শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশ্বকাপের ফেবারিট

রাশিয়াতেই ব্রাজিলের হেক্সা?

রাশেদুর রহমান

রাশিয়াতেই ব্রাজিলের হেক্সা?

ব্রাজিলের ‘পঞ্চ রত্ন’ এখনো পুরনো ফুটবল রসিকদের রোমাঞ্চিত করে। তাদের স্মৃতির শহরে আজও বাস করে ৬০/৭০ দশকের ব্রাজিল দল। পেলে-ভাভা-গ্যারিঞ্চা-জাগালো-ডিডিরা নামলে মন্ত্রমুগ্ধের মতো মাঠে তাকিয়ে থাকতো শত্রু-বন্ধু সবাই। সেই ব্রাজিলকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন রোনাল্ডো-রোনালদিনহো-রোমারিওরা। ব্রাজিল দলে যুগে যুগে তারকার কোনো কমতি ছিল না। পেলেদের পর ফুটবলের উঠুনে হলুদ জার্সিদের আধিপত্য ধরে রেখেছিলেন ‘সাদা পেলে’ খ্যাত জিকো আর ফ্যালকাওরা। সক্রেটিসরা বিশ্বকাপ উপহার দিতে না পারলেও ব্রাজিলের শৈল্পিক ফুটবলটা ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু রোনাল্ডো-রোনালদিনহোদের বিদায়ে যে শূন্যতা এসেছিল, তা আর পূরণ হয়নি। ‘জোগো বোনিতো’র সেই উদ্দাম ছন্দ আর দেখা যায় না ব্রাজিলের ফুটবলে। ভক্তরা পাগলের মতো আর অপেক্ষায় থাকে না, কবে হবে ব্রাজিলের ম্যাচ!

গত বিশ্বকাপে নিজেদের মাটিতে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলের পরাজয় ছিল ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের সমাধির উপর লেখা এপিটাফ। তারপর ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে রেকর্ডটাও দেখতে হলো ব্রাজিলকে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সর্বনিম্ন ২২ নম্বরে নেমে গিয়েছিল পেলেদের উত্তরসূরিরা। কিন্তু সবকিছু বদলে যেতে থাকে ২০১৬ সাল থেকে। দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন অভিজ্ঞ কোচ টিটে। জুভেন্টাস, করিন্থিয়ানস, অ্যাটলেটিকো মিনেইরো, গ্রেমিও এবং ইন্টারন্যাশনালের মতো ক্লাবে কোচ হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন টিটে। তার শান্ত প্রকৃতির স্বভাবই প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। লড়াইয়ের নিখুঁত পরিকল্পনা করতে টিটের জুড়ি মেলা ভার। ২০১৬ সালের জুনে ব্রাজিল দলের দায়িত্ব নেন তিনি। এরপর থেকে ১৭টি ম্যাচ খেলেছেন নেইমাররা। এর মধ্যে ব্রাজিল হেরেছে মাত্র একটা (আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ গোলে)। ড্র করেছে তিনটি (কলম্বিয়া, ১-১; বলিভিয়া, ০-০; ইংল্যান্ড, ০-০)। বাকি ১৩টিতেই দারুণ জয় পেয়েছে। ১৭ ম্যাচে টিটের দল গোল করেছেন ৩৮টি। বিপরীতে গোল হজম করেছে মাত্র ৫টি। ব্রাজিলের এই দারুণ রেকর্ডটা ঈর্ষণীয়, সন্দেহ নেই। গত দেড় বছরে টিটে কেবল দলটাকে জয়ের ধারাতেই রাখেননি, ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষেও তুলেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সেরা দলটা বাছাই করে নিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে অন্তত এক ডজন তরুণ ফুটবলারকে জাতীয় দলের জার্সি উপহার দিয়েছেন। তরুণ আর অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে একটা সেরা দল গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করে এনেছেন টিটে। বিশ্বকাপের আগে স্বাগতিক রাশিয়া ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। সেখানেই হবে টিটের দলের আসল পরীক্ষা। ব্রাজিল দলের প্রাণ ভোমরা বেশ কয়েক বছর ধরেই নেইমার। কিন্তু তিনি একাই নন, পিএসজি তারকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একদল ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার। ফরাসি ক্লাব পিএসজিতেই আছে চারজন ব্রাজিলীয়। নেইমার, দানি আলভেস, থিয়াগো সিলভা ও মারকুইনহস। ডিফেন্স লাইনে থাকা মার্সেলো খেলছেন রিয়াল মাদ্রিদে। মিডফিল্ডে আছেন পলিনহো, কটিনহো, কাসেমিরো, উইলিয়ান, ফার্নান্দিনহোরা। আর ফরোয়ার্ড লাইনে নেইমারের সঙ্গে যোগ হয়েছেন ডগলাস কস্তা, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, রবার্তো ফিরমিনোরা। এই দলের বেশিরভাগই হচ্ছে তরুণ। দানি আলভেস আর থিয়াগো সিলভার মতো ত্রিশোর্ধ্ব ফুটবলার কমই আছে। টিটের এই তরুণ দলটা নতুন কোনো ইতিহাস লিখলে অবাক হওয়ার থাকবে না। রাশিয়া বিশ্বকাপে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলই এক নম্বর ফেবারিট। তাই ষষ্ঠবার ল্যাতিন ভাষায় যাকে হেক্সা বলা হয়। সেই হেক্সা শিরোপা জিততে পারে রাশিয়াতে। ব্রাজিল প্রথমবার বিশ্বকাপ জয় করে ১৯৫৮ সালে সুইডেনকে হারিয়ে। ১৯৬২ সালে ফাইনালে তারা হারায় চেকোস্লোভাকিয়াকে। ১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে ব্রাজিল ইতালিকে হারিয়ে। এরপর দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৪ সালে ইতালি ও ২০০২ সালে জার্মানিকে হারিয়ে আরও দুইবার বিশ্বকাপ জয় করে ব্রাজিল। রাশিয়াতেই হতে পারে ব্রাজিলের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়!

১৯৫০ সালে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ব্রাজিল। তবে শিরোপার বদলে রানার্স হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ২০১৪ সালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ফুটবল বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল ১৯৫০ সালে না পারলেও এবার ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিতে স্বপ্ন পূরণ করবে পেলের দেশ। শিরোপা নয়, ব্রাজিল ফাইনালে উঠতে পারেনি। সেমিফাইনালে জার্মানি তাদেরকে নিয়ে যেন ছেলে খেলা খেলেছিল। সেই ম্যাচে ইনজুরির কারণে খেলতে পারেনি নেইমার। যা এখনও তাকে আফসোসে পুড়ায়। নেইমার বলেছিলেন, ‘আমি জানি এ ব্যর্থতায় দেশবাসী কতটা হতাশ আমিও কেঁদেছি। কিন্তু কি করব ইনজুরি থাকলে খেলতে তো আর পারি না। যদি ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলতে পারি তা হলে জানপ্রাণ দিয়ে লড়বো দেশকে শিরোপা উপহার দিতে’। নেইমার এখন বিশ্ব ফুটবলে অন্যতম সেরা তারকা। ইউরোপিয়ন লিগে তার দাপট তুঙ্গে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। নেইমার যদি সত্যিকারে নেইমার রূপে খেলতে পারেন তা হলে ব্রাজিলের পক্ষে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জেতা কঠিন কিছু হবে না। ব্রাজিলবাসী চেয়ে থাকবে নেইমারের দিকে। যতই দিন যাচ্ছে বিশ্বকাপের সময় এগুচ্ছে। কাঁপছে ব্রাজিল। কেননা এ ফুটবলের মাধ্যমে ব্রাজিল দুনিয়া জুড়ে পরিচিত লাভ করেছে। এখন শুধু অপেক্ষা রাশিয়া বিশ্বকাপে কার হতে ট্রফি উঠবে।

সর্বশেষ খবর