সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এত প্রাপ্তি তবু বিতর্কিত হাতুরা

আসিফ ইকবাল

এত প্রাপ্তি তবু বিতর্কিত হাতুরা

২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর-প্রায় সাড়ে তিন বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হেড কোচ ছিলেন হাতুরাসিংহে। এই সময়ে কখনোই শোনা যায়নি তার সঙ্গে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সুসম্পর্কের কথা। আসলে দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার একটি দূরত্ব তৈরি করে রেখেছিলেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি দেশের শীর্ষ ৩০ ক্রিকেটারের প্রোফাইল চেয়ে নিয়েছিলেন বিসিবির কাছ থেকে। প্রোফাইলে তিনি ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত সমস্ত ডাটা সংগ্রহ করেছিলেন। প্রোফাইল নেওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বিসিবিকে বলেছিলেন, ক্রিকেটারদের এক সুতোয় বেঁধে নিতে এটা জরুরি। হারতে হারতে খাঁদের কিনারায় চলে আসা দলকে সাফল্যের পাইপ লাইনে টেনে তুলতে মরিয়া বিসিবিও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তখন। হাতুরাসিংহে ব্যক্তিগত বিষয়গুলো জেনে ঠাণ্ডা মাথায় ক্রিকেটারদের পরিচালনা করেছেন। দলও সাফল্য পেয়েছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল, ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়, আবার টেস্ট ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোকে হারিয়ে তিনি একমে বা অদ্বিতীয় হয়ে উঠেন। দলের এমনতর সাফল্যে বিসিবিও আনন্দিত। কোচ যা চেয়েছেন, তাই দিয়েছে উজার করে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রকারান্তরে নিজেকে স্বৈরাচারী করে তুলেন হাতুরাসিংহে। প্রতিটি সিরিজেই তিনি নিজের অবস্থানকে শক্ত ভীত দিতে কোনো না কোনো বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। কখনো ক্রিকেটারদের সঙ্গে লেগেছেন। কখনো নির্বাচক প্যানেলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের চাওয়াকে পূরণ করেছেন। বিসিবির কর্তাব্যক্তিরা বিষয়গুলো জানতেন। কিন্তু দল সাফল্য পাচ্ছে বলে কিছু বলেননি। আসলে ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাতুরাসিংহের  দূরত্ব ওই ব্যক্তিগত ডাটা চাওয়া থেকেই শুরু হয়েছিল।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস দলের সহকারী কোচ। তার আগে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ব্যাটিং কোচ ছিলেন। কুমার সাঙ্গাকারার পরামর্শে তাকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় বিসিবি। গত সাড়ে তিন বছরে টাইগারদের সাফল্য বলছে সঠিক লোকের (চন্ডিকা হাতুরাসিংহে) হাতেই দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল। কিন্তু এখন সময় বলছে, কোচ হাতুরাসিংহে যতটা সফল, ব্যক্তি হাতুরাসিংহে তার বিপরীত। তিনি দোষারোপ করতেই ওস্তাদ।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। সেই সফরে টেস্ট সিরিজ খেলেননি সাকিব আল হাসান। টানা খেলার ধকল সামলাতে বিশ্রাম নিয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি কোচ। পরশু বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আলাপের সময় স্পষ্ট করেই বলেছেন, দেশের সেরা একজন ক্রিকেটারের হুট করে বিশ্রামের বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি। আবার আফ্রিকা সফরে সিনিয়র ক্রিকেটাররা তার নিদের্শনা মানেননি বলে দল সাফল্য পায়নি। সিনিয়র ক্রিকেটাররা (পঞ্চ পাণ্ডব-মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ) দলকে এক সুতোয় বাঁধার অন্তরায় হয়েছিলেন তার কোচিংয়ের গোটা সময়। এসব কারণেই তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। সত্যিই কি তাই? আজকের হাতুরাসিংহে কিন্তু বাংলাদেশের কোচ হয়েছেন বলেই হয়েছেন। হাতুরার অভিযোগগুলোকে বিসিবি সভাপতি খুব আমল দিয়েছেন, তেমন নয়। কারণ, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘আমরা বিষয়গুলো জানতাম। তিনি বলেছেন। আমরা জেনেছি।’

হাতুরাসিংহে ঢাকা ছেড়েছেন গতকাল। এসেছিলেন হঠাৎ। চলেও গেছেন হঠাৎ। চলে যাওয়ার আগে শুধু শুধু দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের উপর আঙুল দেখিয়ে নিজেকেই বাঁচাতে চেয়েছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে তিনি আসলে বাংলাদেশ থেকে মীর জাফরের তকমাটা গায়ে সেঁটে ফিরে গেছেন নিজের জন্মভূমি শ্রীলঙ্কার কোচের দায়িত্ব নিতে।

সর্বশেষ খবর