বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

অস্ট্রেলিয়াকে দেখিয়ে দিল বাংলাদেশ

মেজবাহ্-উল-হক

অস্ট্রেলিয়াকে দেখিয়ে দিল বাংলাদেশ

অস্ট্রেলিয়ার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকলেন তাইজুল। বিজয়ের আনন্দে মুহূর্তেই বুনো উল্লাসে মেতে উঠল টাইগাররা। অধিনায়ক মুশফিক তুলে নিলেন বিজয়ের স্মারক স্ট্যাম্প। বাদ গেলেন না অন্যরাও। মিরপুরের মতোই পুরো দেশ কাল উৎসবে ভেসেছে —রোহেত রাজীব

টেস্ট ক্রিকেটে বরাবরই আগ্রাসী দল অস্ট্রেলিয়া। পারফরম্যান্সে যেমন থাকে দাপট, তেমনি স্লেজিংয়েরও ওস্তাদ অসি ক্রিকেটাররা। দীর্ঘ পরিসরের এই ক্রিকেটে হার তারা সহ্য করতে পারেন না। অ্যাশেজ সিরিজ কিংবা ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোর বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে দেখা যায়, কথার লড়াই।  কিন্তু এই টেস্টে টাইগারদের আগ্রাসন দেখেছে অস্ট্রেলিয়া। পারফরম্যান্সের জবাব যেমন পারফরম্যান্স করেই দিয়েছেন টাইগাররা, তেমনি স্লেজিংয়ের জবাব স্লেজিং করেই দিয়েছে।

এই টেস্টে চার দিন লড়াই করেই ২০ রানের মধুর এক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। কথার লড়াইয়েও জিতেছে টাইগাররাই। জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে টাইগার দলপতি মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া বুঝেছে বাংলাদেশও কতটা আগ্রাসী হতে পারে। শুধু ব্যাট-বল না শরীরী ভাষাতেও ওরা সেটা টের পেয়েছে। আজ (গতকাল) যদি লক্ষ্য করে থাকেন দেখবেন, লাঞ্চের আগে ৬ মিনিট ছিল। তখন ম্যাক্সওয়েল প্রায় ৫ মিনিটই সময় নিচ্ছিল যেন ওই ওভারের পর আর কোনো ওভার না হয়। যেখানে অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করতে চায় তারা এমন ব্যাকফুটে চলে গেছে যে, তারা চাচ্ছে না যে আরেকটা ওভার খেলি। এটা তো অনেক বড় একটা বার্তা। এমনকি আমাদের টেলএন্ডার যারা ব্যাটিং করতে গেছে তাদের পর্যন্ত ওরা কথা বলেছে। শুধু সিনিয়ররা না জুনিয়রদেরও ওরা অনেক কথা বলেছে। ওরা জানে এই উইকেটে একটা-দুইটা রান কত গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, ওরা আমাদের জুনিয়রদের অনেক কথা বলেছে যা কি না আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। আমরা যে আগের জায়গায় নেই সেটা ওরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।’

অস্ট্রেলিয়া সব শেষ বাংলাদেশ সফরে এসেছিল সেই ২০০৬ সালে। এক যুগ পর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ। বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি ছিল ঐতিহাসিক। কিন্তু ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে টেস্টটিকে ঐতিহাসিক বলায় আপত্তি করেছিলেন অধিনায়ক মুশফিক। কিন্তু জয়ের পর তিনি নিজেই জানালেন এই ম্যাচ ঐতিহাসিক। মুশফিক বলেন, ‘এটা তো অনেক বড় একটা অর্জন। এখন বলতে পারি এই ম্যাচটা ঐতিহাসিক ছিল। আপনারা বলছিলেন, ১১ বছর পর খেলা। ম্যাচ কোনো দিন ঐতিহাসিক হয়?  ফলের কারণে হয়তো কোনো ম্যাচকে মনে রাখা যায়।’

গতকাল সকালে এগিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়াই। তাদের দরকার ছিল মাত্র ১৫৬ রান। হাতে ছিল আট উইকেট। দলের ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার ছিলেন অপরাজিত। তবে মুশফিক কখনোই জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস হারাননি। এমন কি শেষ মুহূর্তে যখন প্যাট কামিন্স মিরাজের এক ওভারে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ ক্লোজ করে ফেলেছিলেন তখনো মুশফিকের মনোবল ছিল দৃঢ়। টাইগার দলপতি বলেন, ‘সব সময় বিশ্বাস ছিল। ওদের দুই জন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ক্রিজে ছিল ওদের কাউকে যদি দ্রুত আউট করতে পারি। যদি দ্রুত আউট নাও করা যায় যে উইকেট ছিল তাতে নিয়মিত লাইনে হিট করতে পারলে একটা না একটা বল অড বিহেইভ করবেই। যা আমাদের ইনিংসে হয়েছে। এদিক থেকে আমাদের বিশ্বাস ছিল। একজন নতুন ব্যাটসম্যানের জন্য খেলা খুব কঠিন। আর সেটা ব্যাটসম্যান যতই রান করুক যে কোনো বলে সে আউট হতে পারে। আমাদের তিন জন উঁচু মানের স্পিনার ছিল, বিশ্বাস ছিল সুযোগ আসবেই। আমরা ফিল্ডার যারা আছি তারা যেন সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারি। শেষে কামিন্স যখন দুইটা ছয় মারল তখনো আমার বিশ্বাস ছিল। আউট হতে লাগে এক বল আর তখনো দরকার ২০ রান। অর্থাৎ আরও ২০টা স্কোরিং শট খেলতে হবে বা চেষ্টা করতে হবে। সে দিক থেকে বিশ্বাসটা ছিল। শুধু আমার না আমাদের পুরো দলের ভিতরে বিশ্বাস ছিল।’

এই জয়ে সিরিজে হারার সম্ভাবনা আর নেই। এখন পরের ম্যাচ ড্র করলেই সিরিজ নিশ্চিত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ চাচ্ছে সিরিজটা ২-০ হোক। প্রথম টেস্ট জয়ে টাইগারদের আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। মুশফিক বলেন, ‘এই জয়গুলো আমাদের মতো দলকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলে। এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলো সব সময়ই কাজে লাগে। আবার যখন এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বো আরও ভালোভাবে সামলাতে পারব আমরা। আমি মনে করি এটা অনেক বড় একটা উদাহরণ।’

বাংলাদেশ সব শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে তাদের মাটিতে। সেটা ছিল বাংলাদেশের শততম টেস্ট। ঘরের মাঠে সব শেষ ম্যাচে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। তবে ওই দুটি জয়কে ছাপিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাওয়া এই জয়। টেস্টের সেরা দলকে বলে কয়ে হারানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!

সর্বশেষ খবর