মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফুটবল ইতিহাসে সেরা জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফুটবল ইতিহাসে সেরা জয়

ফুটবলে এমন দৃশ্য ভুলতে বসেছিলেন ক্রীড়ামোদীরা। একের পর এক হারে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। কাল রীতিমতো ইতিহাস গড়ল কিশোররা। ৩ গোলে পিছিয়ে থেকেও ভারতকে হারিয়ে উল্লাসে মেতে উঠল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৮ দল —বাফুফে

ফুটবলে ছোটরাই এখন ভরসা। এ কথাটি ক্রীড়াঙ্গনে বেশি  বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। প্রমাণও মিলছে তার। জাতীয় দল যেখানে ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী সেখানে ছোটরাই মাঠে জ্বলে উঠছে। ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার নেপালে শিরোপার বদলে তৃতীয় স্থান দখল করলেও কিশোরদের নৈপুণ্য ছিল চোখে পড়ার মতো।

ক্রিকেটে বিজয়টা এখন স্বাভাবিক ঘটনা হলেও ফুটবলে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের জয় পাওয়াটা স্বপ্নে পরিণত হয়। সুখবর নেই দীর্ঘদিন ধরে। যতটুকু আশা ছোটরদের ঘিরে। সেই ছোটরাই বাংলাদেশকে অবিস্মরণীয় এক জয় উপহার দিল। গতকাল ভুটানের থিম্পুতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ ৪-৩ গোলে ভারতকে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে।

ফুটবলে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে পেরেই উঠছিল না। তাই প্রতিপক্ষ ভারত বলেই অনেকে ধরে নিয়েছিল রক্সির শিষ্যদের যাত্রা হবে হার দিয়েই। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে কোচ রক্সি টার্গেট সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছুই বলেননি। আসলে জয়ের প্রত্যাশা করবেন কীভাবে? কেননা প্রতিপক্ষ দলটা যে ভারত।

ফুটবলাররা জয়ের শপথ নিয়েই মাঠে নেমেছিল। তাহলে ফুটবল ইতিহাসে বাংলাদেশ এমন জয় পায় কীভাবে? এই সেই ভুটান যেখানে জাতীয় দল স্বাগতিকদের কাছে হেরে দেশকে লজ্জায় ডুবিয়েছিল। সেই ভুটানের মাটিতে নতুন এক ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশের কিশোররা। ফুটবলে এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে জাতীয় দলের হারের অনেক রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু ফুটবলের দুর্দিনে পিছিয়ে থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া অবিশ্বাস্যই বলা যায়।

অবিশ্বাস্য বা অকল্পনীয় যাই বলা হোক না কেন অনূর্ধ্ব-১৮ দল উদ্বোধনী ম্যাচেই ইতিহাস গড়ে ফেলে। বিশ্বাস করা যায় প্রথমার্ধে ৩ গোলে পিছিয়ে থেকেও ফেবারিট ভারতকে হারানো। সত্যি বলতে কি প্রথমার্ধে মাঠে বাংলাদেশকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। পুরো মাঠ ছিল ভারতের নিয়ন্ত্রণে। একের পর এক করে তিন গোল হজম। প্রথম ৪৫ মিনিটে এমন বেহাল অবস্থা থাকার পর কেউ কি বাংলাদেশের জয়ের আশা করতে পারে। বরং গোল খাওয়ার নতুন ইতিহাস গড়ে কিনা সেই শঙ্কাটাই ছিল। আসলে প্রথমার্ধে বাংলাদেশ গোল খেয়েছে ডিফেন্ডারদের ভুলে। প্রতিপক্ষের কাউকে সেভাবে মার্কিংয়ে রাখতে পারেনি। ভারত যেন হেসেখেলেই জালে বল পাঠাচ্ছিল।

যাক সব ভুল মুছে গেছে এই অবিস্মরণীয় জয়ে। সাকিব, মুশফিকদের টাইগার বলা হয়। কিন্তু কাল দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের কিশোররা রীতিমতো সিংহ রূপ ধারণ করে। রক্সির নির্দেশনায় পরিকল্পনা করে খেলতে থাকে জাফর, সুফিল ও রহমতরা। পুরো বাংলাদেশই আক্রমণে। ভেঙে পড়ে ভারতের ডিফেন্স লাইন। মনে হচ্ছিল ভারতের দুর্গে মেসি, রোনালদোরা তেড়ে আসছে। দুই গোল শোধের পরও ভারত হারবে বিশ্বাস হচ্ছিল না। বড় জোর ভাগ্যক্রমে ড্র করতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু সিংহদের ক্ষুধার নেশা যখন পেয়ে বসে তখন কি সামাল দেওয়া যায়? একে একে চার গোল করে ফুটবল ইতিহাসে সেরা জয় পেয়ে গেল বাংলাদেশ। জাফর আবদুল্লাহ ২ সুফিল ও রহমত ১টি করে গোল করে বাংলাদেশকে এই অবিশ্বাস্য জয় এনে দেয়।

আর এই জয়ই বাংলাদেশের ট্রফি জেতার আশা বাড়িয়ে দিল। কেননা শেষ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা নাম প্রত্যাহার করায় গ্রুপের বদলে টুর্নামেন্ট সরাসরি লিগ পদ্ধতিতে হচ্ছে। ভারতকে হারানোর পর বাংলাদেশ এখন শিরোপার আশা করতেই পারে। আগামীকাল মালদ্বীপ ও ২৫ সেপ্টেম্বর নেপালের বিপক্ষে লড়বে। মালদ্বীপ হয়তো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। স্বাগতিক হলেও ভুটানকে হারাবে আশা করা যায়। যত ভয় এখন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নেপালকে নিয়েই।

কোচ রক্সি এমন জয়ের পর আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। টেলিফোনে তিনি জানান বিশ্বাসই হচ্ছে না এমন জয়। আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। লক্ষ্য এখন একটাই শিরোপা। দলীয় ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু বলেন, ছেলেরা ম্যাজিক দেখিয়ে জয় পেয়েছে। আশা রাখি ট্রফি জিতেই আমরা দেশে ফিরব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর