সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঝুলে আছে দুই চ্যাম্পিয়নের ভাগ্য

রাশেদুর রহমান

ঝুলে আছে দুই চ্যাম্পিয়নের ভাগ্য

১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক ম্যারাডোনা - ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী ইতালিয়ান অধিনায়ক ক্যানাভারো

চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণই করেনি। এরপর ১৯৫৮ সালে তারা বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব পাড়ি দিতে পারেনি। সেবার বাছাই পর্বে ইতালিকে লড়তে হয়েছিল পর্তুগাল ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে। ইতালি ও পর্তুগালকে হারিয়ে সেবার বিশ্বকাপ খেলেছিল উত্তর আয়ারল্যান্ড। এরপর থেকেই বিশ্বকাপে ধারাবাহিক ইতালি। কখনো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কখনো গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। কিন্তু বিশ্বকাপে উপস্থিত ছিল তারা বরাবর। তবে এবার ইতালির জন্য বিশ্বকাপ খেলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ঠিক আর্জেন্টিনারই মতো।

ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাই পর্বে সামনের দুই ম্যাচ আর্জেন্টিনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পেরু এবং ইকুয়েডরের বিপক্ষে জিতলে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পাবেন মেসিরা। বর্তমানে ২৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করে পাঁচ নম্বরে অবস্থান করছে আর্জেন্টিনা। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় পেরু চার নম্বরে। ছয় নম্বরে থাকা চিলির সংগ্রহ ২৩ পয়েন্ট। যে কোনো একটা ম্যাচ হারলেই বিশ্বকাপ অনিশ্চিত হয়ে যাবে মেসিদের। সেক্ষেত্রে সুযোগ বেড়ে যাবে চিলি এবং পেরুর। চিলি শেষ দুই ম্যাচে মুখোমুখি হবে ইকুয়েডর ও ব্রাজিলের। সানচেজরা দুটো ম্যাচই জয়ের ক্ষমতা রাখেন। অন্যদিকে পেরুর প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। দুটোই কঠিন ম্যাচ। তবে আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারলে পেরুর কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে চিলিরও সুযোগ বেড়ে যাবে। দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট পেলেও তারা প্লে-অফ খেলার সুযোগ পাবে। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে সর্বশেষ অনুপস্থিত ছিল ১৯৭০ সালে। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর কী আরও একবার আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপে অনুপস্থিত থাকতে হবে! তাও লিওনেল মেসিদের যুগে!

ইতালির জন্য সমীকরণ আর্জেন্টিনার চেয়ে কিছুটা সহজ। স্পেন যদি হাতে থাকা দুই ম্যাচের একটাও জিতে ইতালিকে খেলতে হবে প্লে-অফ রাউন্ড। বর্তমানে জি গ্রুপে ২২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে শীর্ষে অবস্থান করছে স্পেন। তাদের গোল ব্যবধান +২৯। অন্যদিকে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে থাকা ইতালির গোল ব্যবধান +১৯। প্লে-অফ পর্বটাও কঠিন হয়ে যেতে পারে ইতালির জন্য। বর্তমান ফিফা র‌্যাঙ্কিং বলছে, প্লে-অফ রাউন্ডে ইতালির দেখা হতে পারে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচদের সুইডেনের সঙ্গেও। আইসল্যান্ড, স্লোভাকিয়া কিংবা মন্টিনিগ্রোও হতে পারে ইতালির প্রতিপক্ষ। সুইডেন হলে বেশ কঠিনই হয়ে যাবে বুফনদের বিশ্বকাপ খেলা। সুইডেনের সঙ্গে ইতালির অতীত খুব একটা খারাপ নয়। ১২ বারের সাক্ষাতে ১০ বারই জিতেছে ইতালি। তবে ৬ ম্যাচে জয় পাওয়া সুইডেনের অবস্থানও খুব একটা মন্দ নয়। তাছাড়া বর্তমানে তাদের রয়েছে ইব্রাহিমোভিচের মতো একজন বিশ্বসেরা তারকা।

সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছাড়াও বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট দল নেদারল্যান্ডস এবার চূড়ান্ত পর্ব খেলতে পারছে না। এ গ্রুপে ফ্রান্স আর সুইডেনের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে ডাচদের। এই লড়াইয়েই পিছিয়ে পড়েছেন আরিয়েন রোবেনরা। ১৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা ফ্রান্স সরাসরি চূড়ান্ত পর্ব খেলার দৌড়ে এগিয়ে। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে থাকা সুইডেনের অবস্থানও ভালো। ১৩ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে থাকা নেদারল্যান্ডস এবার বেশ কঠিন অবস্থায়ই আছে। অবশ্য সুইডেনের সঙ্গে ম্যাচে জিততে পারলে ভাগ্য খুলে যেতে পারে তাদের। অবশ্য লুক্সেমবার্গের সঙ্গে সুইডেন জিতে গেলে ডাচদের আর কিছু করার থাকবে না।

বর্তমান সময়ে বিশ্বকাপের মূল আকর্ষণ নিঃসন্দেহে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল এবং নেইমারের ব্রাজিল। তিন তারকার মধ্যে যে কোনো একজনের অনুপস্থিতিতেও অনেকটা শ্রী হারাবে বিশ্বকাপ। কিন্তু ফিফা কিংবা ভক্তদের এক্ষেত্রে করার কিছুই নেই। এমনকি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকেও তো বাছাই পর্বের পরীক্ষাটা দিতে হয়েছে। আর্জেন্টিনা আর ইতালিই বা বাদ যাবে কেন! এই পরীক্ষায় পাস দিতে না পারলে রাশিয়ার টিকিটটাও আর কাটা হবে না মেসিদের। বুফনদেরও।

সর্বশেষ খবর