পাকিস্তানি ফুটবলার ৭১ সালে দেশে ফিরে যান। গফুর বেলুচ ও জামিল আক্তার থেকে যান। জামিল অবশ্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসেননি। ষাট দশকে তিনি ভারতের বিহার থেকে ঢাকায় আসেন। অবাঙালি হলেও তার বাবা ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। তাই ঢাকাতেই থেকে যান।

স্বাধীনতার পর গফুর বেলুচ খেলেন বিজেআইসিসিতে (বর্তমান বিজেএমসি) আর জামিল আক্তার ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে। গফুর বেলুচ অবশ্য পরবর্তীতে ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ৯০ দশকে তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৯৭৩ সালে ওয়ান্ডারার্সে জামিল আক্তার নজরকাড়া পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন। প্রথম পর্বে শক্তিশালী বিজেআইসিসির বিপক্ষে তার দুই গোল এখনো চোখে ভাসে। স্ট্রাইকার পজিশনে দুর্দান্ত খেলতেন। পরের মৌসুম অর্থাৎ ১৯৭৪ সালে শেখ কামালের অফারে জামিল আক্তার ঢাকা আবাহনীতে যোগ দেন। সেবারই আবাহনী প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়। জামিল আক্তার বেশ কটি গোলও করেন দলের হয়ে। ১৯৭৪ সালে আবাহনীর অধিনায়ক ছিলেন গোলাম সারওয়ার টিপু।

তিনি বলেন, ‘খুব একটা গতি ছিল না জামিলের। তবে তার পায়ের কাজ অসাধারণ। প্রতিপক্ষের বাধা ডিঙিয়ে সতীর্থদের বল জোগানের জুড়ি ছিল না তার। তার পাসে আবাহনী অনেক গোল পেয়েছে। একজন ভালো ফুটবলারের সব গুণাবলী জামিলের ভিতর ছিল।’ সে সময় আবাহনীতে খেলা আরেক ফুটবলার শেখ আশরাফ আলী বলেন, জামিল খুবই উচু মানের ফুটবলার ছিলেন। সারাক্ষণ হাসিখুশিতে থাকতেন। কী কারণে তাকে হত্যা করা হলো তা আমার জানা নেই।

১৯৭৫ সালে অন্য দল থেকে বড় অফার পেলেও জামিল থেকে যান আবাহনীতেই। জামিলের বাসা ছিল মহাখালীতে। কিন্তু সেই বাসা দখল হয়ে যাওয়ার পর শেখ কামালই মোহাম্মদপুরে থাকার ব্যবস্থা করেন জামিলের। ১৫ আগস্টেও ট্র্যাজেডির পর অনেক ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে তাকে। কিন্তু জামিল এসব তোয়াক্কা করেননি। নিয়মিত আবাহনী ক্যাম্পে যোগ দিতেন। এমন কি ১৫ আগস্টেও শেখ কামালের হত্যার খবর শুনে জামিল আবাহনী ক্লাবে ছুটে আসেন। কিন্তু তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কখনো তিনি কোনো রাজনীতির দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। শেখ কামালের আবাহনীতে খেলতেন বলেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ধারণা অনেকের। তবে আগস্টে নয়, জামিলকে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালে ৭ নভেম্বরের ঘটনার পর।

আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ আবেগভরা কণ্ঠে বললেন, ‘আমরা একদিন পর জানতে পারি জামিলকে হত্যার কথা। রাতের বেলায় মোহাম্মদপুরে হত্যা করে জামিলের লাশ মোহাম্মদপুর সংলগ্ন বুড়িগঙ্গার তীরে ফেলে রেখে যায়। বুলেটে তার বুক ঝাঁঝরা হয়ে যায়।

টিপু বলেন, একজন ফুটবলারকে কেন নির্মমভাবে হত্যা করা হলো ৪২ বছরেও সেই রহস্য উন্মোচন করা হয়নি। তবে শুনেছি মোহাম্মদপুরের বাসা দখল নেওয়ার জন্য জামিলকে হত্যা করা হয়। কেউবা আবার বলেছেন আবাহনীতে খেলতো বলেই হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবাদ বা মামলা করার পরিবেশ তখন ছিল না। কিন্তু একজন ফুটবলারকে এভাবে হত্যা করা হলো কেন? কখনো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সবার সঙ্গে জামিলের আন্তরিকতা ছিল। এই হত্যার পেছনে নিঃসন্দেহে বড় কোনো কারণ ছিল। যা ৪২ বছরেও রহস্য থেকে গেছে।

সর্বশেষ খবর