সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

না ফেরার দেশে কিংবদন্তি মোতালেব

ক্রীড়া প্রতিবেদক

না ফেরার দেশে কিংবদন্তি মোতালেব

১৯৮৪ সালে সালাউদ্দিনের বিদায়ী ম্যাচে আবাহনী দলের সঙ্গে মোতালেব (লাল জার্সি পরিহিত)

বাংলাদেশে এখন মানসম্পন্ন ফুটবলারের বড় অভাব। বিশেষ করে গোলরক্ষক পজিশনে শূন্যতায় ভুগছে বলা যায়। মহসিন, কাননের পর আমিনুল ও বিপ্লব এখনও খেলছেন কিন্তু তাদের নৈপুণ্য চোখে পড়ার মতো নয়। জাতীয় দলের গোলরক্ষকরা যেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোল হজম করছে। ফুটবলে দুর্দশা এখানেই ফুটে উঠছে। অথচ এক সময়ে দেশে তারকা গোলরক্ষকের অভাব ছিল না। ভারতের ভাস্কর গাঙ্গুলীকে বলা হতো এশিয়ার সেরা অন্যতম গোলরক্ষক। বর্তমান প্রজন্মের ক্রীড়ামোদীদের বিশ্বাস করানো মুশকিল হবে যে পাকিস্তান আমলে শহিদুর রহমান শান্টুর খেলা দেখে ইন্দোনেশিয়া কোচ আবু নেছার বলেছিলেন শান্টুর মতো গোলরক্ষক তিনি আর দেখেননি। চুম্বুক বলা হতো শান্টুকে। সেই শান্টুর একক রাজত্বে ভাগ বসান মো. মোতালেব হোসেন। ইস্টঅ্যান্ড থেকে ঢাকা ফুটবলের ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। রহমতগঞ্জে যোগ দিয়েই সাড়া ফেলে দেন গোলরক্ষক মোতালেব। তখনও রহমতগঞ্জ মাঝারি মানের দল গড়তো। কিন্তু বড় বড় দলের ঠিকই পয়েন্ট নষ্ট করতো। সুলতান, স্কুটার গফুর, তসলিম, কালারা খেলতেন তখন রহমতগঞ্জে। কিন্তু একাই যেন খেলতেন মোতালেব। প্রতিপক্ষের কত নিশ্চিত গোল যে ঠেকিয়েছেন তা হিসাব মেলানো মুশকিল। সেই মোতালেব চলে গেলেন না ফেরার দেশে। গতকাল ভোরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজ বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। স্ত্রী, ১ ছেলে, ১ মেয়ে অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি। বাংলাদেশের ফুটবলে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। দীর্ঘ ফুটবল ক্যারিয়ারে অধিকাংশ সময়ে মোতালেব রহমতগঞ্জেই খেলেছেন। এই দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনিই। তার নেতৃত্বে ১৯৭৭ সালে রহমতগঞ্জ লিগে রানার্সআপ হয়। লিবারেশন কাপ টুর্নামেন্টেও রহমতগঞ্জ রানার্সআপ হয়।

১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে জনপ্রিয় ঢাকা আবাহনীর গোলরক্ষক ছিলেন শ্রীলঙ্কার লায়ন পিরিচ। এরপরই মোতালেব যোগ দেন আবাহনীতে। সেই সময়ে সালাউদ্দিন, নান্নু, অমলেশ, টুটুল, চুন্নু, খোরশেদ বাবুল, আনোয়ার, হেলালদের মতো তারকা ফুটবলার থাকলেও আবাহনী যোগ্য গোলরক্ষক খুঁজে পাচ্ছিল না। সেই শূন্যস্থান পূরণ হয় মোতালেব আগমনের পর। পারফরম্যান্সের বিচারে তিনিই তখন ছিলেন দেশের সেরা গোলরক্ষক। ১৯৮১, ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে আবাহনীর শিরোপার জয়ে সঙ্গী ছিলেন মোতালেব। পোস্টে মোতালেব ছিলেন বলেই আবাহনী নির্ভয়ে খেলতে পারত। শুধু গোলরক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন না। সামনে এগিয়ে এসে সতীর্থদের নির্দেশনাও দিতেন তিনি। অনেক গোলরক্ষকের দেখা মিলেছে মাঠে। কিন্তু শান্টু ও মোতালেবের নামটি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নিয়মিত না হলেও মোতালেব ১৯৭৬ সালে ঢাকা মোহামেডানের পক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে অংশ নেন।

১৯৮২ সালে মোতালেবের নেতৃত্বে জাতীয় দল দিল্লি এশিয়ান গেমসে অংশ নেয়। আরেক গোলরক্ষক মহসিনও দলে ছিলেন। নিয়মিত গোলরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন মোতালেবই। ওই আসরে শক্তিশালী মালয়েশিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে অসাধারণ খেলেছিলেন মোতালেব। ফুটবলের কোচিংয়ের ওপর ১৯৯৩ সালে মালয়েশিয়া এএফসি ইন্টারন্যাশনাল কোচেস ট্রেনিং। ১৯৯৫ সালে ব্রাজিলে ফিফা ইন্টারন্যাশনাল কোচেস ট্রেনিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে মোতালেবের।  এদিকে গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, মোতালেবের মৃত্যুতে গাজীপুরেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ১৯৫২ সালে গাজীপুর কাপাসিয়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। গতকাল বাদ জোহর কাপাসিয়ায় মোতালেবে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে ঢাকা আবাহনী ক্লাব ও পলাশী মসজিদে তৃতীয় জানাজার পর মোতালেবকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কীয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি এমপি, বাফুফে, ঢাকা আবাহনী, ঢাকা মোহামেডান, রহমতগঞ্জ, সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবার, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট কমিউনিটি বাংলাদেশ ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থা ও ক্রীড়া লেখক সমিতি মোতালেবের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর