মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাসানের বোলিং মালিকের ব্যাটিং

মেজবাহ্-উল-হক


হাসানের বোলিং মালিকের ব্যাটিং

হাসান আলী ৩.৩ ওভারে মাত্র ২০ রানে কুমিল্লার পক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে ঢাকার ব্যাটিংয়ে ধস নামান

বাইশগজে সাময়িক উত্তেজনা! মোসাদ্দেক হোসেনকে সরাসরি বোল্ড করে আঙ্গুল উঠিয়ে হাসান আলী নিজেই আউটের সিদ্ধান্ত দিলেন। তারপর ড্রেসিং রুমের পথ দেখিয়ে দিলেন। পাকিস্তানি ক্রিকেটারের এই আচরণ পছন্দ হয়নি মোসাদ্দেকের। রাগে তেড়ে যেতে উদ্যত হোসেন, কিন্তু দ্রুত গতিতে তামিম ইকবাল এসে মোসাদ্দেককে জড়িয়ে ধরে পরিস্থিতি শান্ত করলেন। শুধু আচরণেই নয়, গতকাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের পাকিস্তানি বোলার হাসান বোলিংয়েও দেখিয়েছেন ঐদ্ধত্য। একে একে ঢাকা ডায়নামাইটসের পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন— পাঁচটিই বোল্ড! অন্য কোনো ফিল্ডারের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়নি।

হাসান আলী শিকার করা শুরু করেছিলেন ঢাকার ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান এভিন লুইসের উইকেট দিয়ে। ক্যারিবীয় তারকাকে উইকেটে সেট হওয়ার সুযোগই দেননি তিনি। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই লুইসকে সাজঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। একই ওভারের তৃতীয় বলে ঢাকার ‘লোকাল হিরো’ মেহেদী মারুফকে বোকা বানিয়ে দেন। এরপর তার শিকার হয়েছেন মোসাদ্দেক, মোহাম্মদ সাদ্দাম ও আবু হায়দার রনি। মজার বিষয় হচ্ছে, হাসান আলীর শিকার ঢাকার পাঁচ ব্যাটসম্যানই কিন্তু দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছাতে পারেন। তার শিকার পাঁচ ব্যাটসম্যানের মোট রানের যোগফল মাত্র ৯! এর মধ্যে লুই একাই করেছেন ৭ রান, মোসাদ্দেক ও সাদ্দাম ১ রান করে এবং আবু হায়দার ও মেহেদী মারুফ রানের খাতাই খুলতে পারেননি। হাসান আলীর বোলিং ফিগার ৩.৩-০-২০-৫!

উইকেট মাত্র একটি পেলেও কাল সবচেয়ে কিপটামি দেখিয়েছেন কুমিল্লার আফগান ‘সেনা’ রশিদ খান। এই লেগ স্পিনার চার ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৭ রান। তবে কাল টি-২০তে দুর্লভ ‘মেডেন ওভার’ও একটি করেছেন। এই দুই বোলারই ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে ডায়নামাইটসকে। ভয়ঙ্কর ব্যাটিং লাইন আপ নিয়েও কাল কুমিল্লার বিরুদ্ধে ১২৮ রানের বেশি করতে পারেনি। আশ্চার্যের বিষয় হচ্ছে, এই ‘ছোট’ স্কোরের মধ্যে এক ব্যাটসম্যানের ৭৬ রানের একটি সাইক্লোন ইনিংস ছিল। মজার তথ্য হচ্ছে, তিনি নিয়মিত ব্যাটসম্যানও নন। বলা হচ্ছে সুনীল নারাইনের কথা! চমক দেখাতে কাল সাকিব আল হাসান ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে পাঠিয়ে ছিলেন রহস্যময়ী নারাইনকে। কিন্তু ক্যারিবীয় তারকা মাত্র ৪৫ বলে ৭৬ রানের ক্যারিশম্যাটিক ইনিংস খেলে ক্যাপ্টেনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন! ৫টি বিশাল ছক্কার সঙ্গে হাঁকিয়েছেন ৭টি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি। কিন্তু নারাইন ছাড়া কেউ অধিনায়কের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারেননি। নারাইন ছাড়া কাল ঢাকার আর মাত্র একজনই ডাবল ফিগারে ব্যক্তিগত স্কোরকে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছেন, তিনি কুমার সাঙ্গাকারা! সে ইনিংসই কিনা টি-২০ সঙ্গে মানানসই নয়— ৩০ বলে ২৮ রান। ছক্কা নেই, বাউন্ডারি মাত্র ৩টি।

গতকাল মূলত প্রথম ইনিংসেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ঢাকা! কেন না যে মাঠে দুই শতাধিক রানও হয় সেখানে ১২৯ রানের টার্গেট দিয়ে জয়ের আশা করা ‘দুরাশা’ই বটে! তবে টি-২০তে ছোট স্কোরও অনেক সময় ভয়ঙ্কর হয়ে যায়! ছোট টার্গেট মনে করে প্রতিপক্ষ ‘বেশি সাবধান’ কিংবা ‘রিলাক্স’ হতে গিয়েই বিপত্তি ঘটিয়ে ফেলে। কাল একই সমস্যা পড়েছিল কুমিল্লাও। তবে এবারও ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে আসেন আরেক পাকিস্তানি— শোয়েব মালিক! ৫৩ বলে ৫৪ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে ভিক্টোরিয়ানসকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। কাল দুই পাকিস্তানি ক্রিকেটারই কুমিল্লাকে নিরাপদে পৌঁছে দেয়। এই জয়ে ঢাকাকে টপকে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেল ভিক্টোরিয়ানস।

সর্বশেষ খবর