রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভারত-পাকিস্তান হাই ভোল্টেজ ম্যাচ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ভারত-পাকিস্তান হাই ভোল্টেজ ম্যাচ

মোহাম্মদ ইরফান - মনপ্রিত সিং

এক সময় ক্রিকেটের চেয়ে ভারত ও পাকিস্তানের হকির লড়াইয়ে উত্তেজনা ছিল অন্যরকম। বিশ্ব হকির পরাশক্তি দুই দল। বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকে তাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারত না। এখন অবশ্য সেই দিন নেই। কালের বিবর্তনে জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, স্পেন ও বেলজিয়াম শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এমনকি শুধু ফুটবলের দেশ বলে পরিচিত আর্জেন্টিনাও গেল অলিম্পিকে হকিতে সোনা জয় করেছে। ভারত ১৯৭৫ বিশ্বকাপ ও ১৯৮০ সালে শেষবারের মতো অলিম্পিকে সোনা জয় করে। অন্যদিকে পাকিস্তান ১৯৮৪ অলিম্পিক ও ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়। এখন তাদের দাপট এশিয়ান গেমস ও এশিয়া কাপেই সীমাবদ্ধ। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছিল। চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের খেলা দেখতে তত্কালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে উপচেপড়া দর্শকের সমাগত হয়। গ্যালারিতো বটেই, সেদিন মাঠের কিনারে হাজার হাজার দর্শক উপস্থিত হয়। একবার পাকিস্তান আরেক বার ভারতের গোল। দর্শকরা প্রাণ ভরে সেই খেলা উপভোগ করেন। মো. শাহীদ, কলিম উল্লাহেদর স্ট্রিক ওয়ার্ক দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তানই। ৩২ বছর পর ঢাকায় এশিয়া কাপে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হচ্ছে আজ। বিকাল সাড়ে পাঁচটায় মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। আসরে দুই দলই ফেবারিট। শিরোপা জিততেই ঢাকা এসেছে। ‘এ’ গ্রুপে পাকিস্তান ও ভারত দুটি করে ম্যাচ খেলেছে। পাকিস্তান প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশকে ৭-০ গোলে হারলেও পরের ম্যাচে জাপানের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র

করেছে। ভারত দুটো ম্যাচই সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে। প্রথম ম্যাচে জাপানকে ৫-১ দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭-০ গোলে পরাজিত করেছে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের জন্য এ খেলার গুরুত্ব অনেক। তবে পাকিস্তানের সুপার ফোর খেলা শেষও হয়ে যেতে পারে, ভারত যদি পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারাতে পারে। অন্যদিকে জাপান যদি বাংলাদেশকে হারাতে পারে তাহলে সমীকরণ অন্য রকম হতে পারে। পাকিস্তান-ভারতের হকির আগের সেই উত্তাপ নেই। তবু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই বলে ম্যাচ ঘিরে দর্শকদের আগ্রহ থাকবে। ৮৫’র এশিয়া কাপে ঢাকা স্টেডিয়ামে উপচেপড়া দর্শকের সমাগম ঘটে। এবার বিনা টিকিট এবং প্রথমবারের মতো দেশে ফ্লাডলাইটে খেলা হলেও সেভাবে দর্শকের দেখা মিলছে না। চির প্রতিদ্বন্দ্বীর হাইভোল্টেজ ম্যাচ বলেই আজ গ্যালারির চেহারাও পাল্টে যেতে পারে। কে জিতবে আজ পাকিস্তান না ভারত? পরিসংখ্যানের বিচারে পাকিস্তান অনেক এগিয়ে। কারণ এই পর্যন্ত দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ১৬৯ বার। এর মধ্যে পাকিস্তান ৮২, ভারত জিতেছে ৫৭টি ম্যাচ। ড্র হয়েছে ৩০টি। পাকিস্তান ৩৯০ ও ভারত ৩৩৭টি গোল করেছে। শুধু মাত্র এশিয়া কাপে পাকিস্তান এগিয়ে। ছয়বার লড়াইয়ে তারা পাঁচবারই জিতেছে। অন্যদিকে ভারত মাত্র একবার। তাহলে কি আজকের ম্যাচে পাকিস্তানই ফেবারিট? না, চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের লড়াইয়ে আগাম কোনো হিসাব চলে না। জাপানের বিপক্ষে ড্র করেছে বলে পাকিস্তান আজ হেরে যাবে এই ধারণা কেউ করছেন না। ভারতের অধিনায়ক মনপ্রিত সিং বলেন, প্রতিপক্ষ যখন পাকিস্তান তখন বিষয়টি পুরোপুরি আলাদা। সবাইকে সেরা খেলাটা খেলতে হবে। তা না হলে ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যাবে। জাপানের বিপক্ষে ড্র করলেও ওদের আক্রমণভাগ যথেষ্ট শক্তিশালী। প্রতিটি পজিশনেই সতর্ক হয়ে খেলতে হবে। পাকিস্তানে অধিনায়ক মো. ইরফান বলেন, ‘ভারত যথেষ্ট শক্তিশালী। র‌্যাঙ্কিংয়েও তারা এগিয়ে। দুই দলই জিততে নামবে। যারা ভালো খেলবে তারাই জিতবে।

বাংলাদেশের হকিতে নতুন প্রাণ দিয়েছে ভারত ও পাকিস্তানই। প্রিমিয়ার লিগে বিশ্ব হকির কিংবদন্তি শাহবাজ আহমেদ, তাহির জামান, ধনরাজ পিল্লাইরা খেলে গেছেন। ওই সময় তাদের খেলা দেখতে গ্যালারি ভরে যেত। সেই দুই দেশইতো আজ লড়ছে। গ্যালারি কি এরপরও ভরবে না। এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ চারবার শিরোপা জিতেছে দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান ও ভারত ২ বার। এবারও এই তিন দলের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর