বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইতালিকে ডুবিয়েছে পরিকল্পনাহীন ফুটবল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ইতালিকে ডুবিয়েছে পরিকল্পনাহীন ফুটবল

আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে খেলবে কি না এ নিয়ে সমর্থকরা শঙ্কিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত শেষ ম্যাচে মেসি ম্যাজিকে আর্জেন্টিনা চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। মেসিরা সুযোগ না পেলে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে বিশ্বকাপের আকর্ষণই থাকত না। কেননা আর্জেন্টিনার সমর্থক সংখ্যা অনেক বেশি। ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার নেতৃত্বে শিরোপা জেতার পর বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের সংখ্যা স্রোতের মতো বেড়ে গেছে। মেসিদের আনন্দ মানেই বাংলাদেশের আনন্দ। তেমনি হারলে শোকে কাতর হয়ে যায়। যাক আর্জেন্টিনা দুনিয়া কাঁপানো ফুটবলে সুযোগ পাওয়ায় সমর্থকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।

আর্জেন্টিনা রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলবে। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল তো অনেক আগেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে। চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি দুবারের উরুগুয়ে, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ইংল্যান্ড ও স্পেন বিশ্বকাপ খেলবে। বিশ্ব জয়ীদের মধ্যে শুধু ইতালিকে দেখা যাবে না। সোমবার রাতে নিজেদের মাঠে প্লে-অফে দ্বিতীয় লেগে সুইডেনের সঙ্গে ড্র করে কপাল পুড়ে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। অ্যাওয়ে ম্যাচে সুইডেন ১-০ গোলে হেরে যায়। চূড়ান্ত পর্বে খেলতে হলে সোমবার ইতালিকে ২-০ গোলে জিততে হতো। কিন্তু তা আর হলো না। ম্যাচ ড্র করায় বাঁধ ভাঙা উৎসবে মেতে ওঠেন সুইডিশরা।

১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপ চূড়ান্ত পর্বে খেলতে ব্যর্থ হয়েছিল ইতালি। ৬০ বছর পর সেই হতাশার পুনরাবৃত্তি। নেদারল্যান্ডস ও চিলির মতো শক্তিশালী দলও নেই বিশ্বকাপে। ১৯৭৪, ১৯৭৮, ২০১০ সালের রানার্স আপ নেদারল্যান্ডস। তবে বেশ কবার চূড়ান্ত পর্বে বাদ পড়ার রেকর্ড রয়েছে তাদের। ইতালির বিষয়টি পুরোপুরি আলাদা। শৈল্পিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ইতালি ভক্তদের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। সেই দেশ বিশ্বকাপে খেলবে না তা কি ভাবা যায়।

বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী এক সময়ে মাঠ কাঁপানো ফুটবলার ছিলেন। ইতালির সঙ্গে অদ্ভুত একটা মিল রয়েছে তার ভিতর। ১৯৮২ সালে পাওনো বসির ম্যাজিকে ইতালি তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয় করে। রোসি হন আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতা। সালামের নৈপুণ্যে সেই বছর মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়। ২৭ গোল করে লিগ ইতিহাসে নতুন এক ইতিহাস গড়েন। যা এখনো কারও পক্ষে ভাঙা সম্ভব হয়নি। সালাম বললেন, ‘বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে ঘিরে আলাদা একটা উন্মাদনা রয়েছে। ইতালির সমর্থক সংখ্যাও একেবারে কম নয়। তাই বিশ্বকাপে ইতালি বাদ পড়ায় অনেকে ব্যথিত হবেন। আমি নিজেও ব্যথিত। সত্যি বলতে কি ইতালি ছাড়া বিশ্বকাপ ভাবাই যায় না’। সালাম বলেন, এমন একটা বিখ্যাত দলের অনুপস্থিতি রাশিয়া বিশ্বকাপের জৌলুস কমাবে এ নিয়ে সংশয় নেই। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, অথচ তাদের দেশে সেই মানের খেলোয়াড় সৃষ্টি হচ্ছে না। মালদিনি, পাওলো বসি, ব্যাজিওরা বিশ্বকাপ কাঁপিয়েছেন। বিপদের সময় দলকে টেনে নেবেন সেই খেলোয়াড় নেই।’ বড় একটা ধাক্কা খেল, এখন নিশ্চয় ফুটবল ঘিরে বড় কোনো পরিকল্পনা নেবে ইতালি। একটা দলের সময় খারাপ যেতেই পারে। আমার বিশ্বাস ইতালি আবারও স্বরূপে ফিরে আসবে।

বাফুফে নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নন্দিত ফুটবলার শেখ মো. আসলাম বলেন, ইতালি ছাড়া বিশ্বকাপ তা আমি ভাবতেই পারছি না। ২০০৬ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের পর থেকে ইতালির সময়টা খারাপ যাচ্ছিল। নতুন কোনো খেলোয়াড় আসছে না। বুড়োদের নিয়ে খেলছে। মালদিনি, রোসি, ব্যাজিও, শিলাচির নাম এখনো সবার মুখস্থ। এখন ইতালির পরিচিতদের মধ্যে আছেন গোলরক্ষক বুফন। তাও আবার বয়স হয়ে গেছে। পরিকল্পনাহীন হয়ে পড়ে ইতালির ফুটবল। যার বড় মাশুল দিতে হলো বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে। নেদারল্যান্ডস কখনো বিশ্বকাপ জেতেনি। তবে ইতালির বিষয়টি পুরোপুরি আলাদা। চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, বেশ কবার রানার্স আপ। বাংলাদেশেও ইতালির অনেক ভক্ত রয়েছে। বিশ্বকাপ হবে ইতালি খেলবে না। তাতো সত্যিই মানার মতো নয়। বিশ্বকাপের আকর্ষণ এতে অবশ্যই ম্লান হবে।

সর্বশেষ খবর