রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ড্র করাটাই জয়ের সমান

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

ড্র করাটাই জয়ের সমান

তামিম ফিরছেন সাজঘরে। বাংলাদেশের সেরা ওপেনারকে আউট করার নায়ক সান্দাকানকে ঘিরে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে চতুর্থ দিনেও চোখে পড়ার মতো কোনো টার্ন নেই। আন-ইভেন বাউন্স নেই এমনকি বল নিচুও হচ্ছে না! উইকেট এমন আচরণ করছে যেন এখানে ব্যাটসম্যান না চাইলে তাকে আউট করার সাধ্য বোলারদের নেই!

চতুর্থ দিনে কোথায় উইকেটে ভেঙে ক্ষত তৈরি হওয়ার কথা। আর সেই ক্ষততে বল ফেলেই সফল হবেন বোলাররা। কিন্তু উইকেট এখনো ব্যাটসম্যানদের বন্ধু। এই উইকেটে বোলাররা যেন ‘বলির পাঁঠা’! অথচ চট্টগ্রামের উইকেটে দ্বিতীয় দিন থেকেই বল ভয়াবহ টার্ন করার কথা! প্রথম দিনের খেলা শেষে তামিম ইকবাল হাসতে হাসতে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে আগে ব্যাটিং করছি। এটা আশা করবো যে, শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ে আসার পরই যাতে বল ঘুরতে থাকে! আমি এটাই আশা করতে পারি আসলে।’

কিন্তু তামিমের আশা পূরণ হয়নি। উইকেট এখনো ব্যাটিং স্বর্গ! তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশ দলের অলিখিত কোচ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ বলেন, এ উইকেটে তিনি শেষ দিন পর্যন্ত বল টার্ন করার সম্ভাবনা দেখছেন না। গতকাল চতুর্থ দিনে উইকেটের আচরণ দেখে মনে হয়েছে খালেদ মাহমুদ যথার্থই বলেছেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তিনিও ইঙ্গিতে জানালেন উইকেট এখনো ব্যাটিং সহায়ক! তাইজুলকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, লঙ্কান স্পিনাররা কীভাবে সফল হলেন? এই স্পিনারের দাবি, ‘ওরা যে খুব ভালো বোলিং করেছে, তা আমি বলবো না। সেটা করলে আমরা এতোটুকু সময়ের মধ্যে ৮০ রান করতে পারতাম না। যেগুলো ভালো জায়গায় বল হয়েছে, তাতে ওরা সফল ছিল। আমাদের উইকেট পড়ে গেছে। এ জন্য মনে হচ্ছে ওরা ভালো বোলিং করছে। আমি ও রকম মনে করি না।’

তাইজুলের কথা যুক্তি আছে! কেন না গতকাল মাত্র ৮১ রানে বাংলাদেশের তিন উইকেটের পতন ঘটলেও এখানে বোলারদের তেমন একটা কৃতিত্ব ছিল না। ওপেনার ইমরুল কায়েস অযথাই শট খেলতে গিয়ে স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন। আর তামিম যেন উইকেট কিপারকে ক্যাচ প্রাকটিস করিয়েছেন। দিনের শেষ ওভারে বেশি সতর্ক থাকতে গিয়ে যেন টেনশনে কাঁপতে কাঁপতে উইকেটটি হারিয়েছেন। গতকাল তাইজুলকে আরেকটি প্রশ্ন শুনতে হয়েছে? যে প্রশ্নের উত্তর ইচ্ছা করেই দেননি এই স্পিনার!

প্রশ্নটি হচ্ছে-

এই ম্যাচ শুরুর আগে যে বলা হচ্ছিল ?উইকেট স্পিনবান্ধব হবে, বল খুবই টার্ন করবে, ব্যাটসম্যানদের জন্য রান করা অনেক কঠিন হবে। স্পিনাররা যেমন উইকেট আশা করেছিল তেমন উইকেট কি পেয়েছেন?

তাইজুল মাইক্রোফোনের কাছ থেকে মুখটা দূরে নিয়ে গিয়ে ইতস্তত হয়ে বলতে থাকেন, ‘আসলে ইয়ে..., আসলে ইয়ে....!’ এখানে আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, স্পিনাররা যেমন উইকেট আশা করেছিলেন এটা তেমন নয়।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটের যে আচরণ তা দেখা গেছে কেবল ‘টাইমলেস’ টেস্টের সময় দেখা গেছে। যখন টেস্ট চলেছে ১৩-১৪ দিন পর্যন্ত। বাধা ধরা কোনো সময় ছিল না। ম্যাচের রেজাল্ট হতে হবে এটাই ছিল আসল। কিন্তু এখন তো ‘টাইমলেস’ যুগ নয়। প্রতিটি দলই চায় ৫ দিনের মধ্যে জয়-পরাজয় দেখতে। কিন্তু বাংলাদেশ কি এই ম্যাচে জয়-পরাজয় চেয়েছিল, নাকি?

একটা বিষয় তো পরিষ্কার যে, সাকিব আল হাসান ইনজুরিতে পরার পর বাংলাদেশের গেম প্ল্যান পুরোটাই বদলে গেছে। কেন না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার একাই দলে দুই ক্রিকেটারের ভূমিকা পালন করে থাকেন। দলের সেরা ব্যাটসম্যান এবং সেরা স্পিনার। বাংলাদেশ দলে একে তো সাকিব নেই, অন্যদিকে শ্রীলঙ্কান দলে রয়েছেন রঙ্গনা হেরাথের মতো পরীক্ষিত স্পিনার। সে কারণেই কিনা স্পিন উইকেট বানাতে সাহস পায়নি বিসিবি!

ড্র-র চিন্তা করেই  যে এমন ব্যাটিং সহায়ক উইকেট বানানো হয়েছিল, তা বোঝার জন্য উইকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই! তাহলে কি তামিম সব কিছু জেনেও প্রথম দিন মিডিয়াকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছিলেন, নাকি বিসিবির পলিসি তিনি জানতেনই না! এখন যে অবস্থা ম্যাচে ড্র করাটাই বাংলাদেশের জয়ের সমান।

এমন উইকেট বানানোর পরও কি ম্যাচটা বাঁচাতে পারবে বাংলাদেশ? কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ম্যাচের যে পরিস্থিতি এই টেস্টে বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে হারলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! কেন না উইকেট যতই ব্যাটিংবান্ধব হোক না কেন টেস্টে পঞ্চম দিনে ব্যাটিং করা কঠিন। একে তো মানসিক চাপ, তার ওপর ফিটনেস প্রসঙ্গ তো থাকছেই। তাছাড়া দলের সেরা তিন ব্যাটসম্যান গতকালই আউট হয়ে গেছেন। তবে এখনো সুযোগ আছে। কিন্তু যদি আজ বাড়তি টেনশন করতে গিয়ে হেরেই যায় বাংলাদেশ, তখন কী হবে?

তাহলে কেন টেস্ট এ ড্র-র কথা চিন্তা করে ‘ব্যাটিং উইকেট’ বানিয়ে রক্ষণাত্মক কৌশল গ্রহণ করল বিসিবি? টেস্ট ক্রিকেটে আমরা ১৮ বছর পার করেছি। আর কবে আমরা টেস্টে সাহসী হব! এক সাকিব নেই বলেই কি এমন উইকেট বানাতে হবে...!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৫১৩/১০ ও দ্বিতীয় ইনিংস ৮১/৩, ২৬.৫ ওভার (তামিম ৪১, ইমরুল ১৯, মমিনুল ১৮*)

শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস : ৭১৩/৯, ১৯৯.৩ ওভার (ধনঞ্জয় ১৭৩, কুশল ১৯৬, রোশন ১০৯। (মিরাজ ৩/১৭৪, তাইজুল ৪/২১৯)

সর্বশেষ খবর