মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বছরটা রাঙিয়ে দিল মারিয়ারা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বছরটা রাঙিয়ে দিল মারিয়ারা

সাফ ট্রফি জেতা মারিয়া আঁঁখিদের সঙ্গে গতকাল বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন দীর্ঘক্ষণ সময় কাটালেও বড় কোনো ঘোষণা আসেনি। তাই এমন আনন্দের মধ্যেও হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে কিশোরী ফুটবলারদের —বাফুফে

২০১৭ সালে ফুটবলের প্রাপ্তিটা শূন্যের কোঠায় থেকে যেত। জাতীয় দল কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেয়নি। তবে পুরুষ ফুটবলে অনূর্ধ্ব-১৮ দল চমত্কার পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্ভাগ্যক্রমে দেশকে শিরোপা উপহার দিতে পারেননি জাফর ইকবালরা। নেপালের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে অবস্থান করলেও হেড টু হেডের সমীকরণে রানার্স আপ হয়েই দেশে ফিরতে হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নৈপুণ্যও ছিল চোখে পড়ার মতো। এএফসি কাপ বাছাই পর্বে কাতারের মাটিতে কাতারকে পরাজিত করে চমক দেখায়।

ভালো খেলার সান্ত্বনা হিসেবে শুধু বছরটা শেষ করতে হয়নি। এক শিরোপায় বছরটা রঙিন হয়ে গেছে। তা এসেছে মেয়েদের সাফল্যের বদৌলতে। অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের কিশোরীরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ১-০ গোলে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। ফুটবলে কোনো আসরে অনেক দিন পর ফাইনালে ভারতকে হারাল। ঘরের মাঠে টুর্নামেন্ট হলেও মারিয়ারা শিরোপা জিতবে এই আশা কারোর ছিল না। কেননা পুরুষদের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে ভারতই বরাবর ফেবারিট। গত বছরই মূল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের মহিলা জাতীয় দল হেরে যায় ভারতের কাছে। শিরোপার হিসেব কেউ করেননি। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ও অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, ঘরের মাঠে খেলা তাই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দেশবাসীকে শিরোপা উপহার দিতে চাই। কথা রেখেছেন গুরু-শিষ্য। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন। মারিয়ারা কতটা নির্ভার ছিল যে ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে টানা দুই ম্যাচে পরাজিত করেছে। যা বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে বিরল ঘটনায় বলা যায়। চার ম্যাচে ১৩ গোল দিয়েছে। কিন্তু হজম করেনি একটিও। যা আরও একটি রেকর্ড হয়ে থাকল। ফুটবলে পুরুষ জাতীয় দল ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। সত্যি বলতে কি ফুটবলে এখন যত আশা মেয়েদের ঘিরেই। নেপাল ও তাজিকিস্তানে আঞ্চলিক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ১৪ বছর বয়সী দল। এএফসি কাপ বাছাই পর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলে অনূর্ধ্ব-১৬ দল। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স আপ। এবারতো অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ জিতে আবারও যোগ্যতার প্রমাণ দিল মেয়েরাই। বছরে যেখানে ফুটবল ছিল আড়ালে বিজয় মাসে ট্রফি উপহার দিয়ে বছরটা রাঙিয়ে দিলেন মারিয়ারা।

এই শিরোপা যেন শেষ শিরোপা না হয় তা নজর দিতে হবে বাফুফেকে। একের পর এক সাফল্য এনে দিচ্ছে মেয়েরা। দেশবাসী এতে খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ বিজয়ী বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কথা হচ্ছে মেয়েরা যাতে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে সেই ধরনের কোনো কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে কি বাফুফে। যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় ৬ হাজার ডলার বোনাস ঘোষণা করেছেন। কম অর্থ হলেও ক্রীড়ামন্ত্রণালয় থেকে মেয়েরা যে পুরস্কার পাচ্ছে এটাই বড় বিষয়।

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন গতকাল ট্রফি বিজয়ী মারিয়াদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেই সাক্ষাতে সভাপতির মুখ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি। প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ১০ হাজার টাকার পাশাপাশি বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এতেই কি দায়িত্ব শেষ হয়ে গেল। নারী ফুটবলারদের অধিকাংশ খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের। পরিবার নিয়ে তিন বেলা অনেকে ঠিকমতো খেতে পারেন না। এই দরিদ্র ফুটবলারদের জন্য বেতনের ব্যবস্থা করলে বাফুফে কি ফকির হয়ে যাবে?

সালাউদ্দিন বলছেন আমরা জাতীয় দলে থাকা ফুটবলারদের ভাতা দিচ্ছি। সামনে বছর মেয়েদের পেশাদার লিগ চালু করব। এক্ষেত্রে ক্লাবগুলোর সহযোগিতা দরকার। মেয়েদের ফুটবল উন্নয়নে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিচ্ছি। বেতনেরও চিন্তা ভাবনা করছি। কিন্তু সবকিছু বাফুফের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। এখানে সভার সহযোগিতা দরকার।

সর্বশেষ খবর