রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এক ইনিংসে চার সেঞ্চুরি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এক ইনিংসে চার সেঞ্চুরি

ব্লুমফন্টেইন টেস্টে প্রথম দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন এলগার ও মার্করাম। কাল সেঞ্চুরি করলেন আমলা ও ডু প্লেসিস। লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরি করে তারা ড্রেসিং রুমে ফিরছেন —এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক তারকা ক্রিকেটার সাঈদ আনোয়ারের বিদায়ী টেস্ট ছিল মুলতানে। ম্যাচটি ছিল পাকিস্তানিদের আবেগের। সাদা পোশাকে প্রিয় তারকার বিদায় বলে কথা!

২৯ আগস্ট, ২০০১ সাল। বাংলাদেশের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দূর্জয় টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেওয়ায় যেন মন খারাপ হয়ে যায় পাক-ক্রিকেট ভক্তদের! কিন্তু ওয়াশিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুসরা বাংলাদেশকে বাইশগজে বেশি সময় থীতু হতে দেননি। ৪১.১ ওভারেই অলআউট টাইগাররা। তারপর ব্যাট হাতে নামেন সাঈদ আনোয়ার। পাক-তারকা ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে যেন ‘টেস্ট ম্যাজাজ’ই ভুলে গেলেন। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করে ১০৪ বলে খেলেন ১০১ রানের ইনিংস। সাঈদ আনোয়ারের বিদায়ী ম্যাচে সেলিব্রেশন করতে প্রথম ইনিংসেই একে একে সেঞ্চুরি করে ফেলেন আরও চার ক্রিকেটার— তৌফিক ওমর, ইনজামাম-উল হক, মোহাম্মদ ইউসুফ ও আবদুর রাজ্জাক। ওই টেস্টে এক ইনিংসে হয়ে যায় পাঁচ সেঞ্চুরি। লজ্জার রেকর্ডে নাম লেখায় বাংলাদেশ দল।

টেস্টে এর চেয়ে বাজে সময় আর আসেনি বাংলাদেশের সামনে। এরপর ২০০৭ সালে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইনিংসে চার সেঞ্চুরি করেছিল ভারতের চার ব্যাটসম্যান—ওয়াসিম জাফর, দিনেশ কার্তিক, রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকার। একই বছর শ্রীলঙ্কাতে স্বাগতিকদের চার ব্যাটসম্যান—মাইকেল ভ্যান্ডর, মাহেলা জয়াবর্ধনে, প্রসন্ন জয়াবর্ধনে ও চামিন্ডা ভাস বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন।

গত ১০ বছরে একটু একটু করে টেস্টে বাংলাদেশের পারফম্যান্সের গ্রাফটা অনেক উপরে উঠে গেছে। বাংলাদেশ ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়েছে। সাম্প্রতিক শ্রীলঙ্কায় গিয়ে জিতেছে। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে খেলতে গিয়ে দাপট দেখিয়েছে। অথচ দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে সেই পুরনো বাংলাদেশ!

আবারও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইনিংসে চার সেঞ্চুরি। ব্লুমফন্টেইন টেস্টে একে একে সেঞ্চুরি করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার চার ব্যাটসম্যান— ডিন এলগার, এইডেন মার্করাম, হাশিম আমলা ও ফাফ ডু প্লেসিস। তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইনিংসে চার সেঞ্চুরি।

ব্যাটিংয়ে নেই কোনো ধার। নখদন্তহীন বোলিং। যেন টেস্ট খেলাই ভুলে গেছে বাংলাদেশ। অবশ্য এই ম্যাচে বাজে খেলার অন্যতম কারণ দলের সেরা দুই তারকা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের অনুপস্থিতি। এর বাইরেও একটি বড় কারণ আছে—সেটি হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট! দলের সাফল্য-ব্যর্থতার নেপথ্যে বড় ভূমিকা থাকে টিম ম্যানেজমেন্টের।

দক্ষিণ আফ্রিকায় কি টিম ম্যানেজমেন্ট তাদের সঠিক ভূমিকাটি পালন করছে? প্রথম দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মুশফিক যে আবেগঘন কথা বলেছেন, তাতে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার দায় টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর সম্পূর্ণ বর্তায়! মাঠের ভিতরে ফিল্ডিং সাজান অধিনায়ক। কিন্তু অধিনায়ককে যদি ফিল্ডিংয়ে দাঁড়াতে হয় টিম ম্যানেজমেন্টের নির্ধারণ করা জায়গায়—তাহলে কীভাবে হবে? এতে অধিনায়ক নিশ্চয় অপমানিত বোধ করবেন। আর তখন সেই প্রভাবটা পুরো দলের উপরই পড়ার কথা!

সাধারণত দলের অধিনায়করা ৩০ গজ বৃত্তের ভিতরই ফিল্ডিং করে থাকেন। এর বড় কারণ হচ্ছে—অধিনায়ক বোলারকে পরামর্শ দিতে পারেন। নিজের পরিকল্পনার কথা জানাতে পারেন। কিন্তু অধিনায়ক মুশফিক বেশির ভাগ সময়ই ফিল্ডিং করেছেন বৃত্তের বাইরে। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠতেই, মুশফিক বলেন, ‘আমি আসলে ফিল্ডিংয়ে খুব একটা ভালো নই। কোচরা চেয়েছেন আমি যেন বাইরে বাইরে ফিল্ডিং করি। আমি সামনে থাকলে আমার কাছ থেকে নাকি বেশি রান হয়ে যায় বা আমার হাতে ক্যাচ ট্যাচ এলে নাকি ধরার সম্ভাবনা থাকে না।’ মুশফিক যে অভিমান করেছেন সেটা তার বক্তব্যেই প্রকাশ পায়। কোথায় ক্যাপ্টেনকে উজ্জীবিত করবে টিম ম্যানেজমেন্ট, সেখানে উল্টো তাকে অপমান করে— কী লাভ এতে?

বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকার সমমানের নয় —এটা ঠিক। তাই বলে এমন বাজেভাবে হারার মতো দলও নয় এখন। দলে যে কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে তা খুব ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে। সব কিছুর মধ্যেই কেমন যেন সমন্বয়হীনতার ছাপ! আর এমন ‘সমন্বয়হীন’ অবস্থা চলতে থাকলে তার সুবিধাটা তো প্রতিপক্ষ নেবে— সেটাই স্বাভাবিক।

ছন্ন ছাড়া বাংলাদেশকে সামনে পেয়ে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৫৭৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর বাংলাদেশ কিনা প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে নেমেছে। ‘মিরাকল’ কিছু না ঘটাতে পারলে হয়তো তৃতীয় দিনেই টেস্টটি শেষ হয়ে যাবে।

 

দক্ষিণ আফ্রিকা : প্রথম ইনিংস ৫৭৩/৪ ডি

বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস, ১৪৭/১০ (৪২.৫ ওভার) (ইমরুল ২৬,লিটন দাস ৭০। রাবাদা ৫/৩৩, অলিভার ৩/৪০) ও দ্বিতীয় ইনিংস ৭/০ (১.২ ওভার)

সর্বশেষ খবর