সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাশার সাকিবের পর মাশরাফি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাশার সাকিবের পর মাশরাফি

ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মাঝেও ৬৩ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেছেন সাকিব আল হাসান —এএফপি

জন্মদিন উদযাপন করেন না কখনো। এমনকি প্রিয়জনদের সঙ্গে কেকও কাটেন না। মাশরাফি বিন মর্তুজা : বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের একজন। সেলিব্রেটি ক্রিকেটারদেরও একজন। পরশু রাতে একটি নয়, দুই দুটি কেক কাটেন মাশরাফি। প্রিয়জনদের সঙ্গে নয়, কেক কেটেছেন দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্ট লন্ডনে দলীয় সতীর্থদের সঙ্গে। সতীর্থরা কেক কেটেছেন একটি তার জন্মদিনের এবং অন্যটি অধিনায়কত্বের হাফ সেঞ্চুরির। গতকাল বাফেলো পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডে খেলেছে টাইগাররা। ম্যাচটি যেমন হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর। তেমনি মানসন্মানও পুনরুদ্ধারের। মাশরাফির আবার মাইলফলক গড়ারও ম্যাচ এটা। হাবিবুল বাশার ও সাকিব আল হাসানের দেশের ক্রিকেটের তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে গতকাল ৫০তম ম্যাচে টস করেন মাশরাফি। রেকর্ডের খাতায় নাম লিখলেও বিবর্ণ বোলিং করেন তাসকিন আহমদ, রুবেল হোসেনরা।

তিন বছর আগে দেশের ক্রিকেট যখন পথচ্যুত, তখনই দিক নির্দেশক হতে অধিনায়ক হন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে অধিনায়কত্ব করেন এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ফের সাফল্যের পাইপ লাইনে টেনে তুলেন। তার নেতৃত্বে টাইগাররা শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করতে শিখেছে। আত্মস্থ করেছে জয়ের আকাঙ্ক্ষা। তার নেতৃত্বে যে লড়াইয়ের পথ দেখেছে বাংলাদেশ, তার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০  ক্রিকেটে ভালো খেলছে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্যক্তিগত কিছু সাফল্য ছাড়া দলগত পারফরম্যান্স পুরোটাই ছন্নছাড়া। টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলেও গতকাল বাফেলো পার্কে খেলতে নামে মানসন্মান পুনরুদ্ধার করতে। হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে। কিন্তু টাইগার বোলারদের যেভাবে নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছেন টেন্ডা বাভুমা, কুইন্টন ডি কক, ফাফ ডু প্লেসিস, অ্যাইডেন মারক্রামরা, তাতে হোয়াইটওয়াশ এড়ানো কষ্টকরই হবে মাশরাফি বাহিনীর। বাফেলো পার্কের ব্যাটিং উইকেটে চার ছক্কার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা নামের পাশে লিখে নিয়েছে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৬৯। যা এই মাঠে সর্বোচ্চ দলগত স্কোর। এর আগে প্রোটিয়াদের করা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৩১১ রানের স্কোরটি ছিল সর্বোচ্চ। গতকাল কোনো স্বাগতিক ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি না পেলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে। ২০০৮ সালে বেনোনিতে ৩৫৮ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। গতকাল রেকর্ড গড়ার ম্যাচে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা ছক্কা মেরেছেন ৬টি ও চার হাঁকিয়েছেন ৩৭টি। টাইগার বোলারদের মধ্যে সফল ছিলেন অফ স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ১০ ওভারের স্পেলে ৫৯ রানের খরচে নেন ২ উইকেট। নেতৃত্বের ৫০ নম্বর ম্যাচে মাশরাফি ৯ ওভারে ৬৯ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য। তাসকীন ২ উইকেট পেলেও ৭ ওভারের স্পেলের ৯.৪৩ স্ট্রাইক রেটে রান খরচ করেছেন ৬৬। সাকিব ১০ ওভারে রান দিয়েছেন ৫৬, রুবেল দিয়েছেন ১০ ওভারে ৭৫ রান খরচ করে নিয়েছেন ১ উইকেট। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। গোটা সিরিজের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং করেছেন। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি। ৫০ ম্যাচে তার নেতৃত্বে দল জিতেছে ২৭ এবং হার ২০। টাইগার অধিনায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেতৃত্ব দিয়েছেন হাবিবুল বাশার। ৬৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে বাশার জয় পেয়েছেন ২৯টি এবং হেরেছেন ৪০টিতে। সাকিব ৫০ ম্যাচে জিতেছেন ২৩টিতে এবং হেরেছেন ২৬টিতে। এছাড়াও মোহাম্মদ আশরাফুলের ৩৮ ম্যাচে জয় ৮, মুশফিকুর রহিমের ৩৭ ম্যাচে জয় ১১, খালেদ মাসুদ পাইলটের ৩০ ম্যাচে জয় ৪, আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ১৬ ম্যাচে জয় ২ আকরাম খানের ১৫ ম্যাচে জয় ১টি। এছাড়াও খালেদ মাহমুদ সুজন ১৫, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ৭, নাঈমুর রহমান ৪ এবং মিনহাজুল আবেদীন ও রাজিন সালেহর ২টি করে ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিলেও জয় পায়নি বাংলাদেশ।

মাশরাফি এখন তৃতীয় ধারায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশকে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অধিনায়ক হয়েছেন প্রথম। কিন্তু ইনজুরি তাকে ছিটকে দেয়। এরপর ২০১০ সালে ফের ইংল্যান্ড সফরে নেতৃত্ব ফিরে পান। কিন্তু সেবারও ৭ ম্যাচের বেশি নেতৃত্ব দিতে পারেননি। এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয়বারের মতো ফিরে পান নেতৃত্ব। এখনো চলছে। তার নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল, ঘরের মাঠে পাকিস্তান, জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ এবং ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে জয় পায় বাংলাদেশ।

 

সর্বশেষ খবর