রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বাধীনতা কাপ আরামবাগের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

স্বাধীনতা কাপ আরামবাগের

এবার আর তীরে তরী ডুবেনি আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের। স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে প্রথমবার ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতে নিল ফুটবলে জায়ান্ট কিলারখ্যাত দলটি। গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২-০ গোলে পরাজিত করে আরামবাগ। ঘরোয়া ফুটবলে বড় কোনো টুর্নামেন্টে এটিই তাদের প্রথম শিরোপা। এর আগে ফেডারেশন কাপে ১৯৯৭, ২০০১ ও ২০১৬ সালে ফাইনালে উঠলেও রানার্সআপের ট্রফি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এবার আর তীরে এসে তরী ডোবায়নি মতিঝিল পাড়ার পরিচিত দলটি। ঘরোয়া ফুটবলে নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খাতায় নাম তুললো আরামবাগ। প্রথমার্ধে ২০ মিনিটে আরিফ ও ৪৫ মিনিটে রকি দলের পক্ষে মূল্যবান দুইটি গোল করেন। ১৯৮১ সালে কাঠমান্ডুতে নেপালের জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট আনফা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় আরামবাগ। বিদেশের মাটিতে এটিই ছিল বাংলাদেশের কোনো ক্লাবের প্রথম শিরোপা জয়। ঘরোয়া আসরে একবার ফুটসালে চ্যাম্পিয়ন হয়। তবে বাফুফে আয়োজিত বড় কোনো টুর্নামেন্টে আরামবাগ এতদিন ছিল শিরোপাহীন। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেল স্বাধীনতা কাপ জিতে।

চলতি মৌসুমে আরামবাগে ছিল না কোনো পরিচিত ফুটবলার। অচেনা তরুণদের নিয়ে মাঠে নামে। প্রশিক্ষকের দায়িত্বে অবশ্য অভিজ্ঞ মারুফুল হককেই দেখা গেছে। এমন দল নিয়ে আর কত দূর যাওয়া যায়। রেলিগেশনে যায়নি সেটাই ভাগ্য। স্বাধীনতা কাপে ডি গ্রুপে আরামবাগের আবার প্রতিপক্ষ ছিল বিগ বাজেটের দুই শক্তিশালী দল চট্টগ্রাম আবাহনী ও সাইফ স্পোর্টিং। স্বাভাবিকভাবে অনেকের ধারণা ছিল গ্রুপপর্ব খেলেই বিদায় নেবেন মারুফের শিষ্যরা। গ্রুপে তিন দলই কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি। তবে গোল পার্থক্যে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ আটে জায়গা করে নেয় আরামবাগ। শেষ আটে উঠলেও প্রতিপক্ষ দলটা ছিল লিগ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী। ট্রাবেল জয়ের জন্য মরিয়া আবাহনী। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন আরামবাগের বিদায়টা সময়ের ব্যাপার। না, সব ধারণা ভুল প্রমাণ করে কোয়ার্টার ফাইনালে যেন ম্যাজিক প্রদর্শন করল আরামবাগ। চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে ছেলে খেলায় মেতে উঠল তারুণ্য ভরপুর আরামবাগ। ৩-০ গোলে জয়। যা আরামবাগও ভাবেনি। এরচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড রয়েছে ঢাকা আবাহনীর। কিন্তু কোনো দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এই প্রথম নাকানি চোবানি খেল তারা। সত্যি বলতে কি এমন জয়ের পরই হিসেবের মধ্যে চলে আসে আরামবাগ। সেমিফাইনালে যোগ্যতার প্রমাণ দেখিয়ে রানার্সআপ শেখ জামালকে হারিয়ে ফাইনালে। স্বাধীনতা কাপে একে একে সব বড় দলই বিদায় নিয়েছে। শুধু টিকে ছিল টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও লিগে তৃতীয় হওয়া চট্টগ্রাম আবাহনী। সত্যি কথা বলতে কি এবার বন্দর নগরীর দলটির যেন দুর্ভাগ্য পেয়ে বসে। মৌসুমের প্রথম ট্রফি ফেডারেশন কাপে ফাইনালে উঠেও ঢাকা আবাহনীর কাছে হেরে রানার্সআপ হয়। পেশাদার লিগে শুরু থেকে শীর্ষে ছিল তারা। এক সময় মনে হচ্ছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর শিরোপা জেতাটা সময় ব্যাপার। সেই দলই কিনা শেষ পাঁচ ম্যাচে হোঁচট খেয়ে চ্যাম্পিয়নের বদলে হলো তৃতীয়। সব যখন হারিয়েছে তখন চেয়েছিল স্বাধীনতা কাপের দিকে। হলো না তাদের ট্রফি জিতে মৌসুম শেষ করা। ফাইনালে বড় একটা ধাক্কা খেল। কাগজে কলমে শক্তিশালী দল হলেও চট্টগ্রাম আবাহনী সেই রূপ প্রদর্শন করতে পারেনি। আরামবাগই বরং শুরু থেকে ম্যাচটা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তরুণদের গতিময় খেলার সামনে বিগ বাজেটের দলটিকে বড্ড অসহায়ই মনে হচ্ছিল। বিদেশি ফুটবলার ছাড়া ছোট-বড় দলের পার্থক্য নেই তা বুঝিয়ে দিল আরামবাগ বড় দলের ঘুম হারাম করে। তাদের প্রতিবেশী ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলেও আরামবাগে যেন ঈদ উৎসব। কোয়ার্টার ফাইনালে লিগ চ্যাম্পিয়ন, সেমিতে রানার্সআপ ও ফাইনালে তৃতীয় স্থানে থাকা সেরা তিন দলের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়েই ঘরোয়া ফুটবলে নতুন চ্যাম্পিয়ন হলো আরামবাগ। অন্য ম্যাচে গ্যালারি ফাঁকা থাকলেও কাল ছিল অন্যরূপ। হাতে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে শিরোপা উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল আরামবাগের সমর্থকরা। বিজয়ের নিশানা উড়িয়ে স্টেডিয়াম ছেড়েছে তারা। যে খেলা খেলেছে তাতে ব্যবধান আরও বড়ও হতে পারত। এই শিরোপায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন কোচ মারুফ। ম্যাচ শেষে ক্লাব সভাপতি মোমিনুল হক সাঈদ এতটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন যে কেঁদেও ফেলেন। তিনি বলেন, এমন একটা শিরোপার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।

সর্বশেষ খবর