মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্বস্তির জয় রংপুর রাইডার্সের

মেজবাহ্-উল-হক

স্বস্তির জয় রংপুর রাইডার্সের

ম্যাচ জয়ের পর অধিনায়ক মাশরাফিকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর রাইডার্সের কর্ণধার সাফওয়ান সোবহান —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সত্যিকারের ক্রিকেট লড়াই বলতে যা বোঝায়, তাই দেখা গেল কাল মিরপুরে রংপুর রাইডার্স ও সিলেট সিক্সার্সের ম্যাচে। পরতে পরতে উত্তেজনা। বার বার পরিবর্তন হয়ে হয়েছে খেলার গতি। দুই দলের ভাগ্য দুলেছে পেন্ডুলামের মতো। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জিতে গেল রংপুর। টানা তিন ম্যাচ হারের পরও জয়ে ফিরল উত্তরাঞ্চলের দলটি। ১৩ বলে ১ রান! ক্রিস গেইলের নামের পাশে বড্ড বেমানান লাগছিল স্কোরটা! ছক্কা-ঝড় দেখতে আসা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দর্শকরাও বোধহয় তখন মহাবিরক্ত! যদিও আরেক ওপেনার ভয়ঙ্কর ম্যাককালাম তার আগ্রাসী রূপটা প্রদর্শন করছিলেন। সিলেটের বোলার শুভাগত হোমের ওভার থেকে দুটি ছক্কাও হাঁকিয়েছেন। কিন্তু গেইল-ঝড় দেখতে এসে কী আর ম্যাককালামের ছক্কায় মন ভরে!

গ্যালারির দর্শকরা তখন যেন উসখুস করছিলেন! হয়তো তাদের মনে প্রশ্নও জাগছিল, গেইল কি আর স্বরূপে ফিরবেন না? এমন প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিকও নয়। কেন না টি-২০র বরপুত্র ১৮টি সেঞ্চুরি করলেও এই ২০১৭ সালে তার কোনো সেঞ্চুরি নেই। ১৪তম বলেই গেইল নিজের সামর্থ্য বুঝিয়ে দিলেন। সিলেটের অধিনায়ক নাসিরের বলে বিশাল ছক্কা। তারপর খেললেন ৫০ রানের ঝড়ো ইনিংস। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতলেন গেইলই। লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকানোই কঠিন। কিন্তু গেইলের ছক্কায় বল গিয়ে আছড়ে পড়ল লংঅনের গ্যালারির কাঁটা তারের বাউন্ডারি-ওয়ালে। পরের ওভারে সিক্সার্সের লঙ্কান বোলার গুনাথিলাকার পর পর দুই বলে আরও দুটি ছক্কা। একটি মিড উইকেট, আরেকটি মিড অফ দিয়ে। ইংলিশ তারকা লিয়াম প্লাঙ্কেটের বলে স্কোয়ার লেগ দিয়ে যে ছক্কা হাঁকিয়েছেন সেটি হতে পারে এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ছক্কা! গেইল তার পঞ্চম ছক্কাটি হাঁকিয়েছেন নাসিরের বলেই। কাঁটায় কাঁটায় ৫০ রান করার পরই আউট হয়েছেন গেইল। অবশ্য গেইলের আগেই বিদায় নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের তারকা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। কিউই তারকাও হাঁকিয়ে তিন তিনটি ছক্কা। এই ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই আউটও হয়েছেন তিনি। গতকাল পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৫০ রান করে রংপুর রাইডার্স। গেইল-ম্যাককালাম দুই পাশ থেকেই আক্রমণ করতে থাকেন বোলারদের ওপর। রংপুরের স্কোরও দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। তারপর হঠাৎ ছন্দপতন। নাসিরকে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন ম্যাককালাম। ২১ বলে ৩৩ রান করে সাজঘরে ফিরে যান এই ওপেনার। ৮০ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন ঘটে রাইডার্সের। সঙ্গীর বিদায়ে ব্যাটিংয়ে মন দিতে পারলেন না ক্রিস গেইলও। ৮ রানের ব্যবধানে তিনিও আউট।

রংপুরের ইনিংসের শেষ দিকে মাত্র ১২ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলেছেন রংপুরের ইংলিশ তারকা রবি বোপারা। ২১ বলে ২৫ রান করেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৯ রান করে রাইডার্স। দারুণ বোলিং করেছেন সিলেটের আবুল হাসান রাজু। ৪ ওভারে ২৪ রানে নিয়েছেন দুই উইকেট। গেইলকেও আউট করেছেন স্থানীয় এই তারকা পেসার। গতকাল দর্শকরা মাঠে এসেছিলেন গেইল-ম্যাককালামের ঝড় দেখতে। দুই মারকুটে ব্যাটসম্যান ৮টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। ৫০ রানের ইনিংসের জন্য কাল ম্যাচ সেরার পুরস্কারও পেয়েছেন ক্যারিবীয় তারকা। তবে কালকের ম্যাচে গেইল হিরো হলেও ট্যাজিক হিরো সাব্বির রহমান। জাতীয় দলের এই তারকা ব্যাটসম্যান ৪৯ বলে ৭০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি। তবে দলকে তিনি তুলে এনেছেন খাদ থেকে। শুরুতে মাত্র ২৫ রানে উইকেট হারি সিক্সার্স যখন মহাবিপদে তখনই ব্যাট হাতে বিরত্ব দেখান সাব্বির। নাসিরকে সঙ্গে নিয়ে চিত্রনাট্যই পাল্টে দিয়েছিলেন প্রায়। কিন্তু পারেননি। তবে তাদের জুটিটা ছিল অসাধারণ। দুজনে মিলে করেন ১১৭ রান। সাব্বিরের ইনিংসে ছিল দুই ছক্কার সঙ্গে ৭টি বাউন্ডারি। নাসির খেলেছেন ৫০ রানের ইনিংস। সিক্সার্স দলপতি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন। এক প্রান্তে থেকে চেয়ে চেয়ে দেখলেন তার দলের পরাজয়। তবে শেষ ওভারে হাফ সেঞ্চুরি করে ব্যক্তিগত রেকর্ডের অধ্যায়টা সমৃদ্ধ হলেও তার ‘দ্য ফিনিসার’ ঔজ্জ্বল্যতা যেন খানিকটা ম্লান হয়ে গেল। নাসির না পারলেও কাল ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন রংপুরের অধিনায়ক মাশরাফি। ১৬তম ওভারে বল হাতে নিয়ে দিয়েছেন মাত্র দুই রান। ওই এক জাদুকরী ওভারই যেন বদলে দেয় রংপুরের ভাগ্য। কেন ওই ওভারের আগে ম্যাচটা ছিল সিলেটের হাতের মুঠোয়। ২৪ বলে জয়ের জন্য তখন দরকার ছিল ৩৫ রান। হাতে ছিল ৭ উইকেট। কিন্তু রানের গতি থামিয়ে চাপে ফেলে দেন সিলেটকে। পরের ওভারে সাব্বিরকে আউট করে ম্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন লঙ্কান বোলার থিসারা পেরেরা। তারপর ৭ রানের দারুণ এক মধুর জয়!

স্কোর

ঢাকা ডায়নামাইটস : ১২৮/১০, ১৮.৩ ওভার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১২৯/৬, ১৯.৪ ওভার

রংপুর রাইডার্স : ১৬৯/৭, ২০ ওভার, সিলেট সিক্সার্স : ১৬২/৪, ২০ ওভার

সর্বশেষ খবর