রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

কেন নেই মুমিনুল মাহমুদুল্লাহ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কেন নেই মুমিনুল মাহমুদুল্লাহ

দল ঘোষণার পর একের পর প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন ও প্রধান কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। প্রতিটি প্রশ্নের মূলভাব একই—মুমিনুল কেন বাদ পড়লেন? হাতুরাসিংহে হাসতে হাসতে সাংবাদিককের প্রশ্নের জবাব দিলেও মিনহাজুল মাঝে মধ্যে যেন মেজাজ হারিয়ে ফেলছিলেন! কেন এক মুমিনুলকে নিয়ে এত প্রশ্ন?

আসুন, মুমিনুল হকের বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নিই! বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড় মুমিনুলের। ২২ ম্যাচে ৪৬.৮৮ গড়ে রান গড়ে রান করেছেন ২৫ বছর বয়সী এই তারকা ব্যাটসম্যান। ৪টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ১১টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছেন। শুধু বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে নয়, কিছুদিন আগে বিশ্বের সব বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড় ছিল মুমিনুলের। টানা ১১ টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন তিনি। একের পর এক বড় ইনিংস খেলায় মুমিনুলকে বলা হতো ‘বাংলাদেশের ব্রাডম্যান’। তার সবচেয়ে বড় গুণ যেকোনো অবস্থায় মাথা ঠাণ্ডা রেখে বড় ইনিংস খেলতে পারেন তিনি। অথচ সেই মুমিনুলকে এবার বাদ দেওয়া হলে ‘অফ-ফর্ম’ এর জন্য। মুমিনুলের গত বছরের পারফরম্যান্সে খুশি হতে পারেননি নির্বাচকরা। তাই বাদ। মিনহাজুল আবেদীনের ব্যাখ্যা, ‘সামগ্রিক পারফরম্যান্সের জন্য মুমিনুল বাদ। আসলে মুমিনুল যে জায়গায় ব্যাট করছে, সেই জায়গায় সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসকে আমরা এগিয়ে রেখেছি। সৌম্যের আট ইনিংসের চারটিতে ফিফটি রয়েছে। ওর গড় ৪৫.৭৫। এ কারণে মুমিনুল বিবেচনার নিচে চলে গেছে। ঘরের মাঠে ইমরুলের পারফরম্যান্সও যথেষ্ট ভালো। মাঝে ইনজুরির কারণে অনেকগুলো ম্যাচ মিস করেছে। সার্বিক ফর্মের জন্য মুমিনুলকে নিচে রাখা। ব্যাক টু ব্যাক যে খেলোয়াড়গুলোকে পুলের মধ্যে রাখি, মুমিনুল কিন্তু আমাদের প্রথম পছন্দ। প্রথম টেস্টের জন্য বিবেচনায় আনিনি বলে যে মুমিনুল হকের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে, এমন কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই।’

দেশের মাটিতে মুমিনুলের গড় ঈর্ষণীয়। ৫৮.০৯ গড়ে রান করেছেন। কদিন আগে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে টাইগাররা চট্টগ্রামে যে অনুশীলন ম্যাচ খেলেছিলেন, সেখানেও সর্বোচ্চ ৭৩ রানের স্কোর খেলেছিলেন মুমিনুল। তাই এমন একজন ব্যাটসম্যানকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা নেওয়া মোটেও সহজ ছিল না নির্বাচকদের। মিনহাজুল বলেন, ‘সিদ্ধান্তটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমাদের কাছে ১৮ জন ভালো ক্রিকেটার আছে, প্রথম টেস্টের জন্য ১৪ জন বেছে নিয়েছি। একজনকে বাদ দিচ্ছি তার মানে এই নয় যে আমরা তাকে চোখের আড়াল করে দিচ্ছি। যাকে যখন টিমের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে দরকার হবে, অবশ্যই তাকে নেওয়া হবে।’

মুমিনুলের বাদ পড়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলতে নারাজ মিনহাজুল। তিনি বলেন, ‘এই টেস্টে বাদ পড়া দুর্ভাগ্যজনক বলতে পারেন না। কারণ ওর চেয়ে পারফরম্যান্সে দুজন ক্রিকেটার একটু ওপরের দিকে আছে। আমি যেটা বিশ্বাস করি একটা খেলোয়াড়কে সব সময় অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ওর পারফরম্যান্স বিবেচনা করে। একটা ব্যাটসম্যান যদি ধারাবাহিকভাবে চার-পাঁচ ম্যাচে রান না করে, তাহলে তার আত্মবিশ্বাসেও কিন্তু ঘাটতি থাকে। আমিও ব্যাটসম্যান ছিলাম, হাবিবুল বাশার সুমনও ব্যাটসম্যান ছিল। আমরা এসব জানি। আর দেশের মাটিতে চাপ থাকে অনেক  বেশি। এ জিনিসগুলো চিন্তা করে এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো একটি দলের বিপক্ষে খেলা। টিম ম্যানেজমেন্ট যেভাবে চায়, সেভাবে ১৪ জনের দল সাজানো হয়েছে। এজন্য মুমিনুল বাদ পড়েছে।’

বাংলাদেশ দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাকিবের সঙ্গে তার সেঞ্চুরিই বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে পৌঁছে দিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বলে সে টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞতা আমলে নেননি নির্বাচকরা। তারা বরং সব শেষ টেস্ট ম্যাচের কথা চিন্তা করেছেন। তা ছাড়া মাহমুদুল্লাহকে ছাড়াই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শততম টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। তাই মাহমুদুল্লাহকে বাদ দেওয়ার পেছনে কোনো ব্যাখ্যাও দাঁড় করাতে চান না মিনহাজুল, ‘সে তো সব শেষ টেস্টেও দলে ছিল না!’

দুই বছর পর ১৪ সদস্যের দলে ফিরেছেন নাসির হোসেন। ফিরেছেন পেসার শফিউল ইসলাম। নাসির সব শেষ খেলেছিলেন ২০১৫ সালে। তারপর সাদা পোশাকে আর মাঠে নামা হয়নি। তবে ঘরোয়া লিগে নিয়মিত রান করেছেন তিনি। নাসির ও শফিউল ছাড়া বাকি সব ক্রিকেটারই শেষ টেস্টের দলে ছিলেন।

সর্বশেষ খবর