বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই দিনে দুই তারকা ফুটবলারের বিদায়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দুই দিনে দুই তারকা ফুটবলারের বিদায়

এক দিনের ব্যবধানে দেশ হারাল দুই কৃতী ফুটবলারকে। শামসুর রহমান শামসু রবিবার রাজশাহীতে পুকুরে গোসল করার সময় ডুবে যান। পরে ডুবুরিরা তাকে উদ্ধার করলেও মৃত ঘোষণা করা হয়। বয়স একেবারে কম হয়নি, ৭৮ বছর। কিন্তু শামসু এভাবে সবাইকে ছেড়ে চলে  যাবেন ভাবাই যায় না। আইনুল হক রক্ষণভাগের খ্যাতনামা ফুটবলার ছিলেন। মাঠে লম্বা শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন বলে ভক্তরা তার নাম দিয়েছিলেন ডিআইটি। দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে সোমবার  চলে যান তিনি না ফেরার দেশে। শামসুকে বলা হতো লাকি ফুটবলার। শেষ মুহূর্তে তিনি যে কত গোল করেছেন তার হিসাব মেলানো মুশকিল। অন্যদিকে আইনুলের অবদানও ভোলবার নয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে অংশ নেন। অথচ তাকে মরতে হলো অবহেলায়। দীর্ঘদিন ফুসফুস ক্যান্সারে ভুগছিলেন। অভাবে সংসারে তার চিকিৎসাও সেভাবে হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা দিয়ে মরণব্যাধি রোগের চিকিৎসা কি চলে? সরকারের নীরবতা ক্রীড়ামোদীদের অবাক করেছে। ষাট দশকের মাঝামাঝি সময়ে শামসু ও শেষের দিকে আইনুল ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানে খেলা শুরু করেন। ওই সময় ঢাকার মাঠে মাকরানিদের দুর্দান্ত দাপট। সেরা একাদশে সুযোগ পাওয়াটা ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। তারপরও জাকারিয়া পিন্টু, জহিরের মতো খ্যাতনামা ডিফেন্ডারদের সঙ্গে আইনুল ও সাদাকালোর দুর্গ পাহারা দিতেন। অন্যদিকে সেরা একাদশে সুযোগ পেতে শামসুকে রীতিমতো লড়াই করতে হয়েছে। মুসা, তোরাব আলী, আলী নেওয়াজদের মতো আক্রমণভাগের খেলোয়াড় থাকার পরও শামসু ছিলেন মোহামেডানের অপরিহার্য ফুটবলার। ম্যাচ এখন ড্র বা দল হারার পথে সেই সময় জ্বলে উঠতেন শামসু। ১৯৬৯ সালের কথা লিগে ইপিআইডিসির বিপক্ষে ড্র করলেই মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন। অথচ এই ম্যাচে হারতে বসেছিলেন পিন্টুরা। শেষ চার মিনিটে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে নেমে শামসু যেন ম্যাজিক প্রদর্শন করলেন। তারই দুই গোলে হারা ম্যাচ জিতে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন। শামসুকে মোহামেডানের ঘরের ছেলে বলেই অনেকে চিনতেন। তিনিই কি না ১৯৭৪ সালে যোগ দেন দেশের আরেক জনপ্রিয় ক্লাব ঢাকা আবাহনীতে। সেবারই আবাহনী লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। মোহামেডানের বিপক্ষে তার গোলও আছে। ১৯৮০ সালের পর শামসুকে মাঠে আর দেখা যায়নি। তার ছেলে খালেদ মাসুদ পাইলট ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক। নিজে ছিলেন কৃতীমান ফুটবলার। ছেলে দেশের বিখ্যাত ক্রিকেটার। এমন কপাল কজনার জুটে। সেই শামসু সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ডিআইটি খ্যাত আইনুল। দুই দিনে দুই নক্ষত্রের  বিদায়। দেশ হারাল দুই কিংবদন্তিকে।

সর্বশেষ খবর