বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আলোচনায় যখন আরামবাগ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আলোচনায় যখন আরামবাগ

ঘরোয়া ফুটবলে বড় কোনো সাফল্য নেই। তারপরও বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের নামটি আলাদাভাবে লেখা হয়ে থাকবে। কেননা মোহামেডান, আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা দেশের বাইরে ট্রফি জিতলেও এই কৃতিত্ব প্রথম আরামবাগেরই। ১৯৮১ সালে নেপালের জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট আলফা কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আরামবাগই। স্বাধীনতার পর এটিই ছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলে কোনো ক্লাবের প্রথম ট্রফি জয়।

প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ট্রফি জিতলেও ঘরোয়া ফুটবলে দলটির বড় কোনো সাফল্য নেই। ১৯৮০ সালে প্রথম বিভাগ লিগে অভিষেক হয় তাদের। কোনো সময়ে চ্যাম্পিয়ন ফাইট দিতে পারেনি। এমনকি রানার্সআপ বা তৃতীয় স্থানে থাকতে পারেনি। লিগে এমন চেহারা হলেও ফেডারেশন কাপে তিনবার ফাইনাল খেলার রেকর্ড রয়েছে তাদের। তবে প্রতিবারই শিরোপার বদলে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থেকেছে আরামবাগ। অবশ্য বাফুফে আয়োজিত ফুটবল টুর্নামেন্টে একবার চ্যাম্পিয়ন হয়। বলা হয় ঘরোয়া ফুটবলে আরামবাগের এটাই বড় প্রাপ্তি।

প্রথম প্রিমিয়ার বা পেশাদার লিগে সাফল্য না থাকলেও দেশের ফুটবলে আরামবাগ একটি জনপ্রিয় ক্লাবে পরিণত হয়েছে। এমন কোনো বড় দল নেই যে তাদের কাছে ধরাশায়ী হয়নি। ১৯৮২ সালে আবাহনীর সঙ্গে ড্র করে আলোচনায় উঠে আসে ক্লাবটি। ১৯৮৫ সালে ঘরোয়া আসরে রীতিমতো চমক সৃষ্টি করে আরামবাগ। সেবার লিগের প্রথম পর্বের লড়াইয়ে মোহামেডানের কাছে হেরে যায়। সুপার লিগে যেন সুপার ম্যাজিক প্রদর্শন করে। ম্যাচের প্রথমার্ধে মোহামেডান এগিয়ে থাকায় দর্শকরা ধরেই নিয়েছিল আরামবাগ হেরেই মাঠ ছাড়বে।

দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টে যায় দৃশ্য। আরামবাগ যেন মোহামেডানকে পেয়ে বসে। রক্ষণভাগে মোহামেডানে তখন কায়সার হামিদ, রণজিতদের মতো তারকা ফুটবলার। সাদা-কালোদের ডিফেন্স লাইনকে তখন চীনের প্রাচীরের সঙ্গে তুলনা করা হতো। আরামবাগের আক্রমণে এই রক্ষণভাগ পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। ২-১ গোলে হেরে যায় ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান। সেই থেকে ফুটবলে জায়ান্ট কিলারের খেতাবটি পেয়ে যায় আরামবাগ।

৮৫’র সুপার লিগের সেই ম্যাচকে ঘিরে এখনো আলোচনা হয়। শিরোপার পথে এগিয়ে যেতে মোহামেডানের জয়টা জরুরি ছিল। মোহামেডান নাকি ম্যাচটি পাতানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। আরামবাগ রাজিও হয়ে যায়। তবে শর্ত জুড়ে দিয়েছিল দলের সব খেলোয়াড়কে ট্র্যাকস্যুট উপহার দিতে হবে। মোহামেডানের কর্মকর্তারা ম্যাচের আগের দিন আরামবাগের কোচ ওয়াজেদ গাজীকে ডেকে সব খেলোয়াড়দের টেইলার্সে মাপ দেওয়ার অনুরোধ করেন। এখানে বেঁকে বসেন মোহামেডানের অধিনায়ক গোলরক্ষক মোহসিন। তিনি বলেন, অযথা কেন ট্র্যাকস্যুট দেব। মোহামেডান সহজভাবেই ম্যাচ জিতবে। ব্যস, ভেঙে যায় সমঝোতার সন্ধি। তবে এই ধরনের ঘটনার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন দুই দলের কর্মকর্তারা।

৮৫ সালে মোহামেডানকে হারানো নয়, পরবর্তীতে বড় বড় দলের কত বার ঘুম হারাম করেছে আরামবাগ তার হিসেব মেলানো মুশকিল। আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে আরামবাগের নাম। পেশাদার লিগে নিচের দিকে থাকলেও স্বাধীনতা কাপে চমক সৃষ্টি করেছে দলটি। গোল পার্থক্যে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে টুর্নামেন্টে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আরামবাগ। বিদেশি ফুটবলার ছাড়া এই টুর্নামেন্ট মোটেই জৌলুস ছড়াতে পারেনি। ব্যতিক্রম আরামবাগই। কোয়ার্টার ফাইনালে লিগ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে। এরচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড থাকলেও কোনো দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এই প্রথম আবাহনী এমনভাবে লজ্জায় পড়লো।

সেমিফাইনালে আবার লিগ রানার্সআপ শেখ জামালকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে। এটাও একটা রেকর্ড বলা যায়। চ্যাম্পিয়ন রানার্সআপকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে এর আগে কোনো দল ফাইনালে উঠেনি। যাক এমন দুরন্ত পারফরম্যান্সের পরও শিরোপা জিততে পারবে কি আরামবাগ। ফাইনালে প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম আবাহনী।

তিন বার ফেডারেশন কাপে ফাইনালে উঠে তীরে এসে তরী ডুবিয়েছে আরামবাগ। এবার কি করবে? মোহামেডান, আবাহনী, বিজেএমসি, ব্রাদার্স, মুক্তিযোদ্ধা, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল অসংখ্য ট্রফি জিতেছে। চট্টগ্রাম আবাহনী এমনকি ফরাশগঞ্জও একবার স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আরামবাগ এবার পারবে কি ঘরোয়া ফুটবলে চ্যাম্পিয়নের খাতায় নাম লেখাতে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর