শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

এখনো স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

মেজবাহ-উল-হক

এখনো স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

আউট হয়ে সাজ ঘরে ফিরছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। হতাশাগ্রস্ত টাইগার অধিনায়কের মুখচ্ছবিই ছিল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি —রোহেত রাজীব

শ্রীলঙ্কার লিড ৩১২ রানের। এখনো তাদের হাতে আছে দুই উইকেট। ম্যাচ এখন লঙ্কানদের হাতের মুঠোয়। কেননা টেস্টে তিন শতাধিক রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করে জিতেছিল টাইগাররা। সেটা ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট জর্জেসে। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে একবার। সেটা  আবার ২০১৪ সালে। এই মিরপুরেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিতেছিল ৩ উইকেটে। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোয় ১৯১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৪ উইকেট জিতেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিরপুরের এই উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে তিন শতাধিক রান তাড়া করে জেতা আর লাইফ জ্যাকেট না পরে সমুদ্রে সাঁতার দেওয়া একই কথা! তারপরও আশাবাদী টাইগাররা।

টেস্ট ক্রিকেট বলেই এখনো আশা ছাড়ছে না বাংলাদেশ। টেস্টে কখন, কীভাবে খেলার গতি পাল্টে যায় বলা কঠিন। মেহেদী হাসান মিরাজের দাবি, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস আছে। সবাই খুব আত্মবিশ্বাসী!  মুমিনুল ভাই, তামিম ভাই, মুশফিক ভাইসহ যারা আছে, সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস আছে।’

গতকাল প্রথম ইনিংসে মাত্র ১১০ রানেই গুঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। মাত্র ৩ রানে শেষ ৫ উইকেটের পতন ঘটে। তবে শেষ পর্যন্ত একাই লড়াই করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। খেলেছেন অপরাজিত ৩৮ রানের ইনিংস। সঙ্গীর অভাবে আটকে যেতে হয় তাকে। ঘরের মাঠে কেন বাংলাদেশ এভাবে ভেঙে পড়ল? মিরাজের ভাষ্য, ‘প্রথম ইনিংসে এমনটা হতেই পারে। এটা আসলে দুর্ঘটনা বলব।’

তবে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে দাপট দেখিয়েছেন বোলাররা। ২০০ রানেই লঙ্কানদের ৮ উইকেট তুলে নিয়েছেন তারা। দারুণ বোলিং করেছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। ৩৫ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। দুই উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। কালকের দিনে ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও সফল ছিলেন মিরাজ। ১৪ ওভারে ৩ মেডেনে মাত্র ২৯ রানে নিয়েছেন দুই উইকেট।

এখন বাংলাদেশের লক্ষ্য একটাই— সকালের সেশনে দ্রুত শ্রীলঙ্কার দুই উইকেট নিয়ে ধৈর্য ধরে ব্যাট করা। মিরাজের বিশ্বাস, এখান থেকেও ম্যাচ জেতা সম্ভব। প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং নিয়ে তিনি আর ভাবতে চান না। মিরাজ বলেন, ‘ক্রিকেট খেলায় সবকিছুই সম্ভব হতে পারে। জিরো রানেও আউট হতে পারে। অনেক সময় এক দুই রানেও আউট হওয়ার চান্স থাকে। প্রথম ইনিংসে হতেই পারে এমনটা। প্রথম ইনিংসের ভুল থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। দ্বিতীয় ইনিংসটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা মাত্র ১১০ রানে অলআউট হয়েছি। ওরা যত রান টার্গেট দেবে ওটা আমরা করতে পারলে ম্যাচটা জিততে পারব। প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা আমরা ভুলে যেতে চাই। এখন আমাদের লক্ষ্য ওরা যত রান টার্গেট দেবে সেটা টপকানো।’

শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে শততম টেস্টে লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচ থেকেই অনুপ্রেরণা পাচ্ছে টাইগাররা। মিরাজ বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে আমরা একটা টেস্ট জিতেছিলাম। আমার কাছে মনে হয় শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২০০ রান চেজ করে জিততে পারলে আমার মনে হয় নিজেদের মাটিতে আমরা ৩০০ প্লাস রান করে জিততে পারব। এটাই আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে। অবশ্যই আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড় যারা আছেন, তারা ভালো খেলবেন, দায়িত্ব নেবেন। তারা ভালো খেললে টিমটা রেজাল্ট করবে।’

টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা কঠিন কাজ। তবে মিরপুরের উইকেট এখনো ব্যাটিংয়ের জন্য অনুপযোগী হয়ে যায়নি বলে মনে করেন মিরাজ। তবে যথেষ্ট টার্ন আছে। মাঝে আন-ইভেন বাউন্সও হয়। এমন উইকেটে ভালো করার টোটকা জানা আছে মিরাজের, ‘নরমাল উইকেটের চেয়ে এই উইকেটে ফোকাস বেশি দিয়ে খেলতে হয়। এই উইকেটে মনোযোগ একটু এদিক-সেদিক হলে বাঁচার কোনো চান্স থাকে না। কিন্তু নরমাল উইকেটে অনেক সময় ভুল করেও বেঁচে যাওয়া যায়। আমাদের ব্যাটসম্যানরা পূর্ণ মনোযোগ ধরে রেখে খেলতে পারলে ভালো কিছু আশা করা সম্ভব।’

সর্বশেষ খবর