শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভরসা এখন ছোটরাই

ফুটবলের দুর্দিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ভরসা এখন ছোটরাই

ফুটবলে করুণ হাল। জাতীয় দলের কী অবস্থা নতুন করে বলার নেই। এশিয়াকাপ প্রাক বাছাই পর্বে ভুটানের কাছে হেরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের বাইরে রয়েছে মামুনুলরা। সাফ চ্যাম্পিয়ন শিপ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ছাড়া সামনে জাতীয় দলের মাঠে নামার সম্ভাবনা নেই। তবে এই টুর্নামেন্ট যে কবে হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অবশ্য প্রীতিম্যাচে অংশ নিলে ভিন্ন কথা। ক্রিকেটে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ফুটবলে যে করুণ অবস্থা তাতে অনেকেই বলছেন, এ খেলা ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। কেউ কেউ আবার বলছেন, দেশের ফুটবল বেঁচে আছে লাইফ সাপোর্টে। এমন অবস্থায় বাফুফে কর্মকর্তাদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কথায় কথায় ইউরোপিয়ান ফুটবলের উদাহরণ দিলেও লজ্জাকর পারফরম্যান্সে দেশের ফুটবলের বারোটা বেজে গেছে প্রায়।

সালাউদ্দিনের ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে কারও সংশয় নেই। একবাক্যে সবাই স্বীকার করেন তার মতো খেলোয়াড় দেশে এখনো সৃষ্টি হয়নি। কোচ হিসেবেও তাকে সফল বলা যায়। কিন্তু ফুটবলের অভিভাবক হিসেবে দেশকে কী দিতে পেরেছেন? অথচ তিনিই একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে তিন মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালে ফুটবলে প্রথমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সালাউদ্দিন দেশের ফুটবলকে পাল্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ফুটবলপ্রেমীরা বিশ্বাসও করেছিলেন তার কথা। করবেই না কেন? তার মতো মেধাবী ফুটবলার দেশের ফুটবল জাগিয়ে তুলতে পারবেন এই ধারণা তো স্বাভাবিকই ছিল। প্রায় আট বছর ধরে সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতি। শুধু তিনি কেন, দেশের অধিকাংশ সাবেক নন্দিত ফুটবলার দীর্ঘ সময় ধরে বাফুফের দায়িত্বে আছেন। এ সময়ের মধ্যে হতাশা ছাড়া তারা কি কিছু দিতে পেরেছেন?

অন্ধকারের মধ্যে কিছুটা আলোর ঝিলিক দিচ্ছেন নারী ফুটবলাররা। বাংলাদেশের মেয়েরা ফুটবল খেলবে এক সময় তা ছিল অবিশ্বাস্য। কত বাধার না সম্মুখীন হয়েছিলেন মেয়েরা। সেই বাধা অতিক্রম করে দেশকে জয়ের উত্সবে ভাসাচ্ছেন নারীরা। এএফসি কাপ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে কৃষ্ণারা ৯-০ গোলে উত্তর কোরিয়ার কাছে হেরে গেছে। কাল হেরেছে জাপানের কাছে। অস্ট্রেলিয়ার কাছেও হারের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে তিরস্কারের কিছু নেই। কৃষ্ণারা বরং ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। ফুটবলের এই দুর্দিনেও তারা এশিয়ার সেরা আটে সুযোগ পেয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলছে। যা দেশের ফুটবলে নতুন ইতিহাসই বলা যায়।

শুধু কি তাই? পুরুষ জাতীয় দলের সাফ চ্যাম্পিয়ন শিপে সেমিফাইনাল খেলাটা যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তিন আসরেই গ্রুপ পর্ব খেলে বিদায় নিয়েছেন মামুনুল, এমিলিরা। সেখানে মেয়েরা কিনা ফাইনালে উঠে চমক দেখিয়েছে। সাবিনারা প্রতিপক্ষদের গোলের বন্যায় ভাসিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ফাইনালে দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপের ট্রফি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

তাহলে কি দেশের ফুটবল শুধুই মেয়েদের ওপর নির্ভর হয়ে থাকবে? না, কিছুটা আশার আলো জাগিয়ে রেখেছে ছোটরাই। জাতীয় দল ব্যর্থ হলেও অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৮ দলের পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো। ২০১৫ সালে সিলেটে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে। এবারও নেপালে গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত খেলে ১৫ বছরের কিশোররা। যে ভুটানের কাছে হেরে জাতীয় দল দেশকে লজ্জায় ডুবিয়েছিল, সেই ভুটান অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। গ্রুপ পর্ব ও তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ভুটানকে গোলের বন্যায় ভাসিয়ে প্রতিশোধ নেয় ছোটরাই।

ট্রফি হারিয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান দখল করে। কিন্তু কিশোর ফুটবলারদের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। কিশোররা ২০১৫ সালেও ঝলক দেখিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বাফুফে যদি বাছাই করে এদের জন্য বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করত উপকৃত হতো দেশের ফুটবলই। এবার ফয়সালরা নেপালে প্রমাণ দিয়েছে তারা কতটা ভয়ঙ্কর। কিন্তু বাফুফে এই কিশোরদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করছে কি?

১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ভুটানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলাদেশ এই আসরে অংশ নিচ্ছে। বড়দের সময় ফুরিয়ে গেছে এমন প্রমাণ মিলছে জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে। ছোটরাই এখন বাংলাদেশের ফুটবলের ভরসা।

সুতরাং এদের দিকেই নজর দিতে হবে। তা না হলে অন্ধকার থেকে বের করা যাবে না ফুটবলকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর