শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এমন সুযোগ আসবে কি

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

এমন সুযোগ আসবে কি

স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত অধরাই রয়ে গেল। সিরিজ জেতা হলো না টাইগারদের। টানটান উত্তেজনার টেস্টটি সমানতালে লড়েও হার মানে। ম্যাচ শেষে মাঠ ছাড়ার আগে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন মুশফিকরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম সিরিজ সেরার পুরস্কার পাওয়া ডেভিড ওয়ার্নারের পিঠ চাপড়ে বাহবা দিলেন। ওয়ার্নার হাসিমুখে বাহবা নিয়ে হাত মেলালেন। এই দৃশ্যটা কী বাংলাদেশের ক্রিকেটে পরিবর্তনের একটা মাইলপোস্ট হয়ে থাকতে পারে! এমন নয় যে আগে বাংলাদেশের কেউ কখনো কারও পিঠ চাপড়ে দেয়নি। কিন্তু ওরকম গৌরবের সঙ্গে, প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তার সামনে মাথা উঁচু করে কেউ কখনো এমনটা করেছে কি! বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে। হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকেও। কিন্তু মানে-গুণে আর ঐতিহ্যে অস্ট্রেলিয়া যে ভিন্ন মাত্রার! ডেভিড ওয়ার্নারও বর্তমান ক্রিকেট দুনিয়ায় অন্য উচ্চতার ক্রিকেটার। মুশফিকের কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার পর ওয়ার্নারের বিনীত ভাব তাই অনেক কিছুই প্রকাশ করে। এখন আর টাইগারদের পোষমানা মনে করে না অস্ট্রেলিয়া। ওরা এখন বন্য, হিংস্র আর শিকারের নেশায় বুঁদ।

‘অস্ট্রেলিয়া এবার আসার আগে থেকেই কিন্তু আমাদেরকে সমীহ করছিল। এটা আমাদের অনেক বড় প্রাপ্তি।’ গতকাল চট্টগ্রাম টেস্টে চতুর্থদিনের ৫ ওভার বাকি থাকতেই ৭ উইকেটের পরাজয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে এভাবেই বললেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। যে অস্ট্রেলিয়া কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে টিটকারি মেরেছে, কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে তারাই এখন বাংলাদেশের সঙ্গে বেশি বেশি টেস্ট খেলার আশা করে। অসি অধিনায়ক যেমন বলেছেন, ‘আশা করি আমাদের মধ্যে আরও অনেক ম্যাচ হবে।’ এবার হয়ত অস্ট্রেলিয়া নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশকে টেস্ট খেলার আমন্ত্রণ জানাবে। বহু বছর হয়ে গেল ওখানে টাইগাররা গর্জন করার সুযোগই পায়নি! সেই ২০০৩ সালের পর থেকে। মুশফিক জানালেন দুঃখের কথা। ধীরে ধীরে উন্নতি করছে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে। মাঝেমধ্যেই জয় পাচ্ছে। ড্রয়ের সুযোগ আসছে হরহামেশা। কিন্তু টেস্ট খেলার সুযোগ পেতে অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস!

ডেভিড ওয়ার্নারকে মুশফিকুর রহিমের সাধুবাদ দেওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। একদিকে বাংলাদেশ নিজেদেরই গড়া উইকেটে প্রতিপক্ষের সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে ওয়ার্নার সাত সমুদ্র তের নদীর ওপাড় থেকে এসে সম্পূর্ণ অপরিচিত উইকেটে বিশ্বসেরা স্পিন অ্যাটাকের বিরুদ্ধে টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি মারছেন। সদা চঞ্চল আর রানের ক্ষুধায় কাতর ওয়ার্নারের দুটি সেঞ্চুরি কী অসীম ধৈর্য্যের ফল, তা মুশফিক খুব ভালোই জানেন। তাহলে বাংলাদেশ কী শিখল এখান থেকে! ‘আমাদের ড্রয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু আমরা হারিয়েছি। আসলে আরও ভালো পরিকল্পনা প্রয়োজন। ধৈর্য্য ধরে খেলাটাও রপ্ত করতে হবে। ওরা কেমন খেলল, দেখুন না। আমরা তো স্ট্রেট বলে উইকেট বিলিয়েছি।’ অধিনায়ক মুশফিক অনেক কিছুর কথাই বললেন। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এখনো বাংলাদেশ দলটাকে টেস্টে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে। প্রচুর সুযোগ দিতে হবে। ‘আমাদের মিস ফিল্ডিং হয়েছে। স্লিপে ক্যাচ মিস হয়েছে। কিন্তু আমাদের তো আর স্লিপে দাঁড়ানোর মতো স্পেশালিস্ট কেউ নেই। অন্যদের দিকে দেখুন। ওরা কিন্তু স্লিপের জন্য বিশেষ কাউকেই দায়িত্ব দেয়।’ মুশফিক দাবি করেছেন, সময় দিলে বাংলাদেশেরও এমন স্পেশালিস্ট হতে পারে।

মুশফিক টানা ৩২ ম্যাচে ভিন্ন ভিন্ন দল নিয়ে খেলেছেন। কেউ দলে এসেছেন, কেউ বের হয়েছেন। এভাবে নিত্য নতুন পরিবর্তনের ফলে অনেকের মধ্যেই ভালো করার একটা ইচ্ছে থাকে। এতে চাপ তৈরি হয়। মুশফিক মনে করেন, সুযোগ দিতে হবে। তবেই ভালো করা সম্ভব হবে। সেসব তো ভবিষ্যতের ব্যাপার। অনেক সময়েরও প্রয়োজন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের সুযোগটা যে হারিয়ে গেল! এমন সুযোগ কী পাওয়া যাবে। চট্টগ্রাম টেস্টটা ড্রয়ের জন্য খেললে কী হতো না! ‘ড্র হলে তো ভালোই হতো। এই আক্ষেপ থেকেই যাবে। কিন্তু আমরা খুব বেশি যে ড্রয়ের সুযোগ পাই তা তো নয়। এ কারণেই শেখাটাও হয় না। ভুল করলেই না শিখব।’ মুশফিক দীর্ঘশ্বাস মোচন করলেন এভাবেই। ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়’ বাক্যটার মধ্যেই তো কেমন একটা আভিজাত্য রয়েছে! এ থেকে বঞ্চিত হলো বাংলাদেশ। মুশফিকের মতে, প্রথম ইনিংসটাই খারাপ হয়ে গেছে। তার মতে, উইকেটটা ফ্ল্যাটই ছিল। ওখানে আরও অন্তত ১০০ রান করা উচিত ছিল। কিন্তু টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় তা আর হয়ে উঠেনি। মুশফিকের আক্ষেপ এখানেই। ‘আহা! আমরা যদি আরেকটু দেখে-শুনে খেলতাম!’ তামিম ইকবাল যেমন এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হলেন। মুমিনুল স্পিন বলে টার্নের বিপরীতে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচের শিকার। এভাবে না খেললেও তো হতো! অবশ্য আক্ষেপ করলেও মুশফিক বলছেন, ‘এসব খেলারই অংশ।’ সান্ত্বনা খোঁজেন ভবিষ্যতে ভালো করার আশার মধ্যে। কিন্তু তারপরও এমন একটা সুযোগ আবার কবে আসবে, বলা কঠিন। বাংলাদেশ চট্টগ্রামে হেরেছে ৭ উইকেটে। ঢাকায় জিতেছে ২০ রানে। দুই ম্যাচের সিরিজ ড্র। এই নিয়ে চলতি বছর দুইটা ক্রিকেট পরাশক্তির সঙ্গে দুইটা টেস্ট সিরিজ ১-১ ড্র করল টাইগাররা। সুযোগ পেলে যে খুব শিগগিরই এই ব্যবধান বাড়বে, তাই দৃপ্ত কণ্ঠে বললেন মুশফিক। আক্ষেপের পরও তাই মুশফিকের মতোই ভক্তদের মনের আশার সুর বাজছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর