সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হকির সচল চাকা অচল করার পাঁয়তারা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

হকির সচল চাকা অচল করার পাঁয়তারা

এশিয়া কাপ সফলভাবে আয়োজন করায় প্রশংসিত হয়েছে হকি ফেডারেশন। সবার পরিশ্রমে হকির এত বড় আসর মাঠে নামানো সম্ভব হয়েছে। বিদেশি দলগুলো কোনো কিছুর ব্যাপারে আপত্তি তোলেনি। এশিয়া কাপের ধকল সামলানোর পরই হকি বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে। হঠাৎ করেই মৃত্যুবরণ করেন ফেডারেশনের সহসভাপতি খাজা রহমত উল্লাহ। হকির নিবেদিতপ্রাণ বলা হতো রহমত উল্লাহকে। হকিতে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেই শোক কাটিয়ে ফেডারেশন চাচ্ছে হকির চাকা সচল রাখতে। দ্রুত নতুন মৌসুম শুরু করতে কিছুদিন আগে ক্লাবগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক। খেলোয়াড়রা চাচ্ছেন দলবদলের তারিখ ঘোষণা করে প্রিমিয়ার লিগে মাঠে নামতে।

লিগ থেকেই খেলোয়াড়রা মূলত অর্থ পেয়ে থাকেন। তাছাড়া আয়ের অন্য পথ নেই তাদের। সাদেক দেশের কিংবদন্তি হকি খেলোয়াড়। তাই খেলোয়াড়দের বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। দ্রুত লিগ মাঠে নামলে খেলোয়াড়রা শুধু উপকৃত হবেন না, হকিতেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে। ২৮-২০ নভেম্বরের মধ্যে প্রিমিয়ার লিগের দলবদল করা যায় কিনা তা ক্লাবগুলোকে ভাবতে বলেছেন সাদেক। সাধারণ সম্পাদক চাচ্ছেন ডিসেম্বর অর্থাৎ চলতি বছরেই ঘরোয়া মৌসুমের পর্দা উঠুক।

হকির বৃহত্তর স্বার্থে সাদেক চাচ্ছেন প্রিমিয়ার লিগ মাঠে নামাতে। কিন্তু তা কি সম্ভব? কেননা কোনো কোনো ক্লাব নাকি চাচ্ছে আগে নির্বাচন তারপর লিগ। ভিতরে ভিতরে তারা জোট বেঁধে হকির সচল চাকাকে অচল করতে চাচ্ছে। এশিয়া কাপের আগেই হকি ফেডারেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। দুই প্যানেলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বন্যার জন্য নির্বাচন স্থগিত করে দেয়। নতুন তারিখ এখনো ঘোষণা হয়নি।

সচেতন ক্রীড়াপ্রেমীদের প্রশ্ন, লিগের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক কী? নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর এশিয়া কাপ আয়োজন কি হয়নি? আন্তরিকতা থাকলে সবই সম্ভব। হকি ফেডারেশনের সহসভাপতি অভিজ্ঞ সংগঠক আবদুর রশিদ সিকদার নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী ছিলেন। গতকালও তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ‘সাধারণ সম্পাদক পদেই নির্বাচন করব।’ তাহলে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত লিগ হবে না— এমন সিদ্ধান্ত আপনার ক্লাব ঊষা ক্রীড়া চক্র কি নিয়েছে? রশিদ বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। নির্বাচনের সঙ্গে লিগের তো কোনো সম্পর্ক নেই। হকি মাঠে গড়াক এটা আমরা কেন প্রতিটি ক্লাবই চায়। তবে হুট করে দলবদল ও লিগ শুরু করা যায় না। এখানে নিয়মনীতির প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। যেমন আমরা যারা কমিটিতে আছি বৈধ কিনা নিজেই জানি না। কেননা আমাদের মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গেছে।’

রশিদ বলেন, ‘ক্রীড়া পরিষদ থেকে যখন চিঠি পাইনি তখন ধরে নিলাম বর্তমান কমিটির অধীনে লিগ আয়োজন করা সম্ভব। দলবদল হবে কিন্তু তার আগে ঠিক করতে হবে নতুন মৌসুমে একেক দলে কতজন বিদেশি খেলতে পারবে। গতবার পাঁচজন করে বিদেশি খেলেছে। এ নিয়ে অনেক কথা উঠেছে। কেননা পাঁচজন করে বিদেশি খেলা মানে ১২ দলে ৬০ জন স্থানীয় খেলোয়াড় সাইডলাইনে বসে থাকা। যা দেশের হকির জন্য ক্ষতিকর। বিদেশি কমানো ছাড়াও সার্ভিসেস দলে থাকা খেলোয়াড়দের কোটা নির্ধারণ করা। অনেক তারকা খেলোয়াড়ই এখন সার্ভিসেস দলে জড়িয়ে গেছেন। এরপর বড় প্রশ্ন হচ্ছে লিগের বাইলজ। এসব আগে ঠিক করবে লিগ কমিটি। এরপর নির্বাহী কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। ২৮-৩০ নভেম্বরে অবশ্যই দলবদল করা যাবে। যদি উল্লিখিত বিষয়গুলো ঠিক করা হয়।

রশিদ অনেক যুক্তির কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু তিনিও ফেডারেশনের বড় দায়িত্বে আছেন। রশিদ কি পারবেন অল্প সময়ের মধ্যে কাজগুলো গুছিয়ে নিতে। তিনি যেসব কথা বললেন, তাতে ঘুরেফিরে আসল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে নির্বাচনের আগে লিগ মাঠে নামানো সম্ভব নয়। আসলে এসব বিষয় ক্লাবগুলো বসে নিষ্পত্তি করলে কোনো সমস্যাই না। কিছু ক্লাব তাই অনেক যুক্তি দাঁড় করাবে। অথচ এটা পরিষ্কার যে, তারা চাচ্ছে লিগের আগে নির্বাচন। কিছু ক্লাবের অযৌক্তিক দাবিতে ঘরোয়া হকি অচল হয়ে পড়েছিল। আবারও কি তারা নির্বাচন সামনে রেখে নতুন কোনো ষড়যন্ত্রের খেলা খেলতে চাচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর