বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

তবু শিরোপার লড়াই তুঙ্গে

সমান ম্যাচে শেখ জামাল ও ঢাকা আবাহনীর সংগ্রহ ২২। তবে গোল পার্থক্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে শেখ জামাল। শীর্ষে থাকা দলের সঙ্গে তাদের ব্যবধান মাত্র ২ পয়েন্ট। যে কোনো সময় অবস্থানের পরিবর্তন ঘটতে পারে

ক্রীড়া প্রতিবেদক


তবু শিরোপার লড়াই তুঙ্গে

পেশাদার ফুটবল লিগে প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্ব কবে হবে তা এখনো চূড়ান্ত করেনি লিগ কমিটি। এর আগে সেকেন্ড উইন্ডো অর্থাৎ দ্বিতীয় দফার দলবদল হবে। অনেক দলই চূড়ান্ত করে ফেলেছে খেলোয়াড়দের। শীর্ষ পর্যায়ের দলগুলোতে নতুন বিদেশির দেখা মিলবে। প্রথমপর্বে যাদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নয়, তাদেরকে ইতিমধ্যেই না করে দিয়েছে। প্রথমপর্ব শেষ করতেই তিন মাস পার হয়ে গেছে। দ্বিতীয়পর্ব কতদিন চলবে সেটাই বড় প্রশ্ন। এবার লিগ শুরু করতে বাফুফেকে বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। ক্লাবগুলো আগের মৌসুমের অংশগ্রহণ মানি না পাওয়ায় মাঠে নামতে চাচ্ছিল না। লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী ক্লাবগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেই বকেয়া মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। ক্লাবগুলো নাকি শিগগিরই বৈঠকে বসবে তাদের অর্থ পাওয়ার ব্যাপারে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়পর্বও শুরু হওয়ার আগে জটিলতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এতো গেল অর্থের কথা। ১০ বছরে পা দিলেও বাংলাদেশের পেশাদার লিগ পেশাদারিত্বের মুখ দেখেনি। ২/১টি ক্লাব ছাড়া বাকিরা এএফসি বা ফিফার গাইড লাইন মানছে না। তা ছাড়া নামে পেশাদার হলেও এই লিগ মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। শুরুতে বেশ কটি ভেন্যুতে খেলা হয়েছে। এবার ঢাকা ছাড়া অন্য জেলায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ জন্য লিগে স্বত্ব কিনে নেওয়া সাইফ পাওয়ারটেক ঘোষণা দিয়েছে তারা সামনে লিগে স্পন্সর নাও করতে পারে। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান অভিজ্ঞ সংগঠক মনজুর কাদের বলেন, আমরাতো ঢাকার বাইরে খেলতে রাজি আছি। খেলার জন্য যে সুযোগ সুবিধা দেওয়া দরকার তা না পেলে খেলব কিভাবে? এ দায় বাফুফেরই।

পেশাদার লিগে সমস্যা ও বিতর্কের শেষ নেই। তারপরও এবারে শিরোপার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হচ্ছে। দর্শক নেই, তবু ম্যাচ হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। অনেক ম্যাচেই শেষ মুহূর্তে গোল হচ্ছে। ১২ দলের লড়াইয়ে প্রথম পর্বে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। ১১ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ২৬ পয়েন্ট। ধরা ছোঁয়ার প্রায় বাইরে চলে যাচ্ছিল তারা। কিন্তু ১১ নম্বর ম্যাচে ঢাকা আবাহনীর কাছে হেরে যায়। এতে করেই লিগ আরও জমে উঠে। সমান ম্যাচে শেখ জামাল ও ঢাকা আবাহনীর সংগ্রহ ২২। তবে গোল পার্থক্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে শেখ জামাল। শীর্ষে থাকা দলের সঙ্গে তাদের ব্যবধান মাত্র দুই পয়েন্ট। যে কোনো সময় অবস্থানের পরিবর্তন ঘটতে পারে। নবাগত সাইফ স্পোর্টিংও পিছিয়ে নেই। ১১ ম্যাচে তারা ২২ পয়েন্ট নিয়ে চারে আছে। ২৬, ২৪, ২৪ ও ২২ অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্বে বড় ধরনের অঘটন না ঘটলে এই চার দলের মধ্যেই শিরোপা লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে।

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানও অনেক দিন পর শক্তিশালী দল গড়েছে। কিন্তু শুরু থেকে পয়েন্ট নষ্ট করায় পিছিয়ে পড়েছে। অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন ছিল। শেষ তিন ম্যাচে টানা তিন জয় পেয়ে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে আছে। দ্বিতীয় পর্বের পুরোটাই পড়ে আছে। এ অবস্থায় এখনো তাদের শিরোপা লড়াইয়ে ফেরার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু মোহামেডান কতদূর এগোবে সেটাই প্রশ্ন। কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ভারতের সৈয়দ নইমুদ্দীনকে। পরীক্ষিত কোচ, তারপরও তিনি কি তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন? বার বার অনুশীলন ফেলে দেশে ফিরে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় কোচ থেকেও যেন কোচ নেই মোহামেডানের। যতটুকু এগিয়েছে বা খেলছে তা ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবুর পরিশ্রমে। ম্যানেজার কি কোচের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তাই যে অবস্থানে থাকুক না কেন মোহামেডান যে এবারও শিরোপাহীন থাকছে তা অনেকটাই নিশ্চিত।

আসা যাক শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র প্রসঙ্গে। দলের ফুটবলাররা অকপটে স্বীকার করছেন এমন পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা তারা কোথাও পাননি। কিন্তু মাঠে সেই রূপ দেখা যাচ্ছে না। এটা ঠিক তারকা বলতে যা বোঝায় এবার শেখ রাসেলে নেই। কিন্তু অভিজ্ঞ ও তরুণদের মিশ্রণ, সেসঙ্গে ভালো মানের বিদেশি খেলোয়াড় থাকার পরও দলের এই পারফরম্যান্স মেনে নেওয়া যায় কি? প্রথম পর্বে তারা ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে। অনেক জেতা ম্যাচই তারা হাতছাড়া করেছে। গোলের সুযোগ যেমন নষ্ট করেছে তেমনি ডিফেন্ডারদের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ছয়ে থেকে শীর্ষে উঠলে তা হবে বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন ইতিহাস। মোহামেডান বা শেখ রাসেলের এখন যে অবস্থান তাতে আর শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। শেষ পর্যন্ত অবস্থান কোথায় দাঁড়ায় সেটাই অপেক্ষা।

প্রথম পর্বের চেহারায় বলে দিচ্ছে চার দলের মধ্যে শিরোপা লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে। কে যে শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হাসবে বলা মুশকিল। চ্যাম্পিয়নের জন্য অনেক দিন পর লিগে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। আরও উপভোগ্য হতো, যদি কথায় কথায় লিগ বন্ধ না হতো। এর জন্য দায়ী কে? বৃষ্টিতে মাঠের যে অবস্থা তাতে বোঝাই যায় না এটা ধানক্ষেত না খেলার মাঠ। বাফুফে জেনে শুনে কেন বৃষ্টির মৌসুমে লিগ শুরু করল? যুক্তি দেখানো হচ্ছে বর্ষণে ফুটবল আগেও হয়েছে। বাফুফে কেন বুঝতে চাচ্ছে না অতীত ও বর্তমানের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আগে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফুটবল ও ক্রিকেট লিগ হতো মৌসুম ভাগ করে। এখনতো শুধু ফুটবলের। সেক্ষেত্রে শীত মৌসুমে লিগ আয়োজনে বাধা কোথায়? তাছাড়া এক ঢাকাতেই শুধু পেশাদার লিগ হবে কেন? 

সর্বশেষ খবর