শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবার ঘুম ভাঙবে কি বাফুফের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এবার ঘুম ভাঙবে কি বাফুফের

২৫ সেপ্টেম্বর নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ। গতকাল অনুশীলনও ছিল না। তাই ফুটবলাররা ভুটান শহর ঘুরে বেড়াচ্ছেন —বাফুফে

চোখ কি খুলছে বাফুফের নাকি জেগে জেগে ঘুমিয়ে দিন পার করবে। ক্রিকেটে বাংলাদেশ শুধুই প্রশংসার ভাসছে। কিন্তু ফুটবলে বড্ড সংকটাপন্ন অবস্থা। জাতীয় দল ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। এতটা খারাপ অবস্থা যে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল খেলাটা এখন স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এশিয়ান কাপ প্রাক-বাছাই পর্বে ভুটানের কাছে হেরে জাতীয় দল এখন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের বাইরে। আগামী এক বছরে কোনো শিডিউল পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। র‌্যাঙ্কিংয়ে নামতে নামতে এতটা বেহাল দশা যে কোনো সময় দুশো ছুঁয়ে ফেলতে পারে। জাতীয় দল ঘুরে দাঁড়াবে এই আশা ক্রীড়ামোদীরা ছেড়েই দিয়েছে।

বড়রা ব্যর্থ হলেও আশার প্রদীপটা জ্বালিয়ে রেখেছে ছোটরাই। মাঠে তার প্রমাণও মিলছে। ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। নেপালে এবার শিরোপার বদলে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। তবুও বাংলাদেশের কিশোরদের নৈপুণ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। জাতীয় দল ভুটানের কাছে হেরে দেশকে লজ্জায় ডুবালেও অনূর্ধ্ব-১৫ দল টুর্নামেন্টে দুবার ভুটানকে বিধ্বস্ত করেছে।

অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আগের আসরে সেমিফাইনালে হেরে বাংলাদেশ বিদায় নিয়েছিল। এবার থিম্পুতে শুরুতেই ইতিহাস গড়ে ফেলেছে। উদ্বোধনী ম্যাচে ফেবারিট ভারতের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বড় হারের শঙ্কাই ছিল। ভারত মানেই ম্যাচের আগেই জাতীয় দলের যেন কাঁপুনি ধরে যায়। সেই ভারতকে কিনা ৩ গোলে পিছিয়ে থেকেও ৪-৩ গোলে জিতে যায় বাংলাদেশের যুবারা। কি অবিশ্বাস্য ঘটনা। ফুটবলে বাংলাদেশের যে কোনো টুর্নামেন্টে সেরা জয়তো বটেই। ৩ গোলে পিছিয়ে থেকে জয় বিশ্ব ফুটবলে এমন ঘটনা খুবই কম ঘটেছে। মালদ্বীপের কথা ধরা যাক। এক সময়ে তারা মোহামেডান বা আবাহনীর সামনে দাঁড়াতেই পারত না। গোলের স্রোতে ভেসে যেত। এখন ঘটনা পুরোপুরি উল্টো। মালদ্বীপকে জাতীয় দল হারাবে তা ভাবাই যায় না। শেষ প্রস্তুতি ম্যাচেও ৫ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল মামুনুলরা। জুনিয়র সাফে মালদ্বীপের বিপক্ষে কি অসাধারণ ম্যাচটাই না খেলল জাফর ইকবালরা। ২-০ গোলে জিতেছে। কিন্তু যুবাদের নৈপুণ্য দেখে আশি দশকের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। এমন ছন্দময় ও গতিময় খেলা অনেক দিন পর চোখে পড়ল।

দুই ম্যাচ জেতার পর শিরোপার স্বপ্ন দেখতেই পারে যুবারা। বাকি আছে নেপাল ও ভুটানের বিপক্ষে লড়াই। এমন পারফরম্যান্সের পরও শিরোপা নাও জিততে পারে। ফুটবলে কখন কি ঘটে বলা মুশকিল। তীরে এসে তরী ডুবেও যায়। তাহলে কি ব্যর্থ বলা যাবে অনূর্ধ্ব-১৮ দলকে?

জানিনা বাফুফের কর্মকর্তারা কি ভাবছেন। প্রতিশ্রুতিতে তাদের জুড়ি নেই। কিন্তু ফুটবল উন্নয়নে তারা কোনো কর্মসূচিই দিতে পারছে না। ক্ষোভে বা অভিমানে অনেকে বলে ফেলছেন বাংলাদেশের ফুটবল লাইফ সার্পোটে বেঁচে আছে। আশার কথা এই কথাটি জাতীয় দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও ছোটরা এর বাইরে। তারাই এখন দেশের ফুটবলে আশা-ভরসার প্রতীক। তাদের কাজে লাগাতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নয়নের কথা বললে বাফুফে অর্থের দোহাই দেয়। আমলে ফুটবলে যে হাল তাতে স্পন্সররা এগিয়ে আসবে কোনো দুঃখে।

ক্রিকেটে স্পন্সর করতে প্রতিযোগিতার ধুম পড়ে যায়। ফুটবলে হাহাকার। ভ্যাগিস সাইফ পাওয়ারটেক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বলে পেশাদার লিগে স্পন্সর মিলেছে। তা না হলে বাফুফের কিছুই করার ছিল না। ক্লাবগুলোও ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য তারা অর্থ খরচ করছে বলে অন্তত লিগটা মাঠে নামছে।

মরা ফুটবলকে জাগিয়ে তুলছে ছোটরাই। এরাই আগামীর সালাউদ্দিন, কায়সার, আসলাম, সাব্বির ও মোনেম মুন্নাদের রূপ ধারণ করতে পারে। কিন্তু এদেরতো ভালোমতো তৈরি করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা চোখ খোলা রাখতে হবে বাফুফে কর্মকর্তাদের। অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৮ দলের যে পারফরম্যান্স এদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করলে স্পন্সর না মেলার কোনো কারণ নেই। অতীত ভুলে গিয়ে ছোটদের প্রতি মনোযোগী হলে ঘুমন্ত ফুটবল ঠিকই জেগে উঠবে।

সর্বশেষ খবর