রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্মৃতির পাতায় সেই ফাইনাল

আসিফ ইকবাল

স্মৃতির পাতায় সেই ফাইনাল

১৯৮৫ সালে ঢাকায় এশিয়া কাপে পাকিস্তান ও ভারতের ফাইনাল ম্যাচ —সংগৃহীত

এক সময় নাম ছিল ঢাকা স্টেডিয়াম। এখন বদলে হয়েছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। ঢাকার মূল কেন্দ্র বলে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল স্টেডিয়ামটি। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে স্টেডিয়ামটি তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্র ক্রিকেটের জন্য। তবে নিয়মিত ফুটবলের আসরও বসতো। স্বাধীনতার পর ফুটবলই হয়ে উঠে মূল খেলা। অবশ্য ক্রিকেট, হকি, হ্যান্ডবল, অ্যাথলেটিক্স, রেসলিংকেও আতিথিয়েতা দিতে থাকে স্টেডিয়ামটি। আগাখান গোল্ড কাপ, প্রেসিডেন্ট কাপ ফুটবল, এশিয়া কাপ হকি, এশিয়া ক্রিকেট, এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক, এশিয়া যুব ক্রিকেট, সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, সাফ গেমস, আন্তর্জাতিক কুস্তি প্রতিযোগিতার মতো বড় বড় আসরগুলোর ভেনু্যু হয়েছে স্টেডিয়ামটি। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের পুরোটা জুড়ে এখন ক্রিকেট। অথচ ১৯৮৫ সালে এশিয়া কাপ হকির দ্বিতীয় আসর প্রাণের সঞ্চার করেছিল গোটা দেশে। ক্রীড়াপ্রেমীরা প্রথমবারের মতো দেখেছিলেন দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের হকি ম্যাচ। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছিলেন মোহাম্মদ শহীদ, মোহাম্মদ নাইম, সোমাইয়া, জাফর ইকবাল, হাসান সর্দার, কালিমুল্লাহ, সামিউল্লাহদের খেলা। ৩২ বছর ফের ভারত ও পাকিস্তান ঢাকায় হকি ম্যাচ খেলবে। কিন্তু দেশের হকিপ্রেমীদের স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল ১৯৮৫ সালের ফাইনালটি। যে ম্যাচে পাকিস্তান ৩-২ গোলে হারিয়েছিল ভারতকে। 

৭০, ৮০’র দশকে হকির দুই বিশ্বসেরা দল ভারত ও পাকিস্তান। দল দুটিতে খেলতেন শহীদ, নাইম, হাসান সর্দার, কালিমুল্লাহদের বিশ্বসেরা তারকা। বিশেষ করে স্টিক নিয়ে যেন জাদু দেখাতেন শহীদ ও হাসান সর্দার। দুজনের স্টিকের জাদু দেখার জন্য, দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর খেলা দেখার জন্য স্টেডিয়ামে উপচে পড়েছিল দর্শক। স্টেডিয়ামে ঢুকতে দর্শকের লম্বা লাইন লেগেছিল সকাল থেকে। দর্শকের লাইন তত্কালীন গুলিস্তান সিনেমা হল পেরিয়ে গিয়েছিল। দর্শকের সংখ্যা এতটাই হয়েছিল যে, গ্যালারিতে ঠাঁই হয়নি। ফলে হাজার হাজার দর্শক মাঠের চারিদিকে বসে খেলা দেখেন। মাঠে দর্শক থাকায় নিরাপত্তার অজুহাতে শুরুতে খেলতে অস্বীকার জানিয়েছিল দুই দল। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীদের আশ্বাসে খেলে দুই দল এবং আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে অবিশ্বাস্য গতির হকি ম্যাচ উপহার দেয় দুই দল। ঢাকার মাঠে কোনো ম্যাচ দেখতে এত দর্শক এর আগে কিংবা পরে কখনো হয়নি। ১৯৭৭ সালে আগাখান গোল্ডকাপের ফাইনালে ইরানের সফেদরুদ ও অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের ফাইনাল দেখতেও দর্শকে ভরে গিয়েছিল মাঠ। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মতো দর্শকে ঠাসা ছিল না।

টান টান উত্তেজনার ফাইনালে প্রথমে এগিয়েছিল পাকিস্তান। এরপর সমতা আনে ভারত। সমতা থাকার পর ম্যাচে ভারতকে এগিয়ে নেন নাইম। এরপর সমতা আনে পাকিস্তান। খেলা যখন ২-২ গোলে এগিয়ে চলছিল শেষ সময়ের পথে। তখনই জয়সূচক গোলটি করেন পাকিস্তানের কালিমুল্লাহ। গোলটি করার পর ভারতের হকি খেলোয়াড়রা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন কালিমুল্লাহ স্টিক দিয়ে বিপজ্জনক উচ্চতা থেকে বলে হিট করেছেন। ভারতীয়দের বক্তব্য ছিল স্টিক আইন সম্মত জায়গা থেকে আসেনি। ফলে তারা প্রতিবাদ জানায়। কেউ কেউ রেফারির গায়ে ধাক্কাও দেন। কিন্তু রেফারি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। পরবর্তীতে ওই প্রতিবাদের খেসারত গুনেন সোমাইয়াসহ ভারতের ২-৩ জন খেলোয়াড় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে। 

অবিশ্বাস্য, চোখ ধাঁধানো রুদ্ধশ্বাস ওই ফাইনালে কালো দাগের আচর ছিল শুধু জয়সূচক গোলটিই। তারপরও ৩২ বছর পর বাংলাদেশের হকিপ্রেমীরা এখনো চায়ের টেবিলে ঝড় তোলেন ভারত-পাকিস্তানের ওই ফাইনাল নিয়ে।

সর্বশেষ খবর