বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

লিগ নয় যেন মহল্লার ফুটবল!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

লিগ নয় যেন মহল্লার ফুটবল!

কাদা মাঠে পেশাদার লিগ

শেষ পর্যন্ত লিগ বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের যে অবস্থা তাতে মাঠে হাঁটাই যায় না। ফুটবলাররা খেলবেন কীভাবে? পুরোপুরি অনুপযুক্ত মাঠে তবু খেলা চালিয়ে গেছে লিগ কমিটি। কর্মকর্তারা চোখে দেখছেন মাঠের বেহাল দশা। কিন্তু খেলা বন্ধ রাখার প্রয়োজন মনে করছিলেন না। যেকোনো সময় ঘটে যেতে পাড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। খেলোয়াড়রা ইনজুরিতে পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ক্লাবগুলো। ফুটবলের এমন দুর্দিনের সময়েও কোটি কোটি টাকা খরচ করে দল গড়ছে ক্লাবগুলো। সত্যি বলতে কী পেশাদার লিগ যে মাঠে গড়াচ্ছে এর মূল কৃতিত্ব ক্লাবগুলোরই। তারপরও বাফুফে তাদের সমস্যা দেখবে না তা কি হয়? এক পেশাদার লিগ ছাড়া বাফুফের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। সুতরাং ক্লাবগুলোর সুবিধা-অসুবিধার কথা বাফুফেকে ভাবতে হবেই। অনুপযুক্ত মাঠে খেলা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। সত্যি বলতে কি ধানখেত থেকে ধান তুলে নেওয়ার পরও এত খারাপ অবস্থা হয় না। কিন্তু বৃষ্টিতে লাগাতার ফুটবল খেলায় মাঠের যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছিল কোদাল বা কুড়াল দিয়ে মাঠ খোঁড়া হয়েছে। লিগ কমিটির উচিত ছিল এই অবস্থা দেখে লিগ আরও আগে স্থগিত রাখা। স্কুল বা পাড়ায় কাঁদা মাঠে ফুটবল খেললে যে দশা হয় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের চেহারা দেখে তাই মনে হচ্ছিল। এমন পিচ্ছিল মাঠে কোনো ফুটবলার গুরুতর আহত হলে বাফুফে কি তার চিকিত্সার ব্যবস্থা করবে? হয়তো এতে করে তার ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যেতে পারে। অতীতে এই ধরনের উদাহরণ অনেক রয়েছে।

যাক মাঠের অবস্থা খারাপ বলে লিগ কমিটি দুই দিন খেলা বন্ধ রেখেছে। গতকাল ও আজ কোনো ম্যাচ নেই। বডিলিশিফট করে শুক্রবার থেকে ফুটবল আবার মাঠে গড়াবে। দুই দিন বন্ধ রাখায় সমস্যার সমাধান কি হয়ে যাবে? বৃষ্টি না হলে খেলা চলবে ঠিকই। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টি হলে তখন কি হবে। তাছাড়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগস্টের শেষের দিকে মুষল ধারে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখনতো আবার মাঠ অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। তাহলে আবার লিগ বন্ধ থাকবে। এভাবে হলে কবে যে লিগ শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বাফুফে কর্মকর্তারা একটাই কথা বলেন, বৃষ্টিতে কাঁদা মাঠে আগেও তো লিগ হয়েছে। এখন এত কথা উঠছে কেন? কথাটি সত্য, মুষলধারে বৃষ্টিতে ৭০ বা ৮০ দশকে মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচও হয়েছে। মাঠ খারাপ থাকায় লিগও অতীতে বন্ধ রাখা হয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতা দেখেইতো অধিকাংশ ক্লাব বাফুফের কাছে অনুরোধ রেখেছিল ফুটবল মৌসুমটা যেন নভেম্বর থেকে মাঠে গড়ায়। তাহলে ব্যাঘাত ঘটবে না। বাফুফে তা তোয়াক্কা করেনি, নিজেদের জেদ বজায় রেখেছে। এই জেদে ফুটবলের যে ক্ষতি হচ্ছে তা কি তারা কখনো ভেবেছে?

মৌসুমে কটা টুর্নামেন্ট হয় যে শীতে ফুটবল শুরু করা সম্ভব নয়। আগে ঢাকা স্টেডিয়ামে ফুটবল ও ক্রিকেটের দুটো লিগ হতো বলে গরম ও শীতকাল ভাগাভাগি করা হতো। এখনতো সেই সমস্যা নেই। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ওপর এত চাপ কেন? বিভাগীয় শহরগুলোতে আর কি স্টেডিয়াম নেই। এবার ঢাকা ছাড়া পেশাদার লিগের দ্বিতীয় ভেন্যু চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। কিন্তু এখানে হাতে গোনা ৬/৭টি ম্যাচ হবে। অথচ ভেন্যু যদি একাধিক হতো তখন বর্ষণ হলেও এতটা সমস্যা হতো না। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের নতুন দল বসুন্ধরা কিংস রংপুরকে হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। বাফুফে সেই অনুরোধ রক্ষা করেনি। বলেছে ঢাকাতেই খেলা হবে। আসলে ফুটবলকে সর্বনাশার পথে ঠেলে দিচ্ছেন বাফুফের কর্মকর্তারাই। ঢাকা ছাড়া আর কোনো চিন্তা তাদের মাথায় নেই। দুই দিন খেলা বন্ধ রেখে তাহলে লাভ হলো কি? প্রশ্ন উঠেছে বাফুফে কি চাচ্ছে না পেশাদার লিগ নিয়মিত হোক? তা না হলে নিজেরা এত জটিলতা সৃষ্টি করছেন কেন?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর