শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মেসি শুধুই আর্জেন্টিনার

রাশেদুর রহমান

মেসি শুধুই আর্জেন্টিনার

লিওনেল মেসি সাধারণত কোনো কিছুতেই খুব বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন না। আবেগের রাশটা সব সময়ই বেঁধে রাখেন। কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৮৫০ মিটার উঁচুতে ইকুয়েডরের কুইটো নগরীতে সম্পূর্ণ ভিন্ন মেসিকে দেখা গেল। তিনি নাচছেন সতীর্থদের সঙ্গে। আনন্দে লাফাচ্ছেন বাচ্চাদের মতো। যেন অনেক আবদারের পর বাবা কোনো প্রিয় খেলনা কিনে দিয়েছেন! মেসির এই প্রাণবন্ত রূপ বহুদিন দেখেনি ভক্তরা। আর্জেন্টিনার ভক্তরা তো বটেই। আর্জেন্টাইন অধিনায়কের এত উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ, বহু প্রতীক্ষার পর সরাসরি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা।

কেবল লিওনেল মেসি কেন, বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার পর পুরো আর্জেন্টিনাই বুনো উল্লাসে মেতেছে। আর একজন মেসিকে পাওয়ায় সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে। অথচ এই মেসিরই নাকি আর্জেন্টিনায় তেমন কোনো মূল্য ছিল না। ২০১১ সালে ঢাকায় আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ কাভার করতে আসা এক আর্জেন্টাইন সাংবাদিক বলেছিলেন, ‘বুয়েন্স আয়ার্সে আপনি মেসির তেমন ভক্ত খুঁজে পাবেন না। ওখানে সবাই ম্যারাডোনাকে চিনে। আর চিনে তেভেজকে।’ সেই মেসিকে নিয়েই এখন মাতোয়ারা আর্জেন্টিনা। তিনটা কোপা আমেরিকা ও একটা বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেও মেসি এতটা জনপ্রিয় হতে পারেননি। এমনকি ব্রাজিলীয়রাও মেসিতে কম অভিভূত নয় এখন। বুয়েন্স আয়ার্সের এক জন সমুদ্রে ২৮ বছর বয়সী ব্রাজিলীয় মারকো মৌরাস দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছেন, ‘মেসি অন্য গ্রহের ফুটবলার।’ আর আর্জেন্টাইনরা! তারা ভিনগ্রহের মেসিতে বিশ্বাসী নয়। এতদিন মেসিকে খুব একটা আপন বলে মনে করেনি আলবেসিলেস্তরা। কিন্তু প্রায় একার চেষ্টায় আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার পর বদলে গেছে দৃশ্যপট। আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ক্রীড়া দৈনিক ‘ওলে’ মেসির বিশাল ফটোর মাঝে শিরোনাম দিয়েছে ‘মেসি ইজ আর্জেন্টিনো’ (মেসি আর্জেন্টাইন)। এই পত্রিকা দেশবাসীর পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে লিওনেল মেসির প্রতি। কুইটোতে ইকুয়েডরের বিপক্ষে প্রথম মিনিটেই মেসিরা পিছিয়ে যাওয়ার পর আর্জেন্টিনাজুড়ে ছিল কবরের নিস্তব্ধতা। মৃত্যুপুরীর মধ্যে মেসিই তো এনে দিয়েছিলেন জীবনের জয়গান। সেই মেসি এখন মহানায়ক। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে দলকে নিয়েই যদি মেসি এমন হবেন, তো বিশ্বকাপ জিতলে কী হবেন! সম্ভবত এই বিষয়টা এখন মেসি নিজেও বুঝতে পারছেন। ৩০ বছরের এই আর্জেন্টাইনের সম্ভবত বিশ্বকাপ জয়ের শেষ সুযোগ আসছে রাশিয়ায়। কুইটোতে তিনি যা করেছেন, রাশিয়াতেও তা করতে পারলে বিশ্বকাপ জয় তো আর অসম্ভব বলে মনে হয় না আর্জেন্টিনার। কোচ সাম্পাওলি তাই বলেছেন, মেসিরই বিশ্বকাপটা পাওনা।

কুইটোর উচ্চতায় দীর্ঘ ষোল বছর জয়হীন ছিল আর্জেন্টাইনরা। কিন্তু একজন মেসির কাছে যে কোনো কিছুই অজেয় থাকতে পারে না ফুটবলে। মেসি খেললেন নিজের মতো করে। কাউকে পরোয়া না করে। তার দুরন্ত ফুটবলের কাছে অসহায় হয়ে গেল সবকিছু। ইকুয়েডরের ডিফেন্স লাইন। কুইটোর উচ্চতার বাধা। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা। সবকিছুকেই জয় করলেন মেসি। যেখানে দিন কয়েক আগেও লা পাজের উচ্চতায় খেলতে গিয়ে বাড়তি অক্সিজেন নিতে হয়েছিল নেইমারকে (বলিভিয়া ম্যাচে), সেখানে মেসি প্রায় সমান উচ্চতায় গিয়ে হ্যাটট্রিক করলেন। আর এমন হেসে-খেলে যে ১৬ বছরের অতীতটাকে পুরোপুরিই মিথ্যা প্রমাণ করে দিলেন। এমন মেসিকে রাশিয়ার মাঠে দেখা গেলে আলবেসিলেস্তদের তৃতীয় বিশ্বকাপ রুখবে কে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর