মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিজেদের সেরাটাই খেলতে চান জিমিরা

রাশেদুর রহমান

নিজেদের সেরাটাই খেলতে চান জিমিরা

রাসেল মাহমুদ জিমি

বাংলাদেশ হকি দলের অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমির মুখে ঝলমলে হাসি। আত্মবিশ্বাসের স্ফুরণ চোখে-মুখে। পাশেই বসে থাকা পাকিস্তানি অধিনায়ক মুহাম্মদ ইরফানের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেন ক্ষণে ক্ষণে। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের শরীরী ভাষা বোঝার চেষ্টা করছিলেন তিনি! গতকাল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এশিয়া কাপ হকির ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আট অধিনায়কই। তবে জিমির মুখোচ্ছবি ছিল সবার চেয়ে ভিন্ন। এর অবশ্য যথেষ্ট কারণও ছিল। ৩২ বছর পর প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ হকির আসর বসছে ঢাকায়। তিন দশক আগের সেই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই যাত্রা করবেন জিমিরা। বাংলাদেশ হকি দলের অধিনায়কের মুখে হাসির কারণ অবশ্য এটাও নয়। ক্রিকেটে মাশরাফি-মুশফিকরা প্রায়ই ভক্তদের দুর্দান্ত জয় উপহার দিচ্ছেন। দেশবাসীকে ভাসিয়ে দিচ্ছেন আনন্দের বন্যায়। অন্যদিকে ফুটবল আর হকির অবস্থা মৃতপ্রায়। অবশ্য হকিতে নব জাগরণের গান গাইছেন জিমিরা। এই তো দুই দিন আগে জাপানের মতো প্রবল প্রতিপক্ষকে প্রস্তুতি ম্যাচে হারিয়েছেন তারা। রাসেল মাহমুদ জিমি বলছেন, ‘দীর্ঘদিন পর আমাদের এখানে এশিয়া কাপের আসর হচ্ছে। এটা সত্যিই দারুণ আনন্দের। নিজেদের মাটিতে খেলতে পারার গর্ব অন্যরকম।’ চেনা টার্ফ, চেনা দর্শক। পুরো আবহটাই জিমিদের অনুকূলে সাজানো। তারপরও প্রতিপক্ষের কথা বিবেচনা করলে কিছুটা ভয় তো লাগেই। একদিকে বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে থাকা ভারত। পাকিস্তান আছে ১৪ নম্বরে। জাপান ১৭ তে। ৩৪ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের জন্য তো গ্রুপটা কঠিনই। কিন্তু দুরন্ত সাহসে ভর করে আট অধিনায়কের সামনে জিমি বলেন দিলেন, ‘আমরা খেলার আগে কোন ম্যাচেই হারব না।’ বাংলায় বলা জিমির কথাগুলো কেউ ইংলিশে অনুবাদ করে প্রতিপক্ষদের শোনালে বড় ভালো হতো! প্রথম প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। তারপর যথাক্রমে ভারত ও জাপান। তিন প্রবল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পরিকল্পনটা খুবই সহজ-সরল। জিমি ভরা সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করব। মন প্রাণ উজাড় করে খেলব।’ দীর্ঘদিনের প্রস্তুতিটা কেমন কাজে লাগবে তা কেবল মাঠেই প্রমাণ হতে পারে। তবে জাপানকে প্রস্তুতি ম্যাচে হারিয়ে কিছুটা প্রমাণ কী দিয়ে রাখলেন জিমিরা! বাংলাদেশ হকি দলের অধিনায়ক কেবল জানালেন, ‘আমরা পূর্ণ প্রস্তুত। দলের সবাই মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছে। নিজেদের সেরাটাই দিতে চায় জিমিরা। দেওয়ার জন্য সবাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’

হকিতে বাংলাদেশের সাফল্য বলতে গেলে তেমন কিছুই নেই। ২০১৫ সালে যুব এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার কথাই কেবল বলা যায়। সেবার আশরাফুল ইসলামরা ভারতের কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয়েছিলেন। অবশ্য হকিতে বড় কোনো অর্জন না থাকলেও এক সময়ের সেরা দল পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৮৫ সালে কঠিন লড়াই করেছিলেন জুম্মন লুসাই-চাকলাদাররা। শেষ সময়ের গোলে হেরেছিলেন মাত্র ১-০ গোলে। অথচ এই পাকিস্তানের কাছেই ১৯৭৮ সালের এশিয়ান গেমসে ১৭ গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। সেসব এখন বহু দূরের অতীত বলে মনে হয়। ফুটবলের মতোই হকির দিকে তাকিয়ে গভীর নিঃশ্বাস ফেলতেন ভক্তরা। তবে দিন বদলে গেছে অনেক। জিমিদের মধ্যে এক ধরনের জ্বলন্ত আগুন আছে। কোচ মাহবুব হারুন একটা দুর্দান্ত দল গড়ে তুলেছেন। ফেডারেশনের নিবিড় পরিচর্যায় নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠছে হকিতে। এই নতুন প্রজন্মের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ‘হিরো এশিয়া কাপ হকি’। কেমন করবে দল, এই প্রশ্ন উঠার আগে প্রতিপক্ষের দিকে নজর দিতেই হয়। এশিয়া কাপে কোনো ছোট দল নেই। কথাটা বললেন টুর্নামেন্টের অংশীদার ভারত আর পাকিস্তানের অধিনায়কও। এখানে প্রতিটা দলকেই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে ভালো করার জন্য। এর কারণ! ভারতীয় অধিনায়ক মনপ্রিত সিং ব্যাখ্যা করলেন এভাবে—হকিতে একটা সেকেন্ডই যথেষ্ট ম্যাচ বদলে যাওয়ার জন্য। কথাটা সত্যি। সেই বদলে যাওয়া সেকেন্ডটা বাংলাদেশের পক্ষেই থাক, ভক্তরা এখন কেবল তারই কামনা করতে পারেন।

সর্বশেষ খবর