বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অভিজ্ঞতার কাছেই হারল জিমিরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

অভিজ্ঞতার কাছেই হারল জিমিরা

শুরুতে ভালোই খেলছিল বাংলাদেশ। গোল করার সুযোগও হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ফিটনেস ধরে না রাখায় উদ্বোধনী ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হার মানতে হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ম্যাচ শুরুর আগে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। ফিরে গিয়েছিল ৩২ বছর আগে, ১৯৮৫ সালে। দ্বিতীয় এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা পারফরম্যান্স। ওই ম্যাচের ফলকে আত্মবিশ্বাসের টনিক হিসেবে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন জিমিরা। কিন্তু স্পিড, স্কিল ও স্ট্যামিনার খেলা হকিতে পাকিস্তান বরাবরই বিশ্বসেরা, সেই পাকিস্তানের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। গুনে গুনে সাত গোল খেয়েছে। আবু মাহমুদ, শাকিল ভাটদের গতির কাছে অসহায় হয়ে পড়েন জিমিরা। এশিয়া কাপের ১০ আসরে নিজেদের সূচনা ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে জিমিরা খেলবেন ভারতের বিপক্ষে।

এশিয়া কাপের জন্য নতুন সাজে সেজেছে মওলানা ভাষানী হকি স্টেডিয়াম। নীল টার্ফ ছাড়াও ফ্লাড লাইটের আলোয় আলোকিত হয়েছে দেশের একমাত্র হকি স্টেডিয়ামটি। দর্শক, খেলার সুবিধার্থে লেগেছে বিশাল জায়ান্ট স্ক্রিন। ঘরের মাঠে খেলা। পরিচিত পরিবেশ এবং নিজেদের সমর্থক এমন সুবিধা নিয়ে খেলতে নামেন জিমিরা। চার কোয়ার্টারের প্রথমটি কোনোরকমে ঠেকিয়ে রাখে বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় কোয়ার্টার শুরুর পর থেকেই ম্যাচের চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। পাকিস্তানের গতি, স্কিলের সঙ্গে কোনোভাবেই পেড়ে উঠছিল না। আক্রমণের নহর বইয়ে বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে শেষ তিন কোয়ার্টারে তুলে নেয় ৭ গোল। অবশ্য ম্যাচে প্রথম আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। ওই শুরু এবং শেষ। তৃতীয় ম্যাচে প্রথম পেনাল্টি কর্নারের আবেদন করেন পাকিস্তান এবং রিভিউতে সেটা বাতিল হয়ে যায়। সপ্তম মিনিটে অবশ্য গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল এশিয়া কাপের তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ফলে গোলশূন্য শেষ হয় ১৫ মিনিটের প্রথম কোয়ার্টার। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে গোলের দেখা পায় এশিয়া কাপের প্রথম তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন। ১৭ মিনিটে পেনাল্টি কর্নারে এগিয়ে যায় পাকিস্তান (১-০)। ম্যাচের দ্বিতীয় পিসিতে গোল করেন আবু মাহমুদ। দ্বিতীয় কোয়ার্টার শেষ পাকিস্তানের ১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে। তৃতীয় কোয়ার্টারে গোল হয় আরও তিনটি। ৩২ মিনিটে পেনাল্টি স্ট্রোকে ম্যাচের দ্বিতীয় গোল করেন শাকিল ভাট (২-০)। পরের মিনিটেই গোলসংখ্যা তিনে উন্নীত করেন মোহাম্মদ কাদির (৩-০)। পাকিস্তান এতটাই গতিশীল খেলা খেলতে থাকে যে, প্রথম ৪০ মিনিটে ৬টি পেনাল্টি কর্নার আদায় করে নেয় পাকিস্তান। জিমি, চয়নরা অধিকাংশ সময়ই রক্ষণভাগ সামলাতে ব্যস্ত সময় পার করেন। অবশ্য দ্বিতীয় কোয়ার্টারে জিমির শট ক্রসপিঠে লাগায় গোল পায়নি বাংলাদেশ। ওই একটিই আক্রমণ ছিল বাংলাদেশের বলার মতো। আর কোনো আক্রমণ ছিল না। ৪০ মিনিটে সপ্তম পিসিতে ৪-০ গোলে এগিয়ে যায় পাকিস্তান। ওই গোলের পর তৃতীয় কোয়ার্টারে আর কোনো গোল হয়নি। তৃতীয় কোয়ার্টার শেষে ম্যাচের ফল ছিল পাকিস্তান ৪, বাংলাদেশ ০। চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টার শুরুর পর বাংলাদেশকে পুরোপুরি ছন্নছাড়া মনে হয়েছে। এই ফাঁকে পাকিস্তান আরও তিন গোল আদায় করে নেয়। ৪৬ মিনিটে অসাধারণ স্কিলে ম্যাচের পঞ্চম গোল করেন শাকিল ভাট (৫-০)। ডান প্রান্ত থেকে বল পেয়ে শাকিল বল ধরে দুই-তিনজনকে কাটিয়ে চমৎকার রিভার্স হিটে গোল করেন। ৪৯ মিনিটে অষ্টম পিসি আদায় করে ম্যাচের ষষ্ঠ ও নিজের তৃতীয় গোলটি করে আবু মাহমুদ (৬-০)। ম্যাচের শেষ মিনিটে মোহাম্মদ কাদির জিমিদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন(৭-০)।

৩২ বছর আগে ঢাকা স্টেডিয়ামের ঘাসের মাঠে বাংলাদেশ অসাধারণ হকি খেলেছিল। এ দেশের হকি প্রেমীদের এখনো মনে আছে হাসান সর্দার, মোহাম্মদ শহীদের অনুপম স্টিক ওয়ার্ক। চলতি আসরে সেই স্টিক ওয়ার্কের দেখা নেই। কিন্তু গতি, স্ট্যামিনা ও স্কিলে এগিয়ে গেছে অনেক। সেই গতি ও স্ট্যামিনায় কুপোকাত করে বাংলাদেশকে নতুন করে লজ্জায় ফেললো পাকিস্তান। এ নিয়ে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ ম্যাচে অংশ নিয়ে দেখা পায়নি গোলের।

সর্বশেষ খবর