রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

তবু প্রাপ্তি কম নয়

ছয়ে মিশন শেষ জিমিদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তবু প্রাপ্তি কম নয়

সময় এসেছে হকিকে ঘিরে ভাবনার। শেষ হয়ে গেছে এশিয়া কাপে হকিতে বাংলাদেশের মিশন। স্বাগতিক হয়েও ফাইনালে দর্শক হয়ে বসে থাকতে হবে জিমি-চয়নদের। অবশ্য বাংলাদেশ ফাইনাল খেলবে তা কেউ আশাও করেননি। টুর্নামেন্টের আগে ৪০ মিনিটের প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ ২-১ গোলে পরাজিত করেছিল জাপানকে। এরপরও গ্রুপপর্বে বাংলাদেশ জয় পাবে তাও কেউ ভাবেননি। পাকিস্তান ৭-০, ভারত ৭-০, জাপানের কাছে গ্রুপ ম্যাচে জিমিরা ৩-১ গোলে হার মানেন।

তিন ম্যাচেই হার। তাহলে কি ব্যর্থ মিশন শেষ করল বাংলাদেশ। না এরপরও প্রাপ্তি কম নয়। টুর্নামেন্টের আগে কোচ মাহবুব হারুন বলেছিলেন, আমার লক্ষ্য পাঁচ কিংবা ছয়ে থাকা। যা সম্ভব না তা তিনি বলেননি। হারুনের অভিজ্ঞতা তো একেবারে কম হয়নি। তিনি জানতেন তার শিষ্যদের পক্ষে চার ফেবারিটকে টপকিয়ে সুপার ফোরে খেলা সম্ভব নয়। সামর্থ্য যা তাই তিনি তুলে ধরেছেন। সফলও হয়েছেন। কেননা নিজ দেশে আয়োজিত টুর্নামেন্টে সাত কিংবা আটে থাকাটা হতাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। সেই লজ্জা থেকে রক্ষা তো পেয়েছে বাংলাদেশ।

যা লক্ষ্য ছিল তাই পূরণ করেছেন জিমিরা। ছয়ে থেকে বাংলাদেশ আগামী এশিয়া কাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা পেয়েছে। অনেকে আবার বলছেন, আট দলের মধ্যে ছয়ে এখানে কৃতিত্বের কি আছে। হ্যাঁ, কথাটি মানা যেত যদি দলটি বাংলাদেশ না হয়ে পাকিস্তান বা ভারত হতো। যতটুকু সামর্থ্য তা করে দেখিয়েছেন জিমিরা। এই পজিশনওতো ফসকে যাচ্ছিল। চীনের বিপক্ষে ৫ম ও ৬ষ্ঠ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ এক সময়ে ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল। মনে হচ্ছিল ছয়ে থাকারও স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ হয় ৩-৩ গোলে।

এরপর শুট আউট। ভাগ্য দুলছিল বাংলাদেশের। চীন কোনো বড় দল নয় যে, তাদেরকে টপকিয়ে ছয়ে থাকা যাবে না। কিন্তু সেদিন শেষ কোয়ার্টার ছাড়া বাংলাদেশ কেন জানি জ্বলে উঠতে পারেনি। দেশের ইজ্জত বাঁচাতে শেষের দিকে মরিয়া হয়ে উঠেন জিমিরা। ৩-৩ ড্রও করে ফেলে। শুট আউটে অধিনায়ক জিমির হিট জালে জড়ালে পুরো গ্যালারিই উল্লাসে মেতে ওঠে। গোলের পর জিমি যে দৌড়টা দিলেন যা দেখে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ যেন ট্রফিই জিতে গেছে। আসলে ম্যাচটি ছিল তাদের কাছে আরেক ফাইনাল। হারলেই সমালোচনার স্রোতে ভেসে যেতে হতো।

চীনকে হারিয়ে বাংলাদেশ ৫ম স্থান নির্ধারিত ম্যাচে জাপানের মুখোমুখি হয়েছিল। টুর্নামেন্টে পাঁচে থাকা মানেই বাংলাদেশের শিরোপা জয়। এই জাপান গ্রুপপর্ব ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে। পয়েন্ট সমান হলেও গোলের সমীকরণে জাপান সুপার ফোরে যেতে পারেনি।

সেই জাপানের বিপক্ষেই গ্রুপপর্বে বাংলাদেশ সমানতালে লড়েছিল। প্রথমে গোল খেয়ে সমতাও এনেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ ২ মিনিটে ২ গোল খেয়ে বাংলাদেশ হার মানে। প্রত্যাশা ছিল পঞ্চম স্থান নির্ধারিত ম্যাচে প্রতিশোধ নেবেন জিমিরা। আগের দিন চীনকে হারিয়ে গোটা দলই উজ্জীবিত। শুরু থেকে সমান তালেই লড়ছিল বাংলাদেশ। প্রথম কোয়ার্টারে গোল হয়নি। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে শুরুতেই পেনাল্টি গোলে জিমিরা পিছিয়ে পড়েন। বাংলাদেশ যেভাবে খেলছিল তাতে মনে হচ্ছিল যে কোনো সময়ে গোল পেয়ে যাবে। অভিজ্ঞতা আর কৌশলের কাছে মার খেয়ে যায়। শেষ কোয়ার্টারে জাপান ৩ গোল করে বড় ব্যবধানেই জিতে যায়।

আট দলের মধ্যে ছয়ে থেকে বাংলাদেশ অন্তত তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে। সামনের এশিয়া কাপে সরাসরি খেলবে। আরও টুর্নামেন্টে অংশ নেবে। একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে খেলোয়াড়দের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের কিংবদন্তি হকি খেলোয়াড় হাসান সরদারও বলেছেন, আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ আরও এগুতে পারবে। কিন্তু এ জন্য ছেলেদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এসব কারণেই পাকিস্তান পিছিয়ে যাচ্ছে। হাসান সরদারের মতো খেলোয়াড় বাংলাদেশকে নিয়ে আশাবাদী। কিন্তু ফেডারেশনকে তো বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। সম্ভাবনা যখন আছে তাতো কাজে লাগাতে হবে। ছেলেদের সমালোচনা করব আর কিছুই দেব না এভাবে তো এগুনো যাবে না। সময় এসেছে হকি নিয়ে নতুন করে ভাববার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর