বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইতালিবিহীন বিশ্বকাপ

রাশেদুর রহমান

ইতালিবিহীন বিশ্বকাপ

শেষটা ভালো হলো না ২০০৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী বুফনের। সুইডেনের কাছে হেরে বাছাই পর্ব থেকে বিদায় নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলকেই ‘গুডবাই’ বললেন তিনি। অন্যদিকে ২০০৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে উৎসবে মেতে উঠেছেন সুইডিশরা —এএফপি

বিশ্বকাপ এলেই আমিনবাজারে বাড়ির ছাদে ছাদে পতপত করে উড়তে থাকে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, ইতালির কিংবা স্পেনের পতাকা। ঢাকা কিংবা অন্যান্য মহানগরীতেও পতাকা উড়ানোর এই ঐতিহ্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সামনেই রাশিয়া বিশ্বকাপ। এবার আর ইতালিয়ান ফুটবলের ভক্তরা পতাকা উড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ইউরোপ অঞ্চলে প্লে-অফ রাউন্ড খেলেই বিদায় নিয়েছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি। সুইডিশ ফুটবলের বিশাল ঢেউ এসে ফুটবল দুনিয়ার পরাশক্তি আজ্জুরিদের সব দুর্বলতা উন্মুক্ত করে দিল দুই ম্যাচেই। প্রথম লেগে ১-০ গোলে সুইডেনের কাছে পরাজয়। দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাটিতে গোলশূন্য ড্র।

ইতালিয়ানরা রাজনৈতিকভাবে বেশ দ্বিধাবিভক্ত। এমনকি ওই খানে ভাষাগত শ্রেণি-বৈষম্যও কম নয়। ইউরোপিয়ানদের মধ্যে নিজেদের বেশ উঁচুদরের মনে করা ইতালিয়ানরা কেবল একটা জায়গাতেই এক হতে পারে, ফুটবল। বিশ্বকাপ এলে মদের আড্ডাগুলো আরও বড় আকার ধারণ করে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে ফুটবল চর্চা। সব মত-পথের মানুষ মিলে-মিশে একাকার। ইতালিয়ানদের ফুটবলীয় আবেগের স্ফুরণ সত্যিই তাক লাগানোর মতো। ফুটবল পাগল এই জাতটা এবার আর বিশ্বকাপ নিয়ে মেতে উঠবে না। কারণ, ইতালিই তো নেই বিশ্বকাপে! কিন্তু এ ঘটনা কি সত্যিই বিশ্বাস করার মতো! এখনো ঘোরের মধ্যে আছে ইতালিয়ানরা। ঘোরের মধ্যে পুরো ফুটবল দুনিয়াই। আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল ছাড়া যেমন বিশ্বকাপ কল্পনা করা কঠিন, তেমন তো ইতালির জন্যও। ইতালিয়ানরা একে-অপরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করছে, আমরা কি সত্যিই বিশ্বকাপে নেই! যে দল ২০টি বিশ্বকাপের ১৮টিতেই অংশ নিয়েছে, তাদের জন্য এমন আবেগ তো ঠিকই আছে। সেই ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব পাড়ি দিতে পারেনি ইতালি। সেবার পর্তুগাল ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে একই গ্রুপে খেলে বাছাই পর্বে ব্যর্থ হয়েছিল আজ্জুরিরা। এ ছাড়া ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণই করেনি তারা। ১৮ বারের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন চারবার (১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৮২ ও ২০০৬) ও রানার্সআপ দুবার (১৯৭০ ও ১৯৯৪)। এ ছাড়াও আরও দুবার সেমিফাইনাল খেলেছে তারা। এই সফলতা ইতালিয়ানদের জন্য বিশ্বকাপে একটা স্থায়ী আসনই এনে দিয়েছিল। ভক্তরা ভাবত, ইতালির বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব পাড়ি দেওয়াটা একটা সাধারণ দায়িত্ব। কিন্তু পাওলো রোসি আর রবার্তো বাজ্জিওদের উত্তরসূরিরা নিজেদের ফুটবলীয় ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারল না। এ ঘটনাকে ইতালিয়ান মিডিয়া নাম দিয়েছে ‘অ্যাপোক্যালিপস’। বাছাই পর্বের এই ব্যর্থতা তো ইতালিয়ান ফুটবলকে নগ্নই করে দিল!

এমন নয় যে প্রথম লেগ ১-০ গোলে হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় লেগে চেষ্টা করেনি ইতালি। ৯০ মিনিটের ম্যাচে ৭৬ শতাংশ সময় বল দখলে রেখেছে আজ্জুরিরা। গোলমুখে ২৭টি শট নিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ইতালির। সফল হতে পারেননি ডি রোসিরা। একের পর এক সুযোগ হারিয়ে ইমোবিল আর আলেসান্দ্রোরা বিশ্বকাপ খেলার সুযোগটাই হারালেন। আর হারালেন ভক্তদের মনের কোণে থেকে যাওয়া আস্থার শেষটুকুও।

২০০৬ বিশ্বকাপের পর থেকেই ধুঁকছিল ইতালি। এর মধ্যে ২০১২ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলাটাই তাদের সেরা অর্জন। ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে তো গ্রুপ পর্বের বাধাই পাড়ি দিতে পারেনি। তবে আজ্জুরিদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার যে এমন পরিণতি বয়ে আনবে তা কেউ ভাবেনি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ব্যর্থতার পর ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা বলছেন, এটা গত ষাট বছরে ইতালিয়ান খেলাধুলার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। কেউ কেউ এই ব্যর্থতাকে মহাবিপর্যয় হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।

ইতালিয়ানদের জন্য বিষয়টা যতই কষ্টদায়ক, সুইডেনের জন্য ততই মধুময়। ইতালির মতো দলকে বিদায় করে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার মতো গৌরব সুইডেনের ফুটবলীয় ঐতিহ্যকেই আরও সমৃদ্ধ করল। ২০০৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল সুইডেন। ১৯৫৮-এর ফাইনালিস্টরা কি এবার দুর্দান্ত কিছু করে দেখাবে বিশ্বকাপে!

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর