শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রতিপক্ষ এবার দক্ষিণ আফ্রিকা

আসিফ ইকবাল

প্রতিপক্ষ এবার দক্ষিণ আফ্রিকা

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রচণ্ড গরমে মাথা ঠাণ্ডা রেখে আঙ্গুলের ক্যারিশমায় জাদুকরী বোলিং করেছেন নাথান লিয়ন। সিরিজে পিছিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে উপহার দিয়েছেন অবিশ্বাস্য জয়। অথচ লিয়নের রেকর্ড গড়া পারফরম্যান্স এবং অস্ট্রেলিয়ার জয়কে আড়ালে ঠেলে দিয়েছে মুমিনুল বিতর্ক। কেন হারল দল, সেটার ব্যবচ্ছেদ করার চেয়েও গোটা দেশ ব্যস্ত মুমিনুলের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে। প্রথম ইনিংসে ৪ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন মুমিনুল। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে কেন ৮ নম্বরে পাঠানো হলো-এ নিয়ে শাপান্তর করা হচ্ছে কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহের। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক উত্তাল। বলা হচ্ছে, পরিকল্পনা করেই দেশের একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার (!) মুমিনুলের ক্যারিয়ার ঠাণ্ডা মাথায় ধ্বংস করছেন কোচ। সত্যিই কি তাই? তবে বিতর্ক যতই হোক, এটা সত্যি, ১৭ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সিরিজটাই খেলেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার মতো মহাপরাক্রমশালী দেশের বিপক্ষে ড্র করেছে সিরিজ। এখন প্রস্তুতি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের। যা দুয়ারে দাঁড়িয়ে। ১৮ সেপ্টেম্বর দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও দুটি টি-২০ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে যাচ্ছে টাইগাররা। বৈপরীত্য কন্ডিশন ও উইকেটে খেলা হবে বলে স্কোয়াডে পরিবর্তন আসবে একাধিক। তখনো হয়তো ফের তৈরি হবে বিতর্ক।  

সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিক, মেহেদী হাসান মিরাজরা স্বপ্নের ক্রিকেট খেলেন মিরপুরে। ফলও তুলে নেন ২০ রানে জয়ের হাসি হেসে। বিসিবিও উপহার দিতে কার্পণ্য করেনি। ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করতে মুহূর্তেই ২ কোটি টাকা বোনাস ঘোষণা করে। এমনটি বোধহয় গোটা ক্রিকেটবিশ্বে আর কোথাও হয় না। মিরপুরের জয়ে মুমিনুল খেলেননি। কোচের পরিকল্পনায় ছিলেন না। তখন সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয়নি কোচ কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টকে। চট্টগ্রামে হারের পর তুলাধোনা করা হচ্ছে। ব্যাটিং লাইন শক্তিশালী করতে আট ব্যাটসম্যান ও এক পেসার দিয়ে সাজানো হয় একাদশ। একই পরিকল্পনায় খেলেছে অস্ট্রেলিয়াও। শুধু অভিজ্ঞতা, স্কিল ও অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে ম্যাচটি বাংলাদেশের গ্রিপ থেকে বের করে নেয় সফরকারীরা। প্রথম ইনিংসে সমানতালে লড়েছেন মুশফিকরা। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে সুর, তাল, লয় হারিয়ে ফেলেছেন লিয়নের নীল দংশনে। অসি অফ স্পিনারের আঙ্গুল ধেয়ে আসা বলগুলো এতটাই বিষাক্ত ছিল, প্রতিটি ছোবলে নীল হয়ে পড়ছিল স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। শুধু তার ছোবল থেকে বাঁচতেই কোচ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন। প্রথম ইনিংসে চার নম্বরে ব্যাট করে ৩১ রানের ইনিংস খেলা মুমিনুলকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে পাঠান ৮ নম্বরে। চার নম্বরে পাঠান দুই বছর পর টেস্ট দলে ফেরা নাসির হোসেনকে। প্রথম ইনিংসে ৪৫ রান করা নাসির দ্বিতীয় ইনিংসে সাজঘরে ফেরেন শূন্য রানে। ফলে কোচের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। অথচ মুমিনুল ৮ নম্বরে নেমে খেলেন ২৯ রানের ইনিংস। মুমিনুলকে নিয়ে মিউজিক্যাল চেয়ারের এই বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি ক্রিকেটপ্রেমীরা। অথচ ২৩ টেস্টের ৪২ ইনিংসে এই প্রথম মুমিনুল খেললেন ৮ নম্বর পজিশনে। ২৩ টেস্টের ৪২ ইনিংসে ৪৬.০০ গড়ে রান করেছেন ১৭৪৮। ক্যারিয়ারে ৪ নম্বর পজিশনে ব্যাট করেছেন ১৮ বার। রান করেছেন ৮৭৯। চার সেঞ্চুরির তিনটিই এই পজিশনে। ৩ নম্বর পজিশনে ব্যাট করেছেন ২৩ বার। রান করেছেন ৮৪০। দেশের মাটিতে রান করেছেন ১৫ টেস্টে ১২৮০ এবং ঘরের বাইরে ৪৬৮। দেশের বাইরে খেলেছেন শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডে। একমাত্র নিউজিল্যান্ডেই বাউন্সে নড়বড়ে মনে হয়েছে মুমিনুলকে। সেই বিবেচনাতেই দক্ষিণ আফ্রিকার হার্ড, বাউন্সি ও গতির উইকেটের কতটা সফল হবেন মুমিনুল? শুধু মুমিনুল নন, বাংলাদেশকে তাদের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মুখে পড়তে হবে কোনো সন্দেহ নেই। সুদূর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকেই এই শঙ্কার কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ‘বাংলাদেশ খুবই ভালো ক্রিকেট খেলছে। দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছে। সেখানে ঘাসের উইকেটের পাশাপাশি, হার্ড, বাউন্স ও গতির উইকেটে খেলতে হবে। এজন্য স্কিলড হতে হবে ক্রিকেটারদের। আমি মনে করি কঠিন সিরিজ হবে বাংলাদেশের।’

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষ। কয়েক দিন বিশ্রামে থাকবেন ক্রিকেটাররা। এরপর আবার উড়ে যাবেন ব্যাট-বলের লড়াইয়ে মেতে উঠতে। আফ্রিকা সফরের স্কোয়াডে যে পরিবর্তন আসবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকছে না। সেখানকার উইকেটের বিবেচনায় পেস বিভাগকে সাজানো হবে নতুন করে। ফলে চারজন পেসার থাকবেন স্কোয়াডে। কমে যাবে স্পিনারের সংখ্যা। পরিবর্তন আসতে পারে উপরের সারির ব্যাটিং লাইনে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পরিবর্তনের কথাই বলেছেন, ‘দলে পরিবর্তন আসতে পারে। ফিরতে পারেন এনামুল হক বিজয়।’ শুধু এনামুল নন, ফিরতে পারেন আরও অনেকে। ছিটকে পড়তে হতে পারে ইমরুল কায়েস, নাসির হোসেন, তাইজুল ইসলামদের।

এখন শুধু অপেক্ষা স্কোয়াড ঘোষণার। আবার অপেক্ষা আরও একটি নতুন বিতর্কের। এবার সেই বিতর্কের নায়ক কে হবেন, সেটাই দেখার বিষয়।

সর্বশেষ খবর