সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হঠাৎ ছন্দপতন টাইগারদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

হঠাৎ ছন্দপতন টাইগারদের

অলিভারের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠে বসে পড়েন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম —এএফপি

দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছেই দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘শুভ সকাল নেলসন ম্যান্ডেলা’ স্ট্যাটাস দিয়ে জানান দেন, বাংলাদেশ প্রস্তুত ওয়ানডে সিরিজের জন্য। মাশরাফি, সাকিবরা যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রাখেন, তখন ইনিংস হারের লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে লড়াই করছিলেন মুশফিকরা। কিন্তু টাইগারদের জানবাজি লড়াই শেষ পর্যন্ত আর লড়াইয়ে থাকেনি। রূপ নেয় অসহায় আত্মসমর্পণে। ব্যাটসম্যানদের টানা ব্যর্থতায় পাঁচদিনের টেস্ট শেষ হয়ে যায় মাত্র আড়াইদিনে! প্রিয় দলের এমন ‘টেস্ট ক্রিকেটীয়’ রূপ ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখেননি বহুদিন। যে ক্রিকেটাররা গত তিন বছরে শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তিগুলোকে হারিয়েছে অবলীলায়। পচেফস্ট্রুুম ও ব্লুমফন্টেইনে সেই মুশফিকদের ব্যাটিং ও বোলিংয়ে হঠাৎ ছন্দপতন  দেখে মনে হয়েছে শিশুসুলভ মানসিকতার ক্রিকেটার যেন তারা! উর্ধ্বমুখী গ্রাফের এমন অধঃগতির ব্যাখ্যা খুঁজতে এরই মধ্যে কাটাছেঁড়ায় বসে পড়েছেন সবাই। অবশ্য মিডিয়ার মুখোমুখিতে টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে পরিষ্কার হয়েছে গোটা দল এখন ছন্নছাড়া পথিক যেন! নানা প্রশ্নের জন্ম দেওয়া সিরিজটি স্পষ্ট করেছে, বলির পাঁঠার হওয়ার পথে মুশফিক! এমন লজ্জাজনক ফলের হাত থেকে বাঁচতে টিম ম্যানেজমেন্ট হয় মুশফিককে অধিনায়ক থেকে বাদ দিচ্ছে, না হয় চাপের মুখে নিজেই নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে যাচ্ছেন মুশফিক। শুধু ঘোষণার অপেক্ষা। অনেকে আবার দলে ভাঙনের গন্ধও খুঁজে পাচ্ছেন। সত্যিটা কি? টেস্ট সিরিজের ব্যর্থতা ছাড়িয়ে মাদিবার দেশ, ম্যান্ডেলার দেশে পৌঁছে মাশরাফি কি ওয়ানডে সিরিজে নতুন বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানালেন? 

পচেফস্ট্রুমে ৩৩৩ রানে হারলেও লড়েছিল পাঁচদিন। এবার ব্লুমফন্টেইনে আত্মসমর্পণ মাত্র আড়াই দিনে। ইনিংস ও ২৫৪ রানে হার। এমন হার কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না দেশবাসী। কিন্তু সব কিছু ভুলে প্রিয় দলে কোন্দলের গন্ধই খুঁজে বেড়াচ্ছেন এখন। কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে ও টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কি হয়েছে মুশফিকের? টেস্টের প্রথম দিন অধিনায়ক কেন বলবেন, টিম ম্যানেজমেন্টের ইচ্ছায় দূরে ফিল্ডিং করতে হয়েছে। কেন বলবেন, টস না জেতাই উচিত ছিল। মিডিয়ার মুখোমুখিতে এমন বক্তব্যই পরিষ্কার  করে দিয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্টের স্বেচ্ছাচারিতা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি মুশফিক। কোচের নগ্ন হস্তক্ষেপ দলে বিভেদের সৃষ্টি করেছে। আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছে। অধিনায়ক তার স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে দল পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন চূড়ান্তভাবে।

সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, সাব্বির, তাসকিন, মুস্তাফিজ, শফিউল, রুবেলরা ব্যাটিং ও বোলিং করে নিজেদের এতটাই হাস্যস্পদে পরিণত করেছেন যে, টিম ম্যানেজমেন্টের হস্তক্ষেপের বিষয় অনেক সময় আড়ালে পড়ে গেছে। টাইগার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, উইকেট বোলিং স্বর্গ। বোলিংয়ের সময় মনে হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ। টাইগারদের পারফরম্যান্স এমন হতচ্ছিরি অবস্থা গোটা সিরিজে। কাগিসো রাবাদা, অলিভার, মরনে মরকেলদের বাউন্সার, সুইং ও গতির কাছে মুশফিকদের অসহায়ত্ব প্রমাণ করেছে, ঘরের বাইরে টেস্ট খেলার সামর্থ্য এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। আবার তাসকিন, মুস্তাফিজ, রুবেলদের বোলিং দেখে মনে হয়েছে, তারা এখনো শিখছেন। উইকেটে কোথায় বল ফেলতে হবে, তারা শিখেননি। এসব টিম ম্যানেজমেন্ট কি শিখিয়ে  দেবেন?

টিম ম্যানেজমেন্ট কিছু শেখাবে না ঠিক। কিন্তু এটা সত্যি, হাতুরাসিংহে কোচ হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেটের সৃষ্টি হয়েছে নানা সমস্যার। ২০১৪ সালে জুনে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার ইচ্ছাতেই ওয়ানডে অধিনায়কত্ব হারান মুশফিক। মাশরাফির হাতে তুলে দেওয়া হয় ওয়ানডে ও টি-২০ নেতৃত্ব। আবার গত বছর শ্রীলঙ্কা সফরে কোচের ইচ্ছার কাছে হেরেই টি-২০ থেকে অবসর নেন মাশরাফি। শুধু তাই নয়, কোচের ইচ্ছাতে টেস্ট একাদশে সুযোগ পেয়েছেন মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ। আবার তাদের ছুড়েও ফেলা হয়েছে তার ইচ্ছাতেই। কোচ এমন সব সিদ্ধান্তকে আবার সমর্থন দিয়েছে বিসিবি। তাই ক্রিকেটাররা হয়ে পড়েছেন কোচের হাতের পুতুল। কারও কিছু বলার নেই। বললেই কচুকাটা! দল থেকে বাদ পড়ার ভয়ে শঙ্কিত থাকেন ক্রিকেটারদের অধিকাংশই। কারণ, সাফল্য এনে দিয়েছেন কোচ। তাই তার পোয়াবারো। বিসিবিও কিছু বলে না। কিন্তু এতে করে ক্রিকেটরই ক্ষতি হচ্ছে প্রকারান্তরে। কারণ, ক্রিকেটাররা কেউই স্বস্তিতে নেই। চাপের মুখে ক্রিকেট খেলছেন। ফলও পাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে বিসিবিকেই হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং সেটা দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে। ব্যক্তিস্বার্থে নয়। মুশফিক যদি নেতৃত্ব ছেড়ে দেন, তাহলে পরবর্তী অধিনায়ক কে? সহ অধিনায়ক তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান না, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ? কোচের চাপে খোলশে পুড়ে গেলেও মুশফিক কিন্তু সফল টেস্ট অধিনায়ক। বাংলাদেশ ১০৪ টেস্টে যে ১০টিতে জয় পেয়েছে, তার ৭টিই কিন্তু এসেছে মুশফিকের নেতৃত্বে। জিম্বাবুয়েকে ৪টি, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১টি করে এই সাত জয় কিন্তু তার নেতৃত্বেই। সুতরাং মুশফিকের বিদায় হঠাৎ করে উল্টো পথে হাঁটা টেস্ট ক্রিকেটাকে আবার সঠিক পথে টেনে আনবে না।

দ. আফ্রিকা : প্রথম ইনিংস ৫৭৩/৪ ডিক্লে

বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস ১৪৭/১০, দ্বিতীয় ইনিংস ১৭২/১০

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর