বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

তিনে ইমরুল মুমিনুলের লড়াই

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তিনে ইমরুল মুমিনুলের লড়াই

মিরপুরে অনুশীলন শেষে ড্রেসিং রুমে ফিরছেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান মুমিনুল ও ইমরুল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রথমে দলেই ছিলেন না টেস্টে সবচেয়ে বেশি গড়ে রান করা ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। মিডিয়ার চাপে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দলে নেওয়া হলেও একাদশে কি জায়গা হবে ‘বাংলাদেশের ব্রাডম্যান’ খ্যাত এই ব্যাটসম্যানের?

ব্যাটিং অর্ডারে মুমিনুল ব্যাটিং করেন তিন নম্বর পজিশনে। কিন্তু একই পজিশনে ইমরুলকে খেলানোর কথা চিন্তা করছেন কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। তিনে ইমরুলের অবস্থান চূড়ান্তই ছিল। কিন্তু মুমিনুল ফিরে আসায় সৃষ্টি হয়ে মধুর এক সমস্যা। এখন এই দুজনের মধ্যে কাকে বেছে নেবেন টিম ম্যানেজমেন্ট! কোচও যেন  ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছেন।

ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী হিসেবে সৌম্য সরকারের অবস্থান সুদৃঢ়। ওয়ানডেতে সুবিধা করতে না পারলেও টেস্টে দারুণ ব্যাটিং করছেন তিনি। শেষ চার টেস্টে সৌম্য ওপেন করে চার হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। রান করেছেন ৩৭৮। তাই কোচ চাচ্ছেন না সৌম্যকে ব্যাটিং অর্ডারের নিচে নামিয়ে এনে তার ব্যাটিংয়ে ছন্দপতন ঘটাতে। আর তামিমের কথা ওপেনিং ছাড়া অন্য কোনো পজিশনে তো কল্পনাও করা যায় না। তাই ওপেনিংয়ে ইমরুলের জায়গা কোথায়? একাদশে থাকলে তিনেই খেলতে হবে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার এই ক্রিকেটারকে।

অথচ ওপেনিংয়ে ইমরুলের অসাধারণ রেকর্ড রয়েছে। তিন সেঞ্চুরির দুটিই এই পজিশনে। ঘরের মাঠে তামিমের সঙ্গে ৩১২ রানের জুটি গড়ে ইতিহাস গড়েছিলেন ইমরুল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খুলনা টেস্টের ওই পার্টনারশিপ এক সময় ছিল টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড জুটি। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরে সাকিব ও মুশফিক মিলে ৩৫৯ রানের জুটি করে সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। তবে ওপেনিংয়ে এখনো তামিম-ইমরুলের জুটিই সেরা!

ইমরুলের পছন্দের জায়গাও ওপেনিং। কিন্তু দলের প্রয়োজনে তাকে সেই জায়গাটা ছেড়ে দিতেই হচ্ছে। ইচ্ছা না থাকলেও খেলতে হবে তিন নম্বর পজিশনেই। কাল সংবাদ সম্মেলনে ইমরুল বলেন, ‘মানিয়ে নিতে হয়। তামিমকে যদি দেন, ও পারবে না। একটা সময় আমিও পারতাম না। তারপরও মানিয়ে নিতে হচ্ছে। দলের জন্য যেভাবে ভালো হয়, সেভাবেই খেলতে হয়।’

একজন ওপেনার হয়ে তিনে খেলা কতটা কঠিন? প্রশ্নে ইমরুলের উত্তর— আমি মনে করি, জাতীয় দলের হয়ে খেলাটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। তাই দলে সুযোগ পেয়েই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ব্যাটিংয়ের জায়গা নিয়ে নিজের একটা পছন্দ ঠিকই থাকে—তবে দল যেটা চাইবে সেটাই করতে হবে। দুই জায়গাতেই ব্যাটিং করতে আমি রাজি—ওপেনিং বা তিন নম্বর, যেখানেই হোক সমস্যা নেই।’

এদিকে অনেক সময় মুমিনুল চার নম্বরে ব্যাটিং করলেও এখন সেটা সম্ভব নয়। কেন না চারে এখন ব্যাটিং করছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম নিজে। পাঁচে সাকিব আল হাসান। ছয় ও সাতে লিটন দাস ও সাব্বির। লিটন দাসের জায়গায় নাসিরও ঢুকে যেতে পারেন। আটে মেহেদী হাসান মিরাজ।

তাই তিন নম্বর পজিশন ছাড়া ইমরুল ও মুমিনুলের আর কোনো জায়গা নেই। তাই এই জায়গাটা একজনকে ছেড়ে দিতে হবে। আর এই পজিশনে সুযোগ না পাওয়া মানে একাদশ থেকেই ছিটকে যেতে হবে। কিন্তু কাকে রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকতে হবে— ইমরুল নাকি মুমিনুলকে?

এক পজিশনে দুই ক্রিকেটারের লড়াইকে ঠিক ‘লড়াই’ হিসেবে দেখছেন না ইমরুল। তিনি বলেন, ‘সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকলে সেটা দলের জন্য ভালো। শুধু আমি নই, সব পজিশনে প্রতিযোগিতা থাকলে ম্যানেজমেন্ট সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়কে বেছে নিতে পারে।’

এদিকে মুমিনুলের দলে ফেরাকে স্বস্তিদায়ক মনে করছেন টাইগার দলপতি মুশফিকুর রহিম। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। দলের সব ক্রিকেটারই গুরুত্বপূর্ণ। সবাই চিন্তা করে যেন সেরা কম্বিনেশনটা পাওয়ার। হয়তো আল্লাহও চেয়েছিলেন, তাই সে ফেরার সুযোগ পেয়েছে। আমি আশা করি, সে সুযোগ পেলে তা যেন কাজে লাগায়।’ অধিনায়কের এমন মন্তব্যের পর কি একাদশে জায়গা পাওয়াটা ইমরুলের জন্য কঠিন হয়ে গেল না? তবে শেষ পর্যন্ত তিন নম্বরের জন্য টিম ম্যানেজমেন্ট কাকে বেছে নেবেন তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত।

সর্বশেষ খবর