বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিরপুরে ক্যারিবীয় ঝড়

মেজবাহ্-উল-হক

মিরপুরে ক্যারিবীয় ঝড়

শুরুতে ৪ উইকেট পতনের পর বিপর্যয়ে পড়ে ঢাকা ডায়নামাইটস। একসময় মনে হচ্ছিল খুলনার জয় সময়ের ব্যাপার। কিন্তু ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান পোলার্ড ঝড় বইয়ে দেন মিরপুর স্টেডিয়ামে। চার-ছক্কায় ঢাকার তৃতীয় জয় নিশ্চিত করেন এই মারকুটে ব্যাটসম্যান —রোহেত রাজীব

সর্বশেষ টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের শেষ ওভারটির কথা ক্রিকেটামোদীদের ভোলার কথা নয়! ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল। কলকাতার ইডেন গার্ডেন। শেষ ওভারের আগে মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ডই চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছে। শিরোপার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ১৯ রান। কার্লোস ব্রাথওয়েট ওভারের প্রথম চার বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ক্রিকেটাতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত করেন। দ্বিতীয়বারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে ক্যারিবীয়রা।

সেই ব্রাথওয়েট গতকাল মিরপুরে আবার অগ্নিমূর্তি ধারণ করলেন। চার ছক্কার ফুলঝুরি সাজিয়ে ধুঁকতে থাকা খুলনা টাইটানসকে এনে দেন ১৫৬ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। যদিও টাইটানসের স্কোরটা এখানে বড় বিষয় নয়। মুগ্ধতা ছড়িয়েছে ব্রাথওয়েটের ২৯ বলে ৬৪ রানের অনবদ্য ইনিংসটি।

চারটি চার, ছয়টি ছক্কা— কী দারুণ ছন্দ! ব্রাথওয়েটের ছক্কাগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছিল বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটিকে। যদিও দুই ম্যাচের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোথায় বিশ্বকাপের ফাইনাল আর কোথায় ঘরোয়া লিগের এক ম্যাচ! তা ছাড়া সেটি ছিল দ্বিতীয় ইনিংস, আর এটি প্রথম ইনিংসে। তবে ছক্কাগুলোর মধ্যে ছিল দারুণ মিল। ইডেন গার্ডেনের দর্শকের মতো কাল শেরেবাংলার দর্শকরাও ছক্কা-বৃষ্টি উপভোগ করেছেন।

সবচেয়ে বড় অমিল বুঝি এখানেই— সে ম্যাচে ব্রাথওয়েট ছিলেন অঘোষিত নায়ক, আর এ ম্যাচে ট্র্যাজিক হিরো! এই ক্যারিবিয়ানের করা শেষ ওভারেই জয় নিশ্চিত করে ঢাকা ডায়নামাইটস। অবশ্য শেষ ওভারে ব্রাথওয়েট বল হাতে নেওয়ার আগেই খুলনা টাইটানসের হার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কেবল বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা! টি-২০-এর মারকাটারি ব্যাটিংয়ে ৬ বলে ৬ রান করা মোটেও কঠিন কাজ নয়।

তারপরও প্রথম চার বলে মাত্র দুই রান দিয়ে একটা নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করে ছিলেন ব্রাথওয়েট। শেষ দুই বলে ঢাকার দরকার ছিল ৪ রান। কিন্তু পঞ্চম বলে ডায়নামাইটসের জহুরুল ইসলাম অমি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে উত্তেজনার আগুন নিভিয়ে দেন। ৪ উইকেটে জিতে যায় ঢাকা। চার ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের তৃতীয় জয় এটি। সিলেট সিক্সার্সকে টপকে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেল ঢাকা। ৩৯ বলে ৪৫ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন জহুরুল।

এবারও চ্যাম্পিয়নের মতোই এগিয়ে যাচ্ছে ডায়নামাইটস। প্রথম ম্যাচে সিলেট সিক্সার্সের বিরুদ্ধে হারলেও তারপর জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে সাকিবের দল। গতকাল অবশ্য হেরেও যেতে পারত ঢাকা। ১৫৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১৩ রানেই ৩ উইকেট হারায়। ৫১ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায়। এরপর শুরু হয় কাইরন পোলার্ডের সাইক্লোন ব্যাটিং। এই ক্যারিবীয় তারকা মাত্র ১৯ বলে করেন হাফ সেঞ্চুরি। আউট হয়েছেন ২৪ বলে ৫৫ রান করে। ছয়টি ছক্কার সঙ্গে তিনটি বাউন্ডারি। চোখ জুড়ানো এক ইনিংস। এমন ইনিংস দেখতেই তো খেলা দেখতে মাঠে আসেন দর্শক। যেন টিকিটের টাকা এক ম্যাচ দেখেই উশুল হয়েছে দর্শকের। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ দিয়ে বিপিএলও যেন প্রাণ ফিরে পেল। টাইটানসের বড় স্কোরে যেমন বড় অবদান ব্রাথওয়েটের তেমনি ডায়নামাইটসের অঘোষিত ‘নায়ক’ পোলার্ড। ঢাকার জয়ের ভিতই গড়ে দিয়েছেন এই ক্যারিবিয়ান। ১০ ওভার শেষে ডায়নামাইটসের স্কোর ছিল ৪৮/৫। ধীরে ধীরে জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল টাইটানস। কিন্তু ১১তম ওভার থেকে পাল্টে যেতে থাকে চিত্রনাট্য। খুলনার অধিনায়ক মাহদুল্লাহ রিয়াদের এক ওভারে চারটি ছক্কা হাঁকান পোলার্ড। ওই ওভার থেকে আসে সব মিলে ২৫ রান। এক ওভার পর আবারও আগ্রাসী পোলার্ড। ১৩তম ওভারে ব্রাথওয়েটের ওপর চড়াও হন তিনি। দুটি করে ছক্কা ও চার। ওই ওভার থেকে আসে ২০ রান। এ দুটি ওভারই ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছে ঢাকাকে। গতকালের ম্যাচে যেন জয়-পরাজয় ছাড়িয়ে গেছে ব্রাথওয়েট ও পোলার্ডের দুই ইনিংস। দেখার মতো দুটি হাফ সেঞ্চুরি। ব্রাথওয়েটের স্ট্রাইক রেট ২২১, আর পোলার্ডের ২২৯। কী ভয়ঙ্কর ব্যাটিং। দুই ক্যারিবিয়ান মারকুটে মিলে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ‘এক ডজন’। ছক্কাগুলোও কী বিশাল বিশাল! একেকবার বল গিয়ে আছড়ে পড়েছে গ্যালারিতে। কাল মিরপুরের ওপর দিয়ে যেন বয়ে গেছে ‘ক্যারিবীয় ঝড়’!

স্কোর কার্ড

খুলনা টাইটানস : ১৫৬/৫ (২০ ওভার), ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৫৭/৬ (২০ ওভার)

চিটাগং ভাইকিংস : ১৩৯/৪ (২০ ওভার), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস : ১৪০/৪ (২০ ওভার)

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর