শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডট বলের ফাঁদে টাইগাররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ডট বলের ফাঁদে টাইগাররা

১২০ বলের মধ্যে ৫৫টিই ডট! অর্থাৎ ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ৫৫ বলে কোনো রানই করতে পারেননি। বাকি ৬৫ বলে তারা করেছেন ১৩৯ রান। এই ৫৫ বলের মধ্যে ৪০ বলে সিঙ্গেল করে রান নিতে পারলেও তো স্কোর লাইনটা শেষ অবধি ১৭৯ রান হয়ে যেত! এই ডট বলের ফাঁদে আটকা পড়েই নিদাহাস ট্রফির প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশ।

টি-২০ ক্রিকেটে অলআউট হওয়াটা যেমন দোষের, তার চেয়েও বড় দোষ বোধহয় ২০ ওভারের ম্যাচে ৯.১ ওভার ডট দেওয়া! টি-২০ ফরম্যাটটাই এমন যে, প্রতি বলেই রান নেওয়ার প্রবণতা থাকতে হবে। অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে হবে। তার মানে এই নয় যে, প্রতি বলেই ছক্কা বা চার হাঁকাতে হবে। বাউন্ডারি না হলে অন্তত সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। টি-২০এর সেরা দলগুলো সে কাজটাই করে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেমন যেন এই ফরম্যাটের সঙ্গে এখনো নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছেন না। তাই একের পর এক ডট বল দিয়ে যান!

ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ম্যাচটির পোস্টমর্টেম করলে দেখা যায়, যেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা প্রথমে ব্যাট করে ৫৫টি ডট বল দিয়েছেন সেখানে পরে ব্যাট করেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ডট দিয়েছেন মাত্র ৩৪টি। টি-২০-তে ১৪০ রানের টার্গেট আহামরি কিছু নয়। তাই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা খেলেছেন অনেক রিল্যাক্স মুডেই। সেক্ষেত্রে তাদের তো আরও বেশি ডট দেওয়ার কথা! কিন্তু ভারতীয়রা সে পথে হাঁটেননি। খুব একটা ডট বল দেননি। এখান থেকেই অনেক কিছু শিখতে পারেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে টাইগারদের শরীরী ভাষাতেও ‘উজ্জীবিত’ ভাবটা ছিল না! মনে হচ্ছিল, তারা ম্যাচে আগেই হেরে বসে আছে। গত দুই-তিন বছরে টাইগারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এমন ছিল না!

ম্যাচে হার-জিত থাকবেই! তা ছাড়া টাইগারদের সময়টাও এখন ভালো যাচ্ছে না। তাই বলে এভাবে অসহায় আত্মসমর্থন কেন? প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতার পরই যেন ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। বোলাররা লড়াই করার মতো পুঁজি-ই পাননি। তারপরও চেষ্টা করেছেন মুস্তাফিজ-রুবেলরা। স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও দাপট দেখিয়েছেন। চার ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়েছেন তিনি। সে কারণেই হয়তো হারটা সম্মানজনক হয়েছে হয়তো (৬ উইকেটে হার)! আজ নিদাহাস ট্রফিতে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। প্রথম ম্যাচে যে দলটি ভারতকে উড়িয়ে দিয়েছে, যে দলটি সর্বশেষ সিরিজে ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে টি-২০-তে হোয়াইটওয়াশ করেছে, তাই আজ টাইগারদের জন্য অপেক্ষা করছে আরেকটি কঠিন পরীক্ষা!

নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল খেলতে হলে আজকের ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই। লঙ্কানদের আটকে দিতে হলে প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে ব্যাটসম্যানদের। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে দারুণ শুরু করেও অধিকাংশ ব্যাটসম্যান উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। তবে আজকের ম্যাচে ভালো ফল পেতে হলে আগের ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নচেৎ ফলের পরিবর্তন হবে না।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ইনজুরি। কেননা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার একাই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট। তাই সাকিবের অনুপস্থিতি দলকে ভীষণ ভোগাচ্ছে। তবে এটাও তো ঠিক, নির্দিষ্ট কোনো ক্রিকেটারের ওপর ভরসা করে তো আর দল চলে না। তাই টিমের অন্য ক্রিকেটারদের দায়িত্ব নিতে হবে।

বাংলাদেশ দলে প্রতিভার অভাব নেই। ওপেনিং তামিম-সৌম্য দুজনেই অসাধারণ। তিনে লিটন দাস। চার ও পাঁচে মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। ছয়ে পিঞ্চ হিটার সাব্বির রহমান। বড় স্কোর গড়ার জন্য এই ছয় ব্যাটসম্যানই যথেষ্ট। কেবল মনে রাখতে হবে, আর যেন ডট বল বেশি না হয়!

বাংলাদেশ দলের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া। হয়তো একটি জয়ই সবকিছু বদলে যেতে পারে। পুরনো ছন্দে ফিরে যেতে পারে বাংলাদেশ। আজ লঙ্কানদের বিরুদ্ধে সেই জয়ের তীব্র বাসনা নিয়েই মাঠে নামছে টাইগাররা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর