বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে ক্রিকেট লিগের উন্মাদনা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

হারিয়ে যাচ্ছে ক্রিকেট লিগের উন্মাদনা

ফুটবলে না হয় জাতীয় দলের করুণ দশার জন্য ঘরোয়া আসরে গ্যালারি থাকছে ফাঁকা। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচও এখন দর্শক হাতে গোনা যায়। কথা হচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেটে দর্শক নেই কেন? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের মান ছিল হতাশাজনক। আইসিসি ট্রফিতে যখন রকিবুল, লিপুরা দাঁড়াতে পারতেন না। তখনতো ঘরোয়া ক্রিকেটে উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঘরোয়া আসরে দেশের সবচেয়ে মর্যাদাকর লড়াই ঢাকা প্রথম বিভাগ বা পরবর্তীতে প্রিমিয়ার লিগে বড় বড় ম্যাচে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দর্শক যেন উপচে পড়তো। আবাহনী, ধানমন্ডি বা পল্লবী মাঠেও হাজার হাজার দর্শকের দেখা মিলতো। এখনতো ক্রিকেটে স্বর্ণ যুগেও প্রিমিয়ার লিগে বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটারদের দেখা মিলে না। অথচ ৮০ বা ৯০ দশকে ওয়াসিম আকরাম, রানাতুঙ্গা, জয়সুরিয়া, ফেয়ার ব্রাদার, স্যালেসবুরী, সামারা সাকারা, রমণলাম্বা, প্রবীণ আমরে চেতন চৌহানদের মতো ক্রিকেটার খেলে গেছেন। দামাল-সামার ক্রিকেটে অজয় জাদেজাও খেলেছেন। ফেয়ার ব্রাদার অবাক হয়ে বলেছিলেন বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেটে এত দর্শক ভাবাই যায় না।

আবাহনীতে ওয়াসিম আকরাম, মোহামেডানে রানাতুঙ্গা ও জয়সুরিয়াদের খেলা দেখতে ভোর থেকেই দর্শকরা টিকিট কিনতে লাইনে দাঁড়াতো। ব্যর্থতা ছাড়া ক্রিকেট যখন কিছুই দিতে পারত না তখনই ছিল ঘরোয়া আসরে রমরমা অবস্থা। এক সময় ক্রিকেটে কি দুর্দশাই না গেছে। বাংলাদেশের আগে বিশ্বকাপ খেলেছে কেনিয়া, নেদারল্যান্ডস এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতও। ১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফিতে ব্যর্থ হওয়ার পর এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলেন ক্রিকেট কিছুই দিতে পারছে না। এর পেছনে সরকার আর অর্থ খরচ করবে কিনা তা ভাববার সময় এসেছে। এমন সংকটাপন্ন অবস্থায়ও প্রিমিয়ার লিগে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে।

১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে অভিষেকের পর বাংলাদেশের ক্রিকেট একটা অবস্থানে চলে গেছে। ওয়ানডেতে এমন শক্তিশালী দল নেই যে বাংলাদেশের কাছে হারেনি। এশিয়া কাপ দুইবার রানার্সআপও হয়েছে। ২০০০ সালে টেস্টে অভিষেক হওয়ার পর পাঁচ বছরের মধ্যেই সিরিজ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। শুধু জিম্বাবুয়ে নয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতেছে। অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকেও হারিয়েছে। টি-২০তেও জ্বলে উঠছে। ক্রিকেটের নৈপুণ্য বাংলাদেশ এখন গোটা বিশ্বে পরিচিত। সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মুস্তাফিজরা এখন বিশ্ব পরিচিত ক্রিকেটার। মাঝে মধ্যে হোঁচট খেলেও বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ অন্যতম শক্তিশালী দল। এনিয়ে সংশয় ওঠার প্রশ্নই ওঠে না। জাতীয় দলের ব্যর্থতায় ফুটবলে দর্শকের দেখা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ক্রিকেটে জাতীয় দলের সাফল্যের পরও প্রিমিয়ার ক্রিকেটে একি হাল?

ক্রিকেটপাগল বাংলাদেশ। অথচ অনেকেই হয়তো জানেন না এখন প্রিমিয়ার লিগ চলছে। জানবেই বা কিভাবে। ঢাকার লিগ ঢাকাতেই দেখা নেই। বিকেএসপি ফতুল্লা স্টেডিয়াম ভেন্যু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। বগুড়াতেও লিগ হয়েছিল। ঢাকার লিগ ঢাকাতে নেই বলেই আসর ম্লান হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে বিসিবির ভাষ্য হচ্ছে কিভাবে ঢাকাতে খেলা হবে? মিরপুর স্টেডিয়ামতো আন্তর্জাতিক শিডিউলে ব্যস্ত থাকে। তাতে কি আগে যদি আবাহনী, ধানমন্ডি ক্লাব বা পল্লবী মাঠে খেলা হতে পারত এখন সমস্যা কোথায়? বাংলাদেশের ক্রিকেটে যাদের শিকড় বলা হয় তাদের সৃষ্টিতো ঢাকা লিগ থেকেই।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিসিবির অবশ্যই নজর থাকবে। এতে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগকে তাই বলে গুরুত্ব দেওয়া হবে না তা কি মানা যায়। বিসিবির এক কর্মকর্তায় বলেছেন এত কিছু দেখার সময় কোথায়। একটা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারাইতো লিগ দেখছে। না, এটা নামেমাত্র কমিটি। সবার চোখ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দিকে। কারণ এর সঙ্গে জড়িত আছে বিশেষ এক স্বার্থ। যেখানে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।

লিগ ছাড়া আগে ঘরোয়া আসরে ছিল টুর্নামেন্টের ছড়াছড়ি। বিষয়টি হয়তো বিসিবি এখন উপলব্ধি করছে না। প্রিমিয়ার বা ঢাকা লিগ যে ক্রিকেটের বড় ওষুধ তা একদিন টের পাবেই। তখন আফসোস ছাড়া কিছুই করা থাকবে না।

সর্বশেষ খবর