রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকার বাইরে আয়োজনে বাধা কোথায়

চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ঢাকার বাইরে আয়োজনে বাধা কোথায়

ফুটবল ঢাকাতেই বন্দী। এই বিতর্কটা অনেক পুরনো। তারপরও গুরুত্ব দিচ্ছে না বাফুফে। ঢাকা প্রিমিয়ারের পাশাপাশি নিটল টাটা জাতীয় লিগের আয়োজন হতো। ঢাকার জনপ্রিয় দল ছাড়াও বিভিন্ন জেলার চ্যাম্পিয়ন দল নিয়ে এই আসর হতো। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় লিগ হতো বলে আসরের আকর্ষণ ছিলই অন্য রকম। এমন উদ্যোগে প্রশংসাও পেয়েছিল বাফুফে। এমিলি, মামুনুলদের মতো তারকার সন্ধান মিলে এই জাতীয় লিগ থেকেই। সত্যি বলতে কি ঢাকা প্রিমিয়ারের চেয়ে জাতীয় লিগ ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল অন্যরকম। ২০০৬ সালের পর এই জনপ্রিয় লিগ মাঠে গড়ায়নি। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ মাঠে গড়ানোর পর পুরোপুরি বিলুপ্ত ঘটেছে নিটল জাতীয় লিগের।

পেশাদার লিগ শুরুর পর অনেকে ভেবেছিলেন ঢাকার বাইরে ফুটবল ছড়িয়ে পড়বে। শুরুতে ঢাকা ছাড়াও সিলেট, চট্টগ্রাম ফেনীতে পেশাদার লিগ হয়। গোপালগঞ্জ, ময়মসিংহেও আয়োজন হয়। এবার শুধু ঢাকাতেই বন্দী। বাফুফের ঘোষণা ছিল চট্টগ্রামেও হবে। সংশয় রয়েছে ঢাকা ছাড়া আর কোথাও লিগ হবে কিনা। কেননা অধিকাংশ ক্লাব নাকি ঢাকার বাইরে খেলতে চায় না। আজব কথা। পেশাদার লিগের মূল শর্ত যেখানে ক্লাবগুলোর নিজস্ব ভেন্যু থাকতে হবে সেখানেও ঢাকাকেন্দ্রিক ফুটবল।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোনো ক্লাবেরই আলাদা স্টেডিয়াম নির্মাণ করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে উপায় ছিল ভেন্যু হিসেবে বিভিন্ন জেলার স্টেডিয়ামকে বেছে নেওয়া। ক্লাবগুলো আপত্তি তুলেছে আর বাফুফে তা মেনে নিয়েছে এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কি হতে পারে।

মূল পেশাদার লিগেরই যখন এই হাল? তখন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ ঢাকার বাইরে হবে তা স্বপ্নই বলা যায়। এই স্বপ্নটাই বাস্তবে রূপ দিতে চাচ্ছে বসুন্ধরা কিংস। এবারই প্রথম তারা এই লিগে খেলছে। চ্যাম্পিয়নের সম্ভাবনাও আছে। তবে দলের শুধু সাফল্য নয়, বসুন্ধরা কিংস চাচ্ছে ফুটবল উন্নয়নে এই লিগ ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দিতে। বসুন্ধরা কিংসের হোম ভেন্যু হিসেবে পছন্দ রংপুর। লিগ শুরুর আগে তারা বাফুফে কর্মকর্তাদের রংপুর স্টেডিয়াম পরিদর্শনও করান। একটা ক্লাব নিজ থেকে যখন এই পদক্ষেপ নিয়েছে বাফুফে এতে সন্তোষ প্রকাশ করে। সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী দৃঢ় কণ্ঠেই বলেছিলেন, প্রথম রাউন্ডে সম্ভব না হলে বসুন্ধরা কিংস দ্বিতীয় রাউন্ডে ভেন্যু হিসেবে রংপুরকে ব্যবহার করতে পারবে।

বসুন্ধরা কিংস প্রতিপক্ষ ক্লাবগুলোকে সব রকমের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়। যা দেশের ফুটবলে অবিশ্বাস্য ঘটনাই বলা যায়। এক সময়ে রংপুরের অনেক পরিচিত ফুটবলার ছিলেন। গোলরক্ষক শহিদুর রহমান সান্টু, কাজী সাত্তার, কাজী আনোয়ার, মোসাব্বের, কোহিনূর, মুন এরা রীতিমতো মাঠ কাঁপিয়েছেন। দীর্ঘদিন রংপুরে ফুটবল নেই বলে নতুন নতুন খেলোয়াড়ের সন্ধান মিলছে না।

চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ হলে ফুটবলে রংপুর জেগে উঠতে পারত। তরুণরা উৎসাহ পেত ফুটবলের প্রতি। অথচ সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে চাচ্ছে না বাফুফে। সালাম মুর্শেদী গতকাল জানান, ‘বসুন্ধরা কিংসের উদ্যোগটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। রংপুরে লিগ হোক আমিও মনে-প্রাণে চাই। সমস্যা হচ্ছে অন্য দলগুলোর আপত্তি। ৩/৪ দিন পরপর একটা দলের খেলা। তাই ক্লান্তির কারণে খেলতে চাচ্ছে না। আমি চেষ্টা চালাচ্ছি, কিন্তু দলগুলো খেলতে না চাইলে রংপুরে খেলায় কীভাবে? সালামের এই কথায় যুক্তি থাকলেও ফুটবলের উন্নয়নের স্বার্থে তো এই লিগ শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক রাখা কতটা যুক্তি সংগত তাও ভাববার সময় এসেছে। এবারের বিপিএল এখনো মাঠে গড়ায়নি। অথচ রংপুর রাইডার্স শক্তিশালী দল গড়ায় রংপুরে ক্রিকেট ঘিরে তরুণদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা শুরু হয়ে গেছে। ফুটবলে যখন বসুন্ধরা কিংস এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চাচ্ছে তখন বাফুফের হাতছাড়া করা কি ঠিক হবে?

সর্বশেষ খবর