শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

পোল্যান্ড সেনেগাল কলম্বিয়ার ত্রিমুখী লড়াই

বিশ্বকাপের গ্রুপ বিশ্লেষণ

পোল্যান্ড সেনেগাল কলম্বিয়ার ত্রিমুখী লড়াই

রাশিয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে সহজ গ্রুপ সম্ভবত এইচ। অন্যদিক থেকে কঠিনও। এই গ্রুপে বিশ্বকাপের ফেবারিটদের কেউ নেই। আবার সাবেক কোনো বিশ্বজয়ীও নেই। তবে চারটা দলের শক্তিমত্তাই প্রায় কাছাকাছি। পোল্যান্ড বর্তমান ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেকটা উপরের দিকে থাকলেও তাদেরকে বড় দল হিসেবে মানা হয় না। বিশ্বকাপ তো বটেই ইউরো কাপেও তাদের অর্জন খুব একটা বড় নয়। অন্যদিকে কলম্বিয়া গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে নাম কুড়ালেও তাদেরকে পরাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। সেনেগাল আর জাপানও মাঝারি মানের দল। এই গ্রুপে চার দলের সম্ভাবনাই প্রায় সমান। গ্রুপ এইচ নিয়ে লিখেছেন রাশেদুর রহমান —

 

পোল্যান্ড

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে দুর্দান্ত খেলেছে পোল্যান্ড। অসাধারণ খেলেছেন রবার্ট লিওয়ান্দোভস্কি। বাছাই পর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি (১৬টি)। বাছাই পর্বের ১০ ম্যাচের ৮টিতেই জিতেছে পোলিশরা। হেরেছে মাত্র একটিতে। দারুণ এই রেকর্ডটাই তাদেরকে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দলে তুলে এনেছিল। বিশ্বকাপে পোলিশরা এর আগে ৭ বার অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৪ এবং ১৯৮২ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে তারা। ১৯৭৪ সালে তারা তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে হারিয়েছিল ব্রাজিলকে (১-০)। ১৯৮২ সালের পর আরও তিনবার বিশ্বকাপ খেললেও খুব একটা ভালো করতে পারেনি তারা। দুবার তো গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছে। ২০০৬ সালের পর আর বিশ্বকাপই খেলতে পারেনি। তবে নতুন রূপে ফিরে আসছে পোল্যান্ড। দলের তারকা ফুটবলার রবার্ট লিওয়ান্দোভস্কি দলটাকে সেরাদের সারিতে নিয়ে গেছেন। এরই মধ্যে তিনি পোল্যান্ডের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন (৫১ গোল)। এছাড়াও বেশ কয়েকজন দারুণ ফুটবলার রয়েছে পোল্যান্ডের। কামিল গ্রসিকি, আরকাডিসুজ মিলিক আর লুকাস পিসজেকরা অসাধারণ ফুটবল খেলে চলেছেন। এই দলটা বিশ্বকাপের ফেবারিট না হলেও অনেকদূর যেতে পারে পোলিশরা।

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ৭

কোচ : অ্যাডাম নাওয়ালকা

অধিনায়ক : রবার্ট লিওয়ান্দোভস্কি

তারকা : রবার্ট লিওয়ান্দোভস্কি

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ৮ম

বিশ্বকাপে সেরা ফল : তৃতীয় (১৯৭৪ ও ১৯৮২)

 

কলম্বিয়া

রাদামেল ফ্যালকাও গত বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। তাই বলে কলম্বিয়ানরা ছেড়ে কথা বলেনি। ব্রাজিল বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে তারা। জেমস রদ্রিগেজ তো বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতাই হয়েছিলেন (৬টি)। শেষ ষোলতে উরুগুয়েকে হারিয়েছিল তারা ২-০ গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিলের কাছে ২-১ গোলে হারলেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন রদ্রিগেজরা। রাশিয়া বিশ্বকাপেও কলম্বিয়া অন্যতম এক দল হিসেবে অংশ নিচ্ছে। ল্যাটিন অঞ্চলের বাছাই পর্ব পাড়ি দেওয়াটাই কঠিন কাজ। সেই কাজটা তারা খুব ভালোভাবেই সেরেছে। চিলি, প্যারাগুয়ে আর ইকুয়েডরের মতো দল বাদ পড়েছে বাছাই পর্ব থেকেই। জেমস রদ্রিগেজ বাছাই পর্বেও করেছেন ৬ গোল। এই দল রাশিয়া বিশ্বকাপে ভালো কিছু করবে বলেই ধরে নিচ্ছেন ফুটবলবোদ্ধারা। কেবল জেমস রদ্রিগেজই তো নন, দলে আছেন রাদামেল ফ্যালকাও, গুটিরেজ, হুয়ান কুয়াডরাডো, কার্লোস বাক্কাদের মতো তারকা। কলম্বিয়ার সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো তাদের কোচ। হোসে পেকারম্যান এক সময় আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ম্যাজিক্যাল কিছু করে দেখাতে পারেন এ আর্জেন্টাইন।

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ১৩

কোচ :

হোসে পেকারম্যান

অধিনায়ক :

জেমস রদ্রিগেজ

তারকা :

রাদামেল ফ্যালকাও

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ৬ষ্ঠ

বিশ্বকাপে সেরা ফল : কোয়ার্টার ফাইনাল (২০১৪)

 

সেনেগাল

সেনেগালকে বলা হয় ‘লায়নস অব তেরেঙ্গা’। আফ্রিকান ফুটবলে অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিতি আছে তাদের। আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাই পর্বে তৃতীয় রাউন্ডে অপরাজিত থেকেই চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে সেনেগাল। ২০০২ সালে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই সবাইকে চমকে দিয়েছিল তারা। সেবার গ্রুপ পর্ব থেকে সেনেগাল বিদায় করেছিল দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে এবং ১৯৯৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। শেষ ষোলতে সেনেগাল হারিয়ে দেয় ইউরোপিয়ান ফুটবলের অন্যতম শক্তিশালী দল সুইডেনকে। চারদিকে সাড়া পড়ে যায়। সেনেগালকে নিয়ে নতুন করে হিসেব কষতে বসেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে তুরস্কের কাছে হেরে শেষ হয় সেনেগাল রূপকথার। পাপা ডিওপ আর হেনরি কামারারা সেনেগালকে একটা মাইলফলক এনে দেয়। তবে এরপর আর বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বই নিশ্চিত করতে পারেন তেরেঙ্গার সিংহরা। দীর্ঘদিন পর বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে সেনেগাল। দলে আছেন স্যাডিও মেইন, মুসা সো, মুসা কনেট এবং মেম ডিওফদের মতো তারকা। আরও একবার সেনেগালের মানুষদের এনে দিয়েছেন স্বপ্ন দেখার প্রেরণা। রাশিয়ায় তারা প্রতিপক্ষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ২৪

কোচ : আলিউ সিসে

অধিনায়ক :

চেইখো কোয়েট

তারকা :

স্যাডিও মেইন

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ২য়

বিশ্বকাপে সেরা ফল : কোয়ার্টার ফাইনাল (২০০২)

 

জাপান

এশিয়ান ফুটবলের অন্যতম সেরা প্রতিনিধি জাপান। ১৯৯৮ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেলছে সামুরাইরা। এর মধ্যে দুবার গ্রুপ পর্বের বাধা ডিঙিয়ে নকআউট পর্বও খেলেছে। তবে শেষ ষোলর বাধা পাড়ি দিতে পারেনি তারা। টানা ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলতে জাপান যাচ্ছে রাশিয়ায়। বাছাই পর্বে এশিয়ান অঞ্চলে আধিপত্য দেখিয়েছে তারা আরও একবার। তবে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব মোটেও সহজ হবে না। কলম্বিয়া আর পোল্যান্ড ছাড়াও এইচ গ্রুপে জাপানকে খেলতে হবে সেনেগালের সঙ্গে। কঠিন এই গ্রুপ থেকে নকআউট পর্ব খেলার মতো অবশ্য ভালোমানের বেশ কয়েকজন ফুটবলার রয়েছে জাপানের। শিনজি ওকাজাকি, শিনডি কাগাওয়া এবং কেইসুকে হোন্ডা। জাপানের তিন প্রধান তারকা অসাধারণ ফুটবল খেলছেন ইউরোপ-আমেরিকায়। তাছাড়া মিডফিল্ড আর ডিফেন্স লাইনটাও অসাধারণ জাপানের। অধিনায়ক মাকুতু হাসিবি মিডফিল্ডে আলো ছড়াচ্ছেন। ডিফেন্সে বাধ দিয়ে রাখছেন মায়া ইয়োশিদা এবং নাগাতুমুরা। রাশিয়া বিশ্বকাপে জাপানের নকআউট খেলার সম্ভাবনা যথেষ্ট কম। পোল্যান্ড, কলম্বিয়া আর সেনেগালের সঙ্গে অতীত রেকর্ড খুব একটা ভালো নয় সামুরাইদের। এদের মধ্যে কেবল পোল্যান্ডকেই অতীতে হারিয়েছে জাপান (২বার)।

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ৫৬

কোচ :

ভাহিদ হালিলহডজিক

অধিনায়ক :

মাকুতু হাসিবি

তারকা :

শিনজি কাগাওয়া

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ৬ষ্ঠ

বিশ্বকাপে সেরা ফল : দ্বিতীয় রাউন্ড (২০০২ ও ২০১০)

সর্বশেষ খবর