শিরোনাম
রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাঠেই চিরবিদায় মাঠের মানুষের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মাঠেই চিরবিদায় মাঠের মানুষের

অমলেশ সেন

এক মাসের মধ্যে চার কিংবদন্তি ফুটবলার না-ফেরার দেশে চলে গেলেন। শামসু, আইনুলের পর গোলরক্ষক মোতালেব। গতকাল সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন অমলেশ সেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, ২ ছেলে, ১ মেয়েসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি। বয়স হয়েছিল, কিন্তু এভাবে চলে যাবেন কেউ ভাবতেই পারেননি। আজ সন্ধ্যায় ঢাকা আবাহনী গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হবে শেখ জামাল ধানমন্ডির বিপক্ষে। শিরোপার রেসে টিকে থাকতে দুই দলের জয় ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। মাঠে নামার আগে গতকাল বিকালে নিজেদের প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন আবাহনীর ফুটবলাররা। প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন অমলেশ। বড় ম্যাচের আগে প্রশিক্ষণ শেষে শিষ্যদের ব্রিফিং দিচ্ছিলেন। এ সময় অসুস্থবোধ করলে নিজ কক্ষে বিশ্রাম নিতে যান। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় অমলেশকে। কিন্তু পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই কিংবদন্তি ফুটবলার। তার বিদায়ে চিরতরে নিভে গেল ফুটবলের আরেকটি প্রদীপ।

কী অদ্ভুত মিল! মাঠের মানুষ মাঠেই নিলেন চিরবিদায়। বাংলাদেশের ফুটবলে অমলেশের অবদান সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। বগুড়ায় জন্ম নেওয়া অমলেশের ঢাকা ফুটবলে ক্যারিয়ার শুরু ফায়ার সার্ভিস দলের হয়ে। ১৯৭০ সালে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানে যোগ দেন অমলেশ। ১৯৭২ সালে গোলাম সারোয়ার টিপু, কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে অমলেশও যোগ দেন নবাগত ঢাকা আবাহনীতে। এরপর দীর্ঘ এক যুগ এই দলের হয়ে খেলেই ফুটবল ক্যারিয়ারে ইতি টানেন। আবাহনীর ছেলে বলে ক্রীড়াঙ্গনে অমলেশের পরিচয় ছিল। আবাহনীতে খেলেই তিনি তারকা খ্যাতি পান। ১৯৭৬ সালে হন জনপ্রিয় এই দলটির অধিনায়ক। তার নেতৃত্বে সে বছর লিগে আবাহনী রানার্স-আপ হয়। ১৯৭৩ সালে জাতীয় দলে তার অভিষেক ঘটে। খেলেন মারদেকা কাপ, কিংস কাপ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কাপসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। মধ্যমাঠে তার মতো সেরা খেলোয়াড় এখনো সৃষ্টি হয়নি। বিশেষ করে মধ্যমাঠে অমলেশ-খোরশেদ বাবুলের জুটি এখনো চোখে ভাসে। নিজে গোল করেছেন, সতীর্থদের গোল করানোর ক্ষেত্রে তার জুড়ি ছিল না। খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানলেও ফুটবলের মায়া ছাড়তে পারেননি অমলেশ। ধানমন্ডি ক্লাব থেকেই কোচিং ক্যারিয়ার শুরু। এরপর দায়িত্ব নেন আবাহনীর। তার প্রশিক্ষণে আবাহনী অসংখ্য ট্রফি জিতেছে। আসলে আবাহনীর প্রতি তার একটা মায়া জন্মে যায়। পেশাদার লিগে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। হ্যাটট্রিক শিরোপা আসে অমলেশের প্রশিক্ষণেই। পরীক্ষিত কোচ হওয়া সত্ত্বেও তাকে কখনো জাতীয় দলের কোচ করা হয়নি। দেশের ফুটবলে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। পেয়েছেন অসংখ্য সংগঠনের পুরস্কার। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অমলেশের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নেন। ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার নবাব মনসুর আলী খান পতৌদি অমলেশের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হন। সত্তর দশকেই তিনি কলকাতা লিগে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলে খেলার অফার পান। কিন্তু দেশের টানে তিনি ঢাকা লিগ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। অমলেশের মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, ঢাকা আবাহনী, ঢাকা মোহামেডান, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট কমিউনিটি, বাংলাদেশ ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থা, বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি, সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারসহ বিভিন্ন সংগঠন অমলেশের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে।

অমলেশের লাশ শমরিতা হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আজ সকালে আবাহনী ক্লাবে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর সবুজবাগ শ্মশানঘাটে অমলেশের শেষকৃত্যানুষ্ঠান হবে।

সর্বশেষ খবর