বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্রিকেটে এমন দিন আসতেই পারে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রিকেটে এমন দিন আসতেই পারে

সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও ভাবেননি শেষ দিনে এভাবে ব্যাটিং হতে পারে। পচেফস্ট্রুম টেস্টসহ ক্রিকেটের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ম্যাশ

পচেফস্ট্রুম টেস্টে চার দিন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু পঞ্চম দিনে ব্যাটিং ধসের কারণে ৪১ রানের মধ্যে ৭ উইকেট পড়ে যায়। ৩৩৩ রানের বিশাল হার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এমন লজ্জাজনক হারে আহত হয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও ভাবেননি শেষ দিনে এভাবে ব্যাটিং হতে পারে। ভীষণ হতাশ তিনি। তবে ক্রিকেটে এমন দিন আসতেই পারে বলে মনে করেন ম্যাশ। তাই এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটারদের সমালোচনা না করে তাদেরকে ইতিবাচক কথা বলে অনুপ্রাণিত করা উচিৎ বলে মনে করেন টাইগার দলপতি। ম্যাশ বলেন, ‘আমাদেরকে বুঝতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ছেলেরা কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে! আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন খুবই কঠিন। তবে এটা ঠিক, দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে সেটা আমি, আপনি বা আমরা কেউ-ই আশা করিনি। এরকম হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে হয়ে গেছে। ক্রিকেটে কখনো কখনো এমন দিন আসে।’

মাশরাফি মনে করেন, এমন কঠিন পরিস্থিতিতে যারা কেবল সমালোচনা করেন তাদের ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করাই ঠিক নয়, ‘সরাসরি আমরা শুধু ফলের দিকে তাকাই। কিন্তু ছেলেরা যে চার দিন লড়াই করেছে সেটা কেউ দেখছি না। এটা ঠিক যে কিছু না কিছু ভুল না করলেও এমনভাবে ব্যাটিং ধস হতো না। আমরা যদি ঘরে বসে এটুকু অ্যানালাইসিস না করতে পারি যে দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন কি? আবার অস্ট্রেলিয়ার মতো দল বাংলাদেশে এসে চার দিনে হেরে যাচ্ছে— এটাও যদি বুঝতে না পারি এই বিষয়টা যদি অ্যানালাইসিস করতে না পারি তাহলে তো আমাদের ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করাই ঠিক না।’

পচেফস্ট্রুম টেস্টে বোলাররা একদমই সুবিধা করতে পারেননি। দুই ইনিংসে একবারও প্রোটিয়াদের অলআউট করতে পারেননি। অথচ প্রোটিয়া বোলারদের সামনে পাত্তাই পাননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। অন্যদিকে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের সামনে অসহায় ছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। এ সম্পর্কে মাশরাফির অভিমত, ‘টেস্ট ক্রিকেটের বোলিং নিয়ে সবসময়ই একটা শঙ্কা ছিল। টেস্টে দীর্ঘ সময় বোলিং করতে হবে। এরই মধ্যে আবার ব্রেক থ্রু দিতে হবে। সাম্প্রতিক আমাদের জয়গুলোর দিকে যদি তাকান, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ে কিন্তু স্পিনাররাই বড় ভূমিকা রেখেছে। টেস্টের বোলিং আসলে রাতারাতি পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়। দলের বাইরে যারা থাকবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে তাদের মন দিয়ে খেলতে হবে। সেটা দুই একটা ম্যাচ খেলেই বলার উপায় নেই আমি টেস্টে অনেক ভালো করবো— এটা টেস্ট, অত সহজ নয়। কারণ ব্যাটসম্যান আপনাকে সব সময়ই চ্যালেঞ্জ দেবে। তারপরেও অভিজ্ঞতা বাড়লে আমার মনে হয় এরা আরও ভালো করবে।’

বিশাল ব্যবধানে হেরে গেলেও সিরিজের প্রথম ম্যাচে উন্নতির কিছু নমুনাও দেখতে পেয়েছেন মাশরাফি, ‘এর আগে আমরা যে কয়বার গিয়েছি অর্থাৎ চার ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছি। এবার তা হয়নি। তাই খেলায় উন্নতি কিন্তু আছে। একদমই নেই তা কিন্তু নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে আমাদের চেয়ে অনেক ভালো ব্যাটিং রেকর্ড নিয়ে গিয়েও অন্য দলগুলোকেও সংগ্রাম করতে হয়। তবে ওখানে ক্রিকেটারদের মধ্যে যে মানসিকতা দেখছি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ওরা বলেছে টেস্ট ড্র হবে, তার মানে ওরা ড্রেসিং রুমে এটাই আলোচনা করেছে। এই মানসিকতা থাকলে আমি মনে করি খেলায় আরও উন্নতি হবে।’

বাংলাদেশ দল মনে মনে বাউন্সি উইকেটের যে ছক এঁকে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিল, প্রথম টেস্টে উইকেট কিন্তু ততটা বাউন্সি ছিল না। কিন্তু টাইগাররা সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেননি। তা না হলে এই ম্যাচে ড্র করা খুব কঠিন বিষয় ছিল না। চতুর্থ দিন শেষেও ড্র-র ভালো সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু শেষ দিনেই সব সম্ভাবনার ইতি ঘটে। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯০ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। মাশরাফি মনে করেন, এটা ছিল ক্রিকেটের একটা বাজে দিন। অনেক বড় দলও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। তাই সবাইকে ধৈর্য্য ধরার কথা বলেন মাশরাফি, ‘বাংলাদেশ প্রায় ১০ বছর পর টেস্টে ১০০র নিচে অলআউট হয়েছে। শুধু ১০০ রান করা নয়, আমাদের টার্গেট ছিল ৭ উইকেট নিয়ে আমরা দিনটা পার করে দেব। তবে এই বিষয়টা নিয়ে আপনার আমার চেয়েও যারা খেলেছে তারা বেশি হতাশ। এখানেই তো আমাদের শেষ নয়। সামনে আরেকটা ম্যাচ আছে। মনে রাখতে হবে, এই দলটাই কয়েকদিন আগে ইংল্যান্ড, শ্রীলংকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জিতিয়ে আমাদেরকে আনন্দ দিয়েছিল। আমি অনুভব করি, তাদেরকে এই মুহূর্তে কিভাবে মটিভেট করা যায় সে সব কথাই বলা উচিত। অনেকে হয়তো বলতে পারেন, আমি খেলোয়াড় বলে এমনটা বলছি, আসলে তা নয়। অন্য দল বিশেষ করে, উপমহাদেশের বাইরের দল যখন বাংলাদেশে আসছে তাদের ক্ষেত্রেও কিন্তু এমনটা ঘটছে এখন। তাই এ বিষয়টাও ভাবতে হবে।’

সর্বশেষ খবর